নিউজ ডেস্ক: ২০০৯ সালে নাজমা আক্তারের (ছদ্মনাম) এইডস রোগ ধরা পড়ে। সে সময়ই তিনি ভেবেছিলেন মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী ও যে কোন সময়। ভাবতেই পারেননি ২০১৬ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন। বেঁচে থাকার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের নাজমা আক্তারে মতো এ ধরণের আরো এইডস রোগী থাকলেও এইডসের সঙ্গে লড়াই করার মানসিক শক্তি সবার থাকেনা।
পৃথিবীজুড়েও এমন রোগীর সংখ্যা অনেক। এমন প্রেক্ষাপটে ০১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস।
বাংলাদেশের অনেক এইডস রোগী এ রোগের কথা কাউকে বলতে পারেন না। কারণ, এ কথা বেশি মানুষের কাছে বলার সুযোগও নেই। কেউ যদি এ রোগের কথা জানতে পারে তাহলে রোগীকে সামাজিকভাবে একঘরে হতে হয়।
এক্ষেত্রে নাজমা আক্তার ব্যতিক্রম। তিনি বলছিলেন ৭ বছর ধরে এইডস রোগে আক্রান্ত। নাজমা আক্তারের এইডস রোগের কথা পরিবারের সবাই জানেন। তার মা ও স্বামী এ রোগের কথা জানেন। তবে, সেজন্য তাদের কাছ থেকে নাজমা আক্তারকে কোন কথা শুনতে হয়নি। কিন্তু, শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে নেতিবাচকভাবে দেখে।
তিনি বলছিলেন, আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন যেমন - আমার শাশুড়ি, দেবর, ননদরা আমাকে বলেছে আমি নাকি খারাপ। খারাপ মেয়েদের এ রোগ হয়। শুধু তাই নয় আমার স্বামীকে তারা আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যও বলেছে। কিন্তু আমার স্বামী তাদের কথা শোনেনি।
কিন্তু কীভাবে এ রোগ দানা বাঁধলো তার মধ্যে? বিয়ের আগে নাকি পরে? তিনি জানালেন, এর আগেও তার একবার বিয়ে হয়। ৬-৭ বছর আগে সে স্বামীর কাছ থেকে তিনি ডিভোর্স নিয়ে চলে আসেন।
আগের স্বামী থেকে তার একটা মেয়ে ছিল। সে মেয়ে নয় বছর বয়সে মারা যায়। তিনি বলেন, এইচআইভি হলে যে ধরণের শারীরিক সমস্যা হয়, তার মেয়েরও একই ধরণের সমস্যা ছিল। কিন্তু সে সময় তিনি বুঝতে পারেন নি। মেয়েকে নিয়ে তিনি দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ডাক্তাররা রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হয়নি বলে নাজমা আক্তারের ধারণা।
তিনি বলেন, ওর যেসব রোগ ছিল তা থেকেই আমার ধারণা আমার মেয়ে এইডস রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। আমার মেয়েকে আমি বড় বড় সব হাসপাতালে দেখিয়েছি। কিন্তু, কোন ডাক্তার আমার বাচ্চার এইচআইভি টেস্ট করেনি।
নাজমা আক্তার বলছিলেন দ্বিতীয় বিয়ের এক বছর পর কাজের জন্য তিনি জর্ডান গিয়েছিলেন। সেখানে তার এইচআইভি টেস্ট করা হয়। তখন এইডস সনাক্ত হলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো দেয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের ধারণা আছে যে এইডস হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।
নাজমা আক্তার বলেন, যারা না জানে তারাই শুধু এ কথা বলে। নিয়মিত ওষুধ খেলে একজন মানুষ এ রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে না। আমি নিজে এই ওষুধ খাচ্ছি এবং ভালো আছি।