ডেস্ক রিপোর্ট::
লাকসাম সরকারি কলেজের ছাত্রী স্মৃতি আক্তার আত্মহত্যার জন্য আলমই দায়ী। মৃত্যুর পূর্বে স্মৃতির হাতের লেখা চার পৃষ্ঠার চিরকুটটি উদ্ধারের পর গতকাল সকালে আলমকে গ্রেপ্তার করেছে লাকসাম থানা পুলিশ। শুক্রবার রাতে ইউডি মামলা করার পরও বিকেল ৪টা পর্যন্ত হত্যা মামলা করা হয়নি। তবে ওসি তদন্ত বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। গতকাল কুমিল্লার পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একই কলেজের ছাত্র ফেসবুকে স্মৃতির ছবি এডিট করে অশ্লীল ছবি দেয়ার কারণে কলেজে আসা বন্ধ করে দেয় স্মৃতি। এ ঘটনাটি তার মাকে জানালে তার মা পার্শ্ববর্তী উত্তর পশ্চিমগাঁও গ্রামের আলমের মা-বাবাকে জানায়। পরে আলমের বাবা তাকে বকাঝকা
করে সাবধান করে। এরপর আলম আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। আলম তার বন্ধু-বান্ধবদেরকে দিয়ে স্মৃতিকে সম্পর্ক গড়ার জন্য চাপ দেয়।
লাকসাম সরকারি কলেজের ব্যবসায় বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আলম। সে কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। শুক্রবার রাতে স্মৃতি আক্তারের (১৮) কলেজের ব্যাগ থেকে চার পাতার চিরকুট উদ্ধার করে তার স্বজনরা। এরপর উদ্ধারকৃত চিরকুটগুলো থানা পুলিশের কাছে জমা দেয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বোরহান জানান, উদ্ধারকৃত চিরকুট স্মৃতির লেখা কিনা তা পরীক্ষার জন্য তার খাতাগুলো থানায় নিয়ে আসে। মানবজমিনসহ একাধিক জাতীয় পত্রিকায় ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ তৎপর হয়ে উঠে। গতকাল সকালে বাড়ি থেকে পুলিশ আলমকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। স্মৃতির মৃত্যুর জন্য আলমই দায়ী এ কথা লিখে গেছেন। চিঠিতে আরো উল্লেখ ছিল আমি আলমকে ক্ষমা করব না। তোমরাও তাকে ক্ষমা করিও না। তার সাথে আমার কোনো প্রেম ছিল না। আমি তাকে পছন্দ করলে পালিয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করতাম। প্রত্যেক মানুষ মান-সম্মানের সাথে এ সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে চায়। আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারলাম না। মিথ্য অপবাদের বোঝা নিয়ে বাঁচার চেয়ে চলে গেলাম অনেক দূরে। আমি মরতে চাইনি। এ পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে। আমার নামে আইডি খুলে অশ্লীলভাবে আমার ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। সে আমাকে বাধ্য করেছে মৃত্যুর জন্য। আমার মৃত্যুর জন্য আলমই দায়ী।
স্মৃতি লাকসামের অশ্বতলা গ্রামের হতদরিদ্র বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। তার বাবা আজমীর হোটেলের বয়ের কাজ করে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করত। তার স্ত্রী স্থানীয় একটি এনওজিতে চাকরি করে। তার দু’সন্তান। বড় মেয়ে স্মৃতি লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্রী ছিল। ছোট ছেলে স্থানীয় অশ্বতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শেষ করে একটা চাকরি করবে এবং সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু সে ইচ্ছে আর পূরণ হলো না। তার পূর্বেই তাকে চলে যেতে হয়েছে না ফেরার দেশে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে স্মৃতি আক্তার তার ঘরে ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।