টলিউড নিয়ে বিস্ফোরক তিনি। আবার শরীর, মন, প্রেম, যৌনতা সব কিছু নিয়ে অকপট। তিনি শ্রীলেখা মিত্র। আজ সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব।
চল্লিশ বসন্ত পেরিয়ে এখনো শ্রীলেখা মিত্রকে নিয়ে একটা বয়সের পুরুষ ফ্যান্টাসাইজ করেন…
শ্রীলেখা: (প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে) একটা বয়েস? ভুল বলছেন। একটা বয়সের নয়। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ আমাকে ফ্যান্টাসাইজ করে। বেশ ভালই লাগে।
এনজয় করেন বিষয়টা?
শ্রীলেখা: অফকোর্স। যারা এখন ৩০-এর কোঠায় তেমন অনেকে বলেছেন, তাদের বেড়ে ওঠা, সেক্সুয়ালি নিজেকে জানা, তার মাধ্যম হলাম আমি। এটা আমার কাছে একটা বিরাট কমপ্লিমেন্ট।
এর রহস্যটা কী?
শ্রীলেখা: জানি না। কাউকে কাউকে হয়তো আমি ‘সেক্সাইট’ করি। অনেকে বলেছেন, আমরা রোগা মেয়েদের পছন্দ করি না। কিন্তু এটা নিয়ে আলাদা করে ভাবার সময় নেই। হয়তো আমার মধ্যে একটা কিছু আছে, যার জন্য আমার এত ফ্যান (হাসিতে রহস্য)। আর দর্শক যদি রাতে আমার স্বপ্ন না দেখেন, তাহলে তো অভিনেত্রী হিসেবে সেটা আমার ফেলিওর।
এতদিন একা রয়েছেন, কোনো বিশেষ বন্ধু হয়নি?
শ্রীলেখা: হয়েছে তো। তবে এই মুহূর্তে ভ্যাকেন্সি চলছে।
সেটা আবার হয় নাকি?
শ্রীলেখা: হুম। এটাই সত্যি। তবে হোয়াট্অ্যাপে আমি চুটিয়ে ফ্লার্ট করি। ফ্লার্ট করাটা তো হেলদি। জানেন, আমার এখন কিছু বাচ্চাকাচ্চা জুটেছে। আর একটা বয়সের পর বোধহয় বাচ্চা ছেলেদের ভাল লাগে। আর আমার বয়সী যারা তাদের প্রবলেমটা হল, তাদের একটা বউ আছে। সেই বউকে নিয়ে তারা বোর হয়ে যায়। ব্যাস এবার একটু ছুঁকছুঁকানি। হু হু শ্রীলেখা…হলে ভালই হত। আমি কেন সেটাতে হাওয়া দিতে যাব? ম্যারেড ম্যান নট ইন্টারেস্টেড।
এই ছুটকো সম্পর্কগুলো কি শরীরী পর্যায়ে যায়?
শ্রীলেখা: (ঠোঁট কামড়ে) এটা তো একেবারে ব্যক্তিগত প্রশ্ন। যেতেই পারে, আবার যেতেই হবে এমনটাও বলছি না। যতই হোক আমি তো এখনো সাধু হয়ে যাইনি।
আপনার কেমন পুরুষ পছন্দ?
শ্রীলেখা: আমার তো একসঙ্গে চার-পাঁচজন পুরুষ দরকার। যারা বিভিন্ন কাজ করে দেবে। একজন ফাইনান্স দেখবে। কোথায় কোথায় ইনভেস্ট করব সে সব বলে দেবে। আর একজন রোমান্টিক হবে। যে মাঝে মাঝে দু’কলি গান গেয়ে দেবে। কবিতা পড়ে দেবে। কবিতা আর ফিনান্সটা একসঙ্গে খুব চাপের। আর একজন বাজারটা করে দেবে। আমার মেয়ে একবার বলেছিল, মাম্মা যারা কেয়ারিং হবে, তারা হ্যান্ডসাম হবে না, আবার হ্যান্ডসাম হলে কেয়ারিং হবে না কিন্তু। চয়েজ ইজ ইয়োরস্। আসলে একজন পুরুষের মধ্যে তো সব কিছু থাকে না। তাই ছড়িয়ে দাও ভালবাসা।
বিয়ে করবেন আবার?
শ্রীলেখা: না! বিয়ে বা লিভ টুগেদার কোনোটাই নয়। একা থেকে এই স্পেসটা এনজয় করতে শুরু করেছি। যেখানে আমিই আমার বস। আসলে আমার মোমেন্টারি ভাল লাগাটা হতে পারে। আর ভাল লাগলে যা যা হয়, সবই হতে পারে। আমার চারপাশে হয়তো চার-পাঁচজন পুরুষ বন্ধুকে দেখছেন। কিন্তু সত্যিই আমার কেউ নেই। তার জন্য কোনো হা-হুতাশও নেই। আমার খিদে পেলে খাব, ঘুম পেলে ঘুমাব। আবার শরীরী চাহিদা থাকলে সেটা পূরণ করব। তার জন্য প্রেম হতে হবে, এটার কোনো মানে নেই। একটা অ্যাট্রাকশন, ভাল লাগা যথেষ্ট। আর তাতে দু’জনেরই সায় থাকতে হবে। সত্যি বলতে কি, আমার প্রচুর ফ্যান ফলোয়িং। তারা ব্র্যান্ড শ্রীলেখাকে পছন্দ করে। কিন্তু মানুষ শ্রীলেখাকে ক’জন জানতে চায়? বা তার চোখের কোণের কালিটা ক’জন দেখতে পায়?
