লাইফস্টাইল ডেস্ক::
বহুল প্রচলিত একটা কথা হচ্ছে- ‘সম্মান পেতে হতে আগে দিতে জানতে হয়’। আপনি আপনার চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে সম্মান আশা করেন। করতেই পারেন। কিন্তু যখন আশপাশের লোকেরা আপনাকে সম্মান করে না কিংবা করলেও মন থেকে করে না তখন আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আসলে সমস্যাটা কোথায়।
প্রথমত, আপনাকে খেয়াল করতে হবে আপনি অন্যকে সম্মান করেন কিনা। যদি না করেন তবে প্রত্যাশা কেন করেন? কিছু পেতে হলে কিছু তো দিতেই হয়। অতএব অপরকে আগে সম্মান করতে শিখুন।
আপনি হয়তো আপনার আশপাশের তুলনামূলক বয়সে ছোট কারও কাছ থেকে সম্মান, শ্রদ্ধা প্রত্যাশা করেন। কিন্তু বয়সে ছোট হলেও সেই লোকটি কিংবা ছেলেটি আপনাকে সম্মান করে না। কিন্তু কেন? জবাবটাও আপনাকেই খুঁজে নিতে হবে।
অনেক সময়ই আপনি ছোটদের দেখে হেলায় মাড়িয়ে যান। পাত্তাই দিতে চান না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না- ছোটরাও নিজেদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। ওরাও বুঝতে পারে- কোন লোকটি তাকে কতটুকু ভালোবাসে। আপন ভাবে।
আবার আপনি হয়তো সমাজের বিশেষ কেউ। কিন্তু রাস্তায় বেরুলে আপনাকে মানুষ পেছন থেকে ছি ছি করে। সেটার কারণও স্পষ্ট। নিশ্চয়ই আপনি এলাকার লোকদের সঙ্গে সৌহার্যপূর্ণ আচরণ করেন না। কিংবা আপনি নিজেকের অনেক বড় কিছু মনে করেন। অথবা, আপনি সুযোগ পেলেই দুর্বলের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন করেন।
অথবা আপনাকে কেউ যদি আদাব-সালাম-নমস্কার দিয়েও থাকে তখন মনে রাখবেন তারা আপনাকে মন থেকে সম্মান জানায়নি। কিছুটা ভয় কিংবা বাধ্য হয়ে তারা আপনাকে আদাব-সালামটুকু দিয়েছে। মানুষের মন জয় করার চেয়ে বড় কাজ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
একজন মানুষ কতটা ভালো কিংবা খারাপ সেটি তার ব্যবহারেই ফুটে ওঠে। সেজন্যই বলা হয়- ‘ব্যবহারেই বংশের পরিচয়’। যার ব্যবহার যত ভালো পৃথিবীতে তার প্রতি মানুষের হৃদয়ের টানও তত বেশি। মনে রাখতে হবে সব কিছু গায়ের জোরে, ক্ষমতা দেখিয়ে কিংবা অর্থের বিনিময়ে পাওয়া যায় না। সেজন্য আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়।
এ প্রসঙ্গে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত-এর ‘বড় কে?’ কবিচার পঙতিগুলো স্মরণযোগ্য-
“আপনাকে বড় বলে বড় সে নয়,
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।
বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার,
সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।
হিতাহিত না জানিয়া মরে অহংকারে,
নিজে বড় হতে চায় ছোট বলি তারে।
গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে,
বড় যদি হতে চাও ছোট হও তবে।”
সংস্কৃতে একটি কথা আছে- ‘আত্ম নং বিদ্ধি’। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘আগে নিজেকে জানো’। এজন্যই ‘বিদ্রোহী’ কবিতার এক অংশে কাজী নজরুলের কণ্ঠে শোনা যায়- ‘আজিকে আমি চিনেছি আমারে, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ’। মনে রাখতে হবে- আপনি যেটুকু পাওয়ার যোগ্য সেটুকুই আপনি পেয়েছেন। বাড়তি কিছু পেতে হলে বাড়তি কিছু আপনাকেও দিতে হবে।
নিজের দোষগুণ বিচারের ক্ষমতা অর্জন করা উত্তম মানুষের পক্ষে অনিবার্য। অতএব নিজের মনকে স্বচ্ছ, সুন্দর, অহিংস, কপটমুক্ত করুন। তখন চারপাশের পরিচিতজনেরাই আপনাকে ‘উত্তম মানুষ’ হিসেবে গন্য করবে। সম্মান, শ্রদ্ধা করবে। আপনার জ্ঞান আর সুচিন্তার কাছে সমর্পিত হবে। অধমের সম্বল তো শুধু ‘গলাফাটানো, বলপ্রয়োগ আর চাতুরি’।