হাবীবুল্লাহ সিরাজ
হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামের আগুনে বারবার বিষপানে আত্মহত্যা করতে থাকবে’ (বুখারি ও মুসলিম)।
‘তোমরা নিজেরা নিজেকে হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু। তার পরও যে আত্মহত্যা করল সে সীমা লঙ্ঘন ও জুলুম করল, অচিরেই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দেবো’ (সূরা নিসা : ৩০)।
বর্তমান সময়ে দিন দিন আত্মহত্যা বাড়ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রে প্রতিটি লোকালয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পত্রিকার পাতা উল্টালেই পাওয়া যায় আত্মহত্যার নতুন খবর। বিভিন্ন পদ্ধতিতে আত্মহত্যাকারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কেউ গলায় ফাঁস নিয়ে, কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে, কেউ বিষ পান করে, কেউ বা ছুরি ব্যবহার করে, কেউ আবার ট্রেন কিংবা বাসের নিচে পড়ে আত্মহত্যা করে। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আত্মহত্যার প্রবণতা শ্রীলঙ্কায় একটু বেশি। ২০১৫ সালে ৮০০ লোকের ওপর এক জরিপে দেখা গেছে, এদের মাঝে সব বয়সের লোক রয়েছে। তবে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা সর্বাধিক। জাতিসঙ্ঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বে আত্মহত্যাকারী ৮০ শতাংশের বেশি তরুণ-তরুণী। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা। এর কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রেমে ব্যর্থ, পরীক্ষায় লজ্জাকর ফলাফল, পিতামাতা বা বন্ধুবান্ধবের সাথে রাগারাগি। এভাবে বিশ্বে প্রতিদিন হাজারের ওপরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
বিশ্বের কোনো ধর্মে আত্মহত্যার কোনো বৈধতা নেই। কোনো সামাজিক ব্যবস্থায়ও আত্মহত্যার বৈধ বিধান নেই। নিজেই বিবেচ্য আত্মহত্যা কোনো বিধান বা সমাধান হতে পারে না। কোনো দার্শনিক এ ব্যাপারে বৈধতার কথা বলেননি, বরং অনুৎসাহিত করেছেন জোরালোভাবে। বলেছেন, আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বোকা ও স্থূল জ্ঞানের অধিকারীরা। আত্মহত্যার বিষয়ে ইসলামের স্পষ্ট ঘোষণাÑ ‘আত্মহত্যা হারাম’। এ বিষয়ে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্নভাবে নিষেধ করা হয়েছে। সাথে সাথে প্রবল নিন্দা জানানো হয়েছে। সূরা নিসার ২৯ ও ৩০ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সদা দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন ও জুলুমের পথ বেছে নিয়ে আত্মহত্যা করবে, (তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হলো) আমি অচিরেই তাকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দেবো। আর এটা আল্লাহর জন্য সহজ।’ আরো আছে, ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না’ (সূরা বাকারা : ১৯৫)। হাদিসে রয়েছে আত্মহত্যা সম্পর্কিত নানা হুঁশিয়ারি ও সতর্কতা। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁসি দিয়ে বা গলা টিপে আত্মহত্যা করল জাহান্নামে সে নিজেকে নিজে এরূপ করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে বর্শা বা এ রকম কিছু দ্বারা আত্মহত্যা করল সে জাহান্নামে নিজেকে বর্শা বা এ রকম কিছু দ্বারা আঘাত করতে থাকবে’ (বুখারি)। অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী এক ব্যক্তি আহত হলো, ব্যথার তীব্রতা সে সহ্য করতে না পেরে নিজেকে নিজের চাকু দ্বারা আঘাত করলে রক্তক্ষরণ হতে লাগল, এর ফলে মৃত্যুবরণ করল। আল্লাহ বলেন, বান্দা নিজের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে, আমিও তার ব্যাপারে তাড়াহুড়ার সিদ্ধান্ত জাহান্নাম করে নিয়েছি’ (বুখারি)।
উল্লিখিত কুরআন ও হাদিসের আলোচনা দ্বারা আত্মহত্যার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যায়। ইসলাম তাকে অনুৎসাহিত করার পাশাপাশি কঠিন শাস্তির কথাও ব্যাপক আকারে উল্লেখ করেছে। উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয়, আত্মহত্যাকারী সিঃসন্দেহে জাহান্নামি।
লেখক : প্রবন্ধকার