মিয়ানমার জানিয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে হওয়া আদমশুমারি অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ১৩ লাখ; এটি ১০ বছর আগের সংখ্যা থেকে কিছুটা কম।
এই আদমশুমারির ওপর ভিত্তি করে দেশটিজুড়ে চলা সংঘাত ও অস্থিরতার মধ্যেই সামরিক জান্তা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বুধবার জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম।
এর আগে ২০১৪ সালে মিয়ানমারে সর্বশেষ অদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন দেশটির জনসংখ্যা নির্ধারিত হয়েছিল পাঁচ কোটি ১৫ লাখ। এবারের শুমারিতে জনসংখ্যা দুই লাখ কমেছে বলে দেখা যাচ্ছে।
এই দুই আদমশুমারির কোনোটিতেই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
আদমশুমারির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার যে হিসাব পাওয়া গেছে তার মধ্যে তিন কোটি ২২ লাখ মানুষ আদমশুমারির গণনার মাধ্যমে নথিবদ্ধ হয়েছেন আর নিরাপত্তা ও পরিবহনজনিত সমস্যার কারণে অগম্য এলাকাগুলোর বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করে বাকি এক কোটি ৯১ লাখ মানুষের সংখ্যাটি হিসাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “(অগম্য এলাকার) জনসংখ্যা হিসাব করার জন্য রাশিয়া, চীন, ভারত ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো থেকে নেওয়া উচ্চ রেজোল্যুশনের ছবি (০.৩ মিটার থেকে ০.৮ মিটারের মধ্যে) ব্যবহার করা হয়েছে।”
রয়টার্স জানিয়েছে, জাতিসংঘের বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব ব্যাংক মিয়ানমারের জনসংখ্যা ২০২৪ সালে পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ হবে বলে হিসাব করেছিল। কিন্তু দেশটির আদমশুমারিতে পাওয়া সংখ্যা তার চেয়ে অনেকটা কম। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে ২০১৪ সালে দেশটির জনসংখ্যা পাঁচ কোটি সাত লাখ ছিল।
চলতি বছর দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে জান্তা সরকার। এ নির্বাচনের ভোটার তালিকা তৈরি করতে আদমশুমারির তথ্য ব্যবহার করা হবে। মিয়ানমারের সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনার নিন্দা করে একে ‘ভান’ বলে উল্লেখ করেছে।
নতুন বছর উপলক্ষ্যে জান্তা প্রধান মিন অঙ হ্লাইং জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন। রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ভাষণে হ্লাইং বলেন, “আমি সফলভাবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার চেষ্টা করছি। এটি রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিষদের চূড়ান্ত লক্ষ্য।”
গত মাসে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশগুলোকে ‘সামরিক জান্তা একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছে’ বলে এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিল।
কিন্তু এই নির্বাচনে বিরোধীদলগুলো অংশগ্রহণের সম্ভাবনা প্রায় না থাকায় অনেকেই এর সমালোচনা করেছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জান্তা সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী প্রতিবাদ সহিংসভাবে দমন করার পর দেশটিজুড়ে সশস্ত্র এক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছে।
পাঠকের মতামত