বোন মিতুর জন্য প্রথমবারের মতো ঈদের শাড়ি কিনেছিলেন শায়লা। কিন্তু শাড়িটা আর দেওয়া হলো না। দুর্বৃত্তরা বাঁচতে দিল না মিতুকে। গত রবিবার সকালে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। সেই শাড়িটি জড়িয়ে ধরে বার বার চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন শায়লা।
সোমবার রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূইয়াপাড়ায় নং ২২০/এ বাসায় বসে শায়লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ”আমার তো ভাই নেই। কিন্তু ভাই ও বোনের অভাবটা কখনো বুঝতে দেননি মিতু আপু। এবারের ঈদে প্রথমবারের মতো উপহার হিসেবে আপুর জন্য শাড়ি ও দুই ভাগ্না-ভাগ্নির জন্য জামা কিনেছিলাম। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস; আমার এ বাসনা পূরণ হলো না। আপু তোর শাড়িটা দেওয়া হলো না।”
এ সময় বার বার চোখ মুছছিলেন শায়লা। জড়িয়ে আসছিল কণ্ঠ। শায়লা টঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস-এর চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী।
শায়লা বলেন, সবার প্রতি যত্নবান ছিলেন আপু। নিয়মিত পরিবারের সবার খোঁজ নিতেন। অনায়াসে যে কাউকে আপন করে নিতে পারতেন। আব্বু ছিলেন পুলিশের ওসি। একবার সরকারি কোয়ার্টারের বাসায় থাকতে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। বাসার ছাদের সিঁড়ি ছিল দুর্বল। আমি, আম্মু ও আপু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় সেটা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতেই আমি ও আম্মু দৌড় দেই। ফিরে তাকিয়ে দেখি আপু নিচে পড়ে গেছে।
আমরা হাসাহাসি করতে করতে আপুকে বললাম, তুমি আসলে না কেন? আপু বললো, ”আরে তোরা তো ছিলি। আমি ভাবলাম তোদের নিয়েই ফিরবো। তাই তোদের খুঁজছিলাম।”
অমন বিপদে কতজনই বা নিজের চেয়ে বেশি অন্যকে নিয়ে ভাবতে পারেন বলেন?
চোখ মুছতে মুছতে শায়লা বলেন, গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর আমার বিবাহ অনুষ্ঠানে আপু এসেছিলেন। কত আনন্দ করেছেন! আমরা জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছি। এরপর আর আমাদের সাক্ষাত হয়নি। আমার অনুরোধে রমজানের মাঝামাঝি আপুর আসার কথা ছিল। কিন্তু আগেই চলে আসলো। তবে নিথর দেহ। আপু আর কথা বলে না, হাসে না। আমাকে জড়িয়েও ধরে না।
শায়লা জানান, মিতু খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হলেও গাড়ি ব্যবহার করতেন না। স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া-আসা করতেন রিকশা কিংবা বাসে। নিজে কখনো আগ বাড়িয়ে মানুষকে বলতেন না তিনি পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী।
বিডি-প্রতিদিন
পাঠকের মতামত