আমদানীকৃত বোল্ডার লবণবাহী প্রথম জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। প্রথম দফায় আমদানীর অনুমতি দেয়া দেড়লাখ টন লবনের প্রথম চালানে ৪৭ হাজার টন লবন নিয়ে “এম ভি ফিলিপ প্রনিক্স” জাহাজ বন্দরেরত বহির্নোঙরে অবস্থান নিয়েছে। আরো ৬৮ হাজার টন লবন নিয়ে “এম ভি ডেফোডিলস পাইওনিয়র” নামক অপর জাহাজ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছুবে বলে জানা গেছে। এভাবে আগামী পহেলা অক্টোবরের মধ্যে দেড় লাখ টন লবণের পুরো চালানই দেশে পৌঁছবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও আরো একলাখ টন লবন আমদানীর অনুমতি দিয়ে গত রবিবার সার্কুলার জারী করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুমতি দেয়া একলাখ টনসহ মোট আড়াই লাখ টন লবণ আমদানী হলে কক্সবাজারের লবন শিল্পে বড় ধরনের দরপতনের আশংকা করছেন চাষীরা। গত মৌসুমে লবনের দাম সন্তোষজনক থাকায় লাভের মুখ দেখেছিলেন জেলার প্রান্তিক চাষীরা। এর ফলে আশান্বিত হয়ে আগামী মৌসূমের জন্য উচ্চমূল্যের লাগিয়তে লবন মাঠ ইজারা নিয়েছিলেন অনেকে। কুতুবদিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় একমাস পরে মাঠে নামবেন লবন চাষীরা। মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও সদর উপজেলায়ও এরপর মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু আমদানীজনিত দরপতনের আশংকায় এখন লবন চাষে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই। সদরের গোমাতলীর লবন চাষী ইউছুফ আলী বলেন, মাঠে মজুদ লবন দিয়ে আগামী মৌসুম পর্যন্ত চলত, কিন্তু ঢাকা-নারায়নগঞ্জকেন্দ্রীক আমদানীকারক সিন্ডিকেট প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও নানা কুটকৌশল অবলম্বন করে আমদানীর অনুমোদন নিয়েছে। গত এপ্রিলে জেলাব্যাপী পুরোদমে লবন উৎপাদন মৌসুম চললেও তখন থেকেই ভারত থেকে লবন আমদানীর তোড়জোড় শুরু করে নারায়নগঞ্জের আলোচিত পরিতোষ সাহার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। এদের তৎপরতার প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ট্যারিফ কমিশনের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার সফরে আসেন। জেলা প্রশাসকের সম্মেলনক্ষে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত সভায় উপস্হিত জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, লবন মিল মালিক-শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি ও লবন চাষীরা লবন অামদানীর তুমুল বিরোধিতা করেন। এরপর আরো একমাসে কক্সবাজার জেলায় বাম্পার লবন উৎপাদন হয়। কিন্ত এরপরেও উপর মহলে দেন-দরবার করে প্রথম দফায় দেড় লাখ টন লবন আমদানীর অনুমোদন নেয় চক্রটি। এ লবনের প্রথম চালানবাহী জাহাজ এখন বন্দরে পৌঁছেছে। এরপর কোরবানীর পশুর চামড়া সংরক্ষনের দোহাই দিয়ে আরো একলাখ টন লবন আমদানীর অনুমোদন নেয় উপরোক্ত আমদানীকারক সিন্ডিকেট। গত রবিবার এই একলাখ টন লবন আমদানীর অনুমতি দিয়ে সার্কুলার জারী করা হয়। এভাবে ক্রমাগত আমদানীর খবরে আসন্ন লবন মৌসুমে মাঠে নামতে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা। চাষীরা অভিযোগ করেন, কক্সবাজারের একশ্রেনীর সাইনবোর্ডসর্বস্ব লবন মিল মালিক পারমিট বিক্রি করার জন্য লবন আমদানী করার জন্য ইন্ধন দিচ্ছেন। সদরের ইসলামপুর, মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও চকরিয়ার অন্ততঃ ডজনখানেক টিন-বেড়াসর্বস্ব বন্ধ লবন মিলের মালিক এ পারমিটবাজীতে নেমেছেন। দেশব্যাপী সড়ক যোগযোগ নেটওয়ার্কের উন্নতি হওয়ায় বিগত দেড় দশক ধরে কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর শিল্প এলাকা থেকেই নিয়ন্ত্রন হচ্ছে পরিশোধিত, ভোজ্য ও শিল্প লবনের বাজার। এখানে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক লবন কারখানা। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার, দেশের শীর্ষস্হানীয় শিল্পগ্রুপ এসিআই লিঃ, মেঘনা গ্রুপ, মোল্লা গ্রুপ, হীরা গ্রুপ, ও ব্র্যাকসহ স্হানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে স্হাপিত এসব লবন কারখানা দেশীয় লবনের চাহিদা মেটাচ্ছে। বিভিন ব্যাংজের কক্সবাজারস্হ শাখা ব্যবস্হাপকগন জানান, ব্যাংকের দৈনন্দিন ট্রানজেকশনের বড় একটা অংশ আসে লবন থেকে। আমদানীর ফলে বাজার হারাবে কক্সবাজারের লবন শিল্প। জেলার ব্যাংকিংখাত ক্ষতিগ্রস্হ হবে এতে।
উল্লেখ্য, লবণের প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিসিক, মিল মালিক সমিতি, চাষি সমিতিসহ আরো বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে জাতীয় লবণ কমিটি গঠন করলেও দেশীয় লবন শিল্প ও প্রান্তিক চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় এদের ভূমিকা নেই বললেই চলে।
চোরাচালানের স্বর্ণ বহনের অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ জব্দ করেছেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত ...
পাঠকের মতামত