প্রকাশিত: ১৬/০৪/২০২১ ৪:০৫ এএম

আর আমি কি আকাশ থেকে অঢেল পানি বর্ষণ করিনি, যা দিয়ে শস্য এবং উদ্ভিদ উৎপন্ন করি, আর ঘন বাগান? —আন-নাবা ১৪-১৬

আমি কি আকাশ থেকে প্রচুর পানি বর্ষণ করিনি?

পানি এক মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। পরিষ্কার পানির উৎসকে ঘিরে জনবসতি গড়ে ওঠে, শহর-কারখানা তৈরি হয়। পরিস্কার পানির ব্যবসা আজকে পৃথিবীতে অন্যতম লাভজনক বিনিয়োগ, যার স্টক মার্কেটে ইনডেক্স-এর বৃদ্ধির হার গত কয়েক বছরে তেল এবং সোনাকে ছাড়িয়ে গেছে। আজকের অর্থনীতিতে নিরাপদ পানি হচ্ছে ‘তরল সোনা’, যার মোট বাজার দর ২০২৫ সালের মধ্যে ২০ ট্রিলিয়ন ডলার হতে যাচ্ছে, যা পুরো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল্য থেকেও বেশি![৪৯০]

আগামী ২৫ বছরের মধ্যে দেশগুলো তাদের সমুদ্র বন্দর, রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের পিছনে মোট যত অর্থ খরচ করবে, তার থেকে বেশি অর্থ খরচ করতে হবে পরিষ্কার পানির জন্য[৪৯০] সারা পৃথিবীতে ব্যবহারযোগ্য পানির অভাব এত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে যে, বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী বড় যুদ্ধ আর তেল নিয়ে হবে না, হবে পানি নিয়ে। ইতিমধ্যেই বিশটি দেশ নদী নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িত।[৪৯১]

 

আজকে আমরা রান্নাঘরে, বাথরুমে কল ছাড়লেই পানি পাই, যেখানে গরিব অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় আধা ঘণ্টা হাঁটতে হয় একটু পানির জন্য।[৪৯২] তারপরেও সেই পানি এত ময়লা যে, সেটা পান করার কথা আমরা কখনো চিন্তাও করবো না। পৃথিবীতে আজকে প্রায় ৮০ কোটি মানুষের কাছে পানের যোগ্য পরিষ্কার পানি নেই।[৪৯৩]

আজকে আমরা মলমূত্র ত্যাগ করে ফ্লাশ করে দিলেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়। নিত্যদিনের এই স্বাভাবিক ব্যাপারটা পৃথিবীতে প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষের কাছে একটি স্বপ্ন-বিলাসিতা, কারণ তাদের কোনো শৌচাগার নেই, থাকলেও সেখানে পরিষ্কার পানির মতো মহামূল্যবান সম্পদ ঢেলে দেওয়ার কথা তারা চিন্তাও করতে পারে না। দুইশ কোটি মানুষ আজকে এমন পানি পান করে যার সাথে মল-মূত্র মিশ্রিত। প্রতি বছর আট লক্ষ মানুষ মারা যায় দূষিত পানি পান করে।[৪৯৪] আরও দুঃখের ব্যাপার যে, প্রতি দিন তিন হাজার বাচ্চা মারা যায় দূষিত পানি পান করে ডাইরিয়া, কলেরা, আমাশয়ে ভুগে।[৪৯৩]

এরপর যখন এক গ্লাস পরিষ্কার পানি হাতে নিয়ে পান করতে যাবেন, ভালো করে তাকিয়ে দেখবেন। এইটুকু পরিষ্কার পানি আজকে ৮০ কোটি মানুষের স্বপ্ন। অথচ আল্লাহ تعالى আপনার-আমার জীবনে এই মহামূল্যবান সম্পদটি অঢেল পরিমাণে দিয়েছেন।

এক গ্লাস পরিষ্কার পানি, আশি কোটি মানুষের স্বপ্ন

পানি কিভাবে আসলো?