আপনি কি যে কোনো সম্পর্ক লিড করতে চান? তাই এত সমস্যা?
শ্রীলেখা: দেখুন, আমি বুদ্ধিমতী। কিন্তু চালাক নই। চালাকিটা আমি জানি না। এটা সত্যি যে, আমার চিরকালই আন্ডারডগদের প্রতি প্রেম হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমি কখনো কারো কাছে মাথা নোয়াইনি। নিজের শর্তে নিজের মতো করে বাঁচতে ভালবাসি। তাতে আমার কোনো আফশোস নেই। আই লিভ লাইফ অন মাই টার্মস। বিষয়টা আমার এক বান্ধবী আমাকে খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছিল। বলেছিল, তুই আসলে একজন পুরুষ। তোর মধ্যে সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স কাজ করে। সে জন্য তুই কোনো পুরুষের নিচে থাকতে স্বচ্ছন্দ নোস। তবে কোনো সম্পর্ক কন্ট্রোলও করি না।
কোনো একটা সম্পর্ক ফিরে পেতে চান?
শ্রীলেখা: না বোধহয়। আসলে আমি কুইটার নই। সব সম্পর্কেই শেষ অবধি থাকার চেষ্টা করি। কি বলুন তো, সব জিনিসেরই একটা এক্সপায়ারি ডেট থাকে। তবে আরও বয়স হলে হয়তো মেয়ের কথা ভেবে, আমার এক্স হাজবেন্ড যদি কখনও মনে করে, হয়তো একসঙ্গে থাকতে পারি। সেটা তো সময় বলবে। আমরা তো সেপারেটেড কাপলদের আইডিয়াল রেফারেন্স কেস। যদিও টু বি অনেস্ট আমি নিজেও জানি না, ঠিক কী চাই।
অনস্ক্রিন ন্যুডিটি নিয়ে আপনি কতটা স্বচ্ছন্দ?
শ্রীলেখা: এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি হয়তো ততটা কনফিডেন্ট নই। জানি না, তেমন জোরালো চরিত্র পেলে হয়তো ভেবে দেখব। আমাকে কেউ এখনও তো সে ভাবে মোটিভেট করেনি। চোখ বন্ধ করে আমার ডিরেক্টর আর ক্যামেরা পার্সনকে ভরসা করতে পারি এমন জায়গাটা থাকতে হবে।
মেয়ে তো বড় হচ্ছে। ও কি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড?
শ্রীলেখা: মাইয়া (ঐশী) আমার খুব ভাল বন্ধু। ওর সঙ্গে আমি অনেক কিছু শেয়ার করি, অনেক গল্প হয়। আসলে এই জেনারেশন অনেক বেশি স্ট্রেট ফরোয়ার্ড। তারা ডেটে গেলেও ব্যাগে কন্ডোমটা রাখে। আমার মেয়ে একটু বড় হোক। আমি ওকে সেফ সেক্সের ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেব।
আপনাদের তো একটা গার্লস গ্যাং রয়েছে। সেই আড্ডাটা কতটা রিফ্রেশিং?
শ্রীলেখা: ওফ! (উত্তেজিত হয়ে) আমি, চান্দ্রেয়ী, রূপাঞ্জনা, বিদীপ্তা দারুণ এনজয় করি। বুধবার করে আমরা কফিও খাই, মদও খাই।
চারজনই নায়িকা। কোনও ইগো ক্ল্যাশ হয়নি?
শ্রীলেখা: আই সোয়্যার। আমাদের মধ্যে কখনও কোনও ইগো ক্ল্যাশ হয়নি। কি বলুন তো, বেসিক কোথাও মিল না থাকলে আমরা বন্ধু হতে পারতাম না।
অবসর কীভাবে কাটে?
শ্রীলেখা: আমার মেয়ে মাইয়া আছে। আর সাত মাসের ছেলে চিন্তামণি (শ্রীলেখার আদরের সারমেয় তখন তাঁর জামা ধরে টানতে ব্যস্ত)। দিব্যি সময় কেটে যায়। আর তা ছাড়া বই পড়া, সিনেমা দেখা, আমেরিকান সিরিজ, গেম অব থ্রোনস তো আছেই।
আর ডিপ্রেশন সামলান কীভাবে?
শ্রীলেখা: মন খারাপ হলে চকোলেট খাই। কিছু না পেলে বিস্কিটের মধ্যে মাখন লাগিয়ে চিনি দিয়েও খেয়ে নিই।
দীর্ঘ কেরিয়ারে কোনও আফশোস রয়েছে?
শ্রীলেখা: ধুর। আমার এ ফ্ল্যাটের ফ্রম পর্দা টু পাপোশ আমি নিজে করেছি। হোক না সেটা কামালগাজিতে। আমার নিজের তো। তা হলে আর রিগ্রেট কোথায়?
কোনো কষ্ট?
শ্রীলেখা: (মন খারাপের হাসি) আমার সেই ১৬-১৭ বছরের মেয়েটার জন্য কষ্ট হয়। ওকে খুব মিস করি। যে জন্মদিনে গোলবাড়ির সামনে বয়ফ্রেন্ডের জন্য ওয়েট করছিল। কিন্তু দু’ঘন্টা পরেও সেই বন্ধু আসেনি। সেই মেয়েটাকে আমি আর খুঁজে পাই না।
সূত্র: আনন্দবাজার
- See more at: http://www.kalerkantho.com/online/entertainment/2016/06/11/368533#sthash.MiWMaXPk.dpuf