
আজ পৃথিবীর অন্যতম বড় ইফতার অনুষ্ঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে বসে এই ক্যাম্পে ইফতার আয়োজন হচ্ছে। আর সেই ইফতারের থাকবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্তরবর্তী সরকার প্রধান ইউনুস। প্রথমবারে মতো কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এখানে। বলা যায় পৃথিবীর অন্যতম বড় ইফতার এশিয়ার বৃহৎ আশ্রয় শিবির হিসেবে খ্যাত উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসছে। আর এর মাধ্যমে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন রোহিঙ্গারা।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিবের একসঙ্গে ক্যাম্পে আসার খবরে রোহিঙ্গাদের মাঝে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। দুজনের প্রচেষ্টায় প্রত্যাবাসনের একটি গতি পাবেন বলে আশা করছেন রোহিঙ্গা নেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিব আগেও কয়েকবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের এটিই প্রথম।
জাতিসংঘের মহাসচিব সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে কক্সবাজারের পৌঁছেছেন। এরপর কক্সবাজার থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবকে নেওয়া হবে উখিয়ার ক্যাম্পে। হেলিকপ্টারযোগে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখছেন তিনি। তাদের লাখ লাখ বাসিন্দাদের সঙ্গে একসাথে ইফতারে বসছেন।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয় শিবির কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক বাস করছেন। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো আরাকানে চলমান সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে ক্যাম্পে ঠাঁই নিয়েছেন আরও ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান ডা. জোবায়ের বলেন, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পাবার পর জাতিসংঘের মহাসচিব ক্যাম্পে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এখন এ মাসের ১৪ তারিখ আবার তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্প আসছেন শুনে ভালো লাগছে। মহাসচিব গুতেরেসকে একটা কথায় বলব, বাংলাদেশ আমাদের আশ্রয়দাতা।
ভিনদেশের এ ক্যাম্প জীবনে দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না। এসব ঝুপড়িতে ৮ বছর কাটছে। আমাদের দেশ আছে, রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব জাতিসংঘের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আরাকানে নিরাপদ জোন করে, আমরা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানাবো।
এর আগে ২০১৮ সালের ২ জুলাই নির্যাতিত উখিয়ার ক্যাম্পে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা দেখেন ও শোনেন।
এখন তিনি আবার যখন ক্যাম্পে আসছেন, তখন রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমানোর ঘোষণা চলছে। তাই টেকসই প্রত্যাবাসন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবির পাশাপাশি পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা নিশ্চিতের দাবি জানাবেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) ও সরকারি বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিবরণও তুলে ধরা হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার প্রভাব, তহবিল সংকটের কারণে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়া, স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত হওয়ার কথাও তুলে ধরা এবং ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাবেন রোহিঙ্গারা।
পাঠকের মতামত