পৃথিবীতে কীভাবে এত পানি আসলো, তা বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বিরাট রহস্য। কারণ সূর্য থেকে এত কাছের একটি গ্রহের মধ্যে এত পানি কখনোই থাকার কথা না। পৃথিবী যখন প্রথম তৈরি হচ্ছিল, তখন সেটি পুরোটাই ছিল একটি গলিত লাভার গোলক। কোনো বায়ুমণ্ডল ছিল না। কোনো কঠিন স্তর ছিল না পানি ধরে রাখার জন্য। তখন পৃথিবীর ভিতরে কোনো পানি থাকলেও তা বাষ্প হয়ে মহাকাশে হারিয়ে যাওয়ার কথা। অথচ আজকে বিশাল সব সমুদ্র এবং ভূগর্ভে বিপুল পরিমাণে পানি আছে। কোনোভাবে পৃথিবী অস্বাভাবিক পরিমাণে পানি পেয়েছে এবং বহু প্রতিকূলতার মাঝে তা ধরে রেখতে পেরেছে। এই বিপুল পরিমাণ পানির উৎস কী হতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই।

বহু বছর পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, যেহেতু ধুমকেতুগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পানি পাওয়া গেছে বরফ আকারে, তাই হতে পারে যে ধূমকেতুগুলো পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে তাদের পানি দিয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ধূমকেতুর মধ্যে যে ধরনের পানি পাওয়া যায় এবং পৃথিবীতে যে ধরনের পানি পাওয়া যায়, তার মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য আছে। ধূমকেতু থেকে পৃথিবীতে পানি আসলেও, তা মোট পানির নগণ্য অংশ।[৪৯৫] তাহলে বাকি এত পানি আসলো কোথা থেকে?

পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন পানি আসার। একটি হলো যে, পৃথিবীতে বাকি পানি এসেছে উল্কাপাতের মাধ্যমে। কারণ উল্কাগুলোতে যে ধরনের পানি পাওয়া যায়, পৃথিবীতেও প্রায় একই ধরনের পানি পাওয়া যায়। পৃথিবী যখন প্রথম দিকে অত্যন্ত উত্তপ্ত একটি গোলক ছিল এবং ঠান্ডা হচ্ছিল, তখন দীর্ঘ সময় ধরে উল্কাপাতের মাধ্যমে পৃথিবীতে পানি এসেছে এবং পৃথিবী শীতল হয়েছে।[৪৯৬] কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমী গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে, পৃথিবীতে এত বেশি পানি আছে যে, উল্কাপাতের মাধ্যমে এত পানি আসা সম্ভব নয়। পৃথিবীর বেশির ভাগ পানি অন্য কোনো পদ্ধতিতে এসেছে।[৪৯৭]

মহাজাগতিক মেঘ

এরপর বিজ্ঞানীরা বের করেন যে, সৌরজগৎ যখন তৈরি হচ্ছিল, তখন সৌরজগৎ এক নীহারিকার মেঘের মধ্যে ডুবে ছিল। নতুন সৃষ্টি হওয়া সূর্যের চারপাশ ঘিরে ছিল এক ধরনের মহাজাগতিক মেঘ, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পানি ছিল। নীহারিকার মেঘের মধ্যে যে অনেক পানি থাকে এবং নতুন সৃষ্টি হওয়া সূর্যের মতো তারার চারপাশে জমে থাকা মহাজাগতিক মেঘ-এর মধ্যেও যে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, তার বহু প্রমাণ বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন। আমরা মহাকাশের যেদিকেই তাকাই, সেদিকেই আমরা বিশাল সব মহাজাগতিক মেঘ এবং সেগুলোর মধ্যে বিপুল পরিমাণে পানি দেখতে পাই।[৪৯৮] পৃথিবীতে পানি কীভাবে আসলো, তার নতুন তত্ত্ব হচ্ছে যে, নতুন সৃষ্টি হওয়া পৃথিবী তার আশেপাশের মহাজাগতিক মেঘ থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শুষে নিয়ে ধরে রাখে এবং সেগুলো ভূগর্ভের ভিতরে গলিত লাভার সাথে জমা হয়। তারপরে পৃথিবীর উপরের স্তরের ফাটলগুলো দিয়ে ভূগর্ভের পানি বের হয়ে এসে বিশাল সব সমুদ্র তৈরি হয়। এরপর সূর্যের তাপে সেই পানিগুলো বাষ্প হয়ে মেঘ হয় এবং মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়ে নদী-নালা-খাল-বিল তৈরি হয়। ধারণা করা হয় যে, পৃথিবীর বেশির ভাগ পানি এই পদ্ধতিতে এসেছে।[৪৯৯] কিন্তু এই তত্ত্বের সমস্যা হলো, পৃথিবী প্রথম দিকে এতই উত্তপ্ত ছিল যে, অনেকখানি পানি বাষ্প হয়ে মহাকাশে হারিয়ে যাওয়ার কথা। এই পদ্ধতিতে পৃথিবীতে অনেক পানি জমা হলেও, আজকে পৃথিবীতে যে অস্বাভাবিক পরিমাণে পানি পাওয়া গেছে, তা হওয়ার জন্য আরেকটি বিরাট পানির উৎস দরকার।[৫০০]

পৃথিবীতে বিপুল পরিমাণে পানি আসার আরেকটি উৎস সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া গেছে— পৃথিবী যখন প্রথম দিকে একটি উত্তপ্ত আগুনের গোলকের মত ছিল, তখন পৃথিবীর চারপাশে যে চুম্বকীয় ক্ষেত্র  এবং ওজন স্তর রয়েছে, যা পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে, তা তখন ছিল না। যার ফলে এই ক্ষতিকর রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আছড়ে পড়তো। তখন পৃথিবীর ঘন বায়ুমণ্ডলে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছিল, তাকে অতিবেগুনি রশ্মি ভেঙ্গে অক্সিজেন এবং কার্বন তৈরি করতো। তারপর সেই অক্সিজেনগুলো সূর্য থেকে আসা হাইড্রোজেন আইসোটোপ এর সাথে বিক্রিয়া করে পানিতে পরিণত হয় এবং তা বৃষ্টি হয়ে পৃথিবীতে ঝরে পড়ে। ধারণা করা হয় যে, পৃথিবীতে বেশির ভাগ পানি এই অবিরাম বৃষ্টি থেকে এসেছে।

প্রতিদিন প্রায় এক ট্রিলিয়ন টন পানি, অর্থাৎ প্রায় দশ লক্ষ-কোটি টন পানি সূর্যের তাপে বাষ্প হয়ে আকাশে চলে যায়। তারপর প্রায় একই পরিমাণ পানি এক সময় বৃষ্টি হয়ে আকাশ থেকে ফিরে আসে। এভাবে প্রতি বছর প্রায় সমান পরিমাণের পানি আকাশে যায় এবং আকাশ থেকে ফিরে আসে। যদি এই ভারসাম্য বজায় না থাকতো, তাহলে হয় সমুদ্র, নদীনালা থেকে ক্রমাগত পানি কমতে কমতে সেগুলো শুকিয়ে যেত, না হয় বৃষ্টি বেশি হতে হতে একসময় আকাশ মেঘ শুন্য হয়ে যেত। কোনো এক অদ্ভুত উপায়ে পানির আকাশে উঠে যাওয়া এবং ফিরে আসার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে।[৪৩৭]

আর পানি নিজেই প্রকৃতির সবচেয়ে রহস্যময় পদার্থ। এখন পর্যন্ত পানির ৬৪টি অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে, যার সমাধান বিজ্ঞানীদের কাছে নেই।[৫০১][৫০২][৫০৩] যেমন, পানির অস্বাভাবিক তাপ ধারণ ক্ষমতা, যা না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকতে পারত না। পানির অস্বাভাবিক দ্রবণ করার ক্ষমতা, যা না থাকলে প্রাণীদের শরীরে পুষ্টির বিতরণ ঠিকভাবে হতো না। পানির অস্বাভাবিক পৃষ্ঠটান ক্ষমতা, যা না থাকলে গাছপালা মাটি থেকে পানি শুষে পাতায় নিতে পারত না খাদ্য তৈরি করার জন্য। আবার, পানি বরফ হলে তার আয়তন না কমে উল্টো বেড়ে যায়, যার কারণে নদী, পুকুর, সমুদ্রের উপরের স্তরেই শুধু বরফ হয়, পুরোটা জমে বরফ হয়ে সব প্রাণী মেরে ফেলে না —এরকম বহু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পানি দেখলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, একে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বানানোই হয়েছে প্রাণ সৃষ্টির জন্য।

যা দিয়ে শস্য এবং উদ্ভিদ উৎপন্ন করি, আর ঘন বাগান?

আল্লাহর এই বাণীর সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ দেখা যায় মরু অঞ্চলগুলোতে। বৃষ্টি হওয়ার আগে সেখানকার মাটি থাকে শুকনো, প্রাণ শূন্য—

BeforeWater

মৌসুমি বৃষ্টি হওয়ার পর তা আবার জীবিত হয়ে উঠে—

AfterWater

এই অসাধারণ ঘটনাটি ঘটে শুধু বৃষ্টির পানির কারণেই নয়, এর মধ্যে আরেক বিরাট রহস্য রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীতে আবিষ্কার হয়েছে যে, মেঘ তৈরি হওয়ার অন্যতম মূল কারণ হলো, যখন সমুদ্রের পানি সমুদ্রের পাড়ে আছড়ে পড়ে, তখন এক ধরণের সাদা ফেনা তৈরি হয়। এই ফেনাগুলো বাতাসের ধাক্কায় স্প্রে আকারে মেঘে চলে যায়। এই ফেনার স্প্রের সাথে সমুদ্রের পানি থেকে অনেক অণুজীব এবং রাসায়নিক পদার্থও মেঘে চলে যায়। মেঘগুলো যে শুধুই পানি বহন করছে তা নয়। সেই পানির সাথে মিশে আছে বিশাল পরিমাণের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য অণুজীব। একইসাথে আছে মাটিকে উর্বর করার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি।[৩০৩]

একারণেই যখন মৃত জমিতে বৃষ্টি পড়ে, সেই মৃত জমি আবার সজীব হয়ে ওঠে। বৃষ্টির পানিতে যদি শুধুই বিশুদ্ধ পানি থাকতো, তাহলে তা হতো না। বৃষ্টির পানির মাধ্যমে পানি, অণুজীব, রাসায়নিক পদার্থের এক পুষ্টিকর মিশ্রণ বিপুল পরিমাণে মাটিতে সরবরাহ হয় দেখেই শুকনো, মৃত জমি আবার সজীব, প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে পারে।[৩০৩]

অঙ্কুরোদগম বিজ্ঞানের এক বিস্ময়

মাটির ভেতরে অন্ধকারে ডুবে থাকা একটি বীজ থেকে কীভাবে চারা হয়? আমরা জানি গাছ বড় হয় সূর্যের আলোর শক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু মাটির ভেতরে থাকা বীজ তো কোনো আলো পাচ্ছে না। তাহলে সেটা থেকে চারা তৈরি হওয়ার শক্তি আসে কোথা থেকে? বীজ থেকে ছোট একটা কাণ্ড মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে পাতা গজিয়ে সূর্যের আলো আহরণ করা পর্যন্ত যে বিপুল পরিমাণের শক্তি দরকার, তা ছোট একটা বীজের মধ্যে গাছ কীভাবে ঢুকিয়ে দেয়?

বীজ থেকে চারা বের হওয়ার সময় সেটাকে মাটির উপরে উঠতে হবে, কীভাবে তা বুঝতে পারে? একটা বীজ কীভাবে বোঝে উপর দিক কোনটা? এছাড়াও কিছু বীজ বিশেষ তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং সূর্যের আলোর প্রখরতায় চারা জন্ম দেয়, না হলে দেয় না। তাপমাত্রা, আদ্রতা, আলোর তীব্রতা মাপার যন্ত্র বীজের মধ্যে এলো কী করে?

একটি ছোট বীজের মধ্যেও আল্লাহ تعالى কত জটিল ডিজাইন এবং পরিকল্পনা দিয়ে রেখেছেন। সামান্য এক একেকটি বীজ যেন একেকটি ছোট ফ্যাক্টরি, যার নিজস্ব ব্যাটারি আছে শক্তি ধরে রাখার জন্য, নিজস্ব জেনারেটর আছে কাঁচামাল ব্যবহার করে বিপুল শক্তি তৈরি করার জন্য, কাঁচামাল দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম আছে এবং আশেপাশের আবহাওয়া পরিমাপ করার জন্য এন্টেনা আছে। নানা ধরনের তথ্য প্রক্রিয়া করে সঠিক সময়ে অঙ্কুরোদগম শুরু করার এবং শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ক্ষুদ্র কম্পিউটারও আছে।

অঙ্কুরোদগম বিজ্ঞানীদের কাছে একটি  বিরাট রহস্য। এখনো বিজ্ঞানীরা বের করতে পারেননি অঙ্কুরোদগম শুরু এবং শেষ হওয়ার পেছনে কী প্রক্রিয়া কাজ করে। যার কারণে জেনেটিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে এখনো অঙ্কুরোদগমকে আরো বেশি ফলপ্রসূ করার খুব একটা সুযোগ বের করা যায়নি। অঙ্কুরোদগমের সময় কোষগুলো ঠিক কীভাবে জিন ব্যবহার করে, কীভাবে তা চারার দেহ গঠন করে, দেহের ক্ষতির মেরামত করে ইত্যাদি হাজারো রহস্য এখনো সমাধান হয়নি।[৫০৪] আল্লাহ تعالى কুরআনে মানুষকে শস্য এবং উদ্ভিদ তৈরি হবার প্রক্রিয়া দিকে বার বার লক্ষ করতে বলেছেন। কারণ এর মধ্যে বুদ্ধিমান মানুষদের জন্য বিরাট নিদর্শন রয়েছে।

একইভাবে, মাটির মধ্যেও বিশাল পরিকল্পনা রয়েছে। মানুষ এখন পর্যন্ত তার সামান্যই বের করতে পেরেছে। মাটির গঠন, মাটিতে মিশে থাকা রাসায়নিক যৌগ, পানির প্রবাহের ব্যবস্থা, অণুজীব ধরে রাখার ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে হাজার বছর ধরে গবেষণা হচ্ছে। মৃত্তিকা-বিজ্ঞান নামে বিজ্ঞানের বিশাল শাখা আছে মাটি নিয়ে গবেষণা করার জন্য।

যারা বুদ্ধিমান, তারা সৃষ্টিজগতের এই অসাধারণ সব ঘটনাগুলোর মধ্যে আল্লাহর تعالى পরিচয় খুঁজে পাবেন। তাঁর একত্ব, তাঁর মহত্ত্ব উপলব্ধি করে, মুগ্ধ হয়ে তাঁর মহিমার কাছে সমর্পণ করবেন। অনেক বুদ্ধিমান মানুষের জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন সিজদাটি হয়েছে, যখন সে সৃষ্টিজগতের মধ্যে আল্লাহর تعالى প্রচণ্ড ক্ষমতা, সৃজনশীলতা, অসম্ভব সুন্দর পরিকল্পনা আবিষ্কার করে শ্রদ্ধায় মাটিতে লুটিয়ে গেছেন। সেই বিরল সিজদার স্বাদ উপলব্ধি করা শুধু সেই সব বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়, যারা আল্লাহর تعالى সৃষ্টিজগত নিয়ে গভীরভাবে মুক্তমনে চিন্তা করেন।

পাঠকের মতামত

তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ

ইসলামী ঐতিহ্যের স্মৃতি বিজড়িত তুরস্কে অনুষ্ঠিত ৯ম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন বাংলাদেশি হাফেজ, ...