প্রতিষ্ঠার মাত্র ১৫ বছরের মাথায় পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে আরাকান আর্মি (এএ)। বর্তমানে গোষ্ঠীটি রাজ্যের ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ টাউনশিপের মধ্যে ১৫টি এবং পুরো অঞ্চলের ৯০ শতাংশেরও বেশি ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এ ছাড়া, গোষ্ঠীটি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে।
আরাকান আর্মির এ সামরিক অগ্রগতির অন্যতম মাইলফলক হলো রাখাইনের আন টাউনশিপে জান্তাবাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কমান্ডের সদর দপ্তরের দখল। এটি এএ-এর সামরিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বকে আরও সুসংহত করেছে। আরাকান আর্মি তাদের রাজনৈতিক শাখা আরাকান পিপলস রেভল্যুশনারি গভর্নমেন্টের (এপিআরজি) মাধ্যমে রাখাইনের বিচারব্যবস্থা থেকে জনস্বাস্থ্য পর্যন্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাত পরিচালনা করছে। আর এই বিষয়টি তাদের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন ও কনফেডারেট রাজ্যের মর্যাদা অর্জনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্ট করছে।
রাখাইন রাজ্যের কৌশলগত অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং চীন-সমর্থিত অবকাঠামোর নৈকট্য এএ-এর উত্থানকে আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এই পরিবর্তন সংলাপ ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে।
অসাধারণ কৌশল ও ডিটারেন্ট বা প্রতিরোধক্ষমতার মাধ্যমে এএ রাখাইন রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় কার্যত শাসনক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছে। এপিআরজি প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা এবং জনসেবাসহ কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা এএ-এর বৈধতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে আরও স্পষ্ট করছে।
এএ-এর দ্রুত ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জান্তা বাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াইয়ে রাখাইনের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর যোদ্ধাদের নিয়োগের মাধ্যমে তারা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেষ্টা করছে।
এই কৌশল রাখাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে জাতিগত বিভাজন আরও গভীর করেছে এবং পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়িয়ে সংঘাতের চক্রকে দীর্ঘায়িত করছে। এএ এর শাসন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলা হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন এখনো চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে।
এএ-এর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও সংলাপের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা অর্জন করা কতটা সফল হবে, সেটাই শেষ পর্যন্ত নির্ধারক হয়ে উঠবে।
রাখাইনে চীনের প্রভাব
রাখাইন রাজ্যের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও বঙ্গোপসাগরের কৌশলগত অবস্থান চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। কায়াকপায়ু গভীর সমুদ্রবন্দর ও শ্বে গ্যাস পাইপলাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আঞ্চলিক কৌশলগত পরিকল্পনার প্রতিফলন।
এই প্রকল্পগুলো শুধু চীনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ পথ নিশ্চিত করছে না, বরং ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সরাসরি সংযোগও আরও মজবুত করছে, যা রাখাইনকে চীনের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে।
তবে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে চীনা বিনিয়োগ ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মুখে। আঞ্চলিক তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের ‘অপারেশন ১০২৭ ’—শুরুর পর থেকে জান্তাবিরোধী বাহিনী চীনা অর্থায়নের ৩৪টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩ টির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রধান এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাখাইন, উত্তর শান রাজ্য এবং মধ্যাঞ্চল।
তবে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ও জান্তা বিরোধীদের রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) সশস্ত্রবাহিনী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস—পিডিএফ সরাসরি চীনা প্রকল্পগুলোর ওপর হামলা চালানো থেকে বিরত থেকেছে। তারপরও ২০২৪ সালের অক্টোবরে জান্তা-সমর্থিত পিউসাওথি মিলিশিয়া মান্দালয়ে চীনা কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। এটি চীন-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্কের সাত দশকের ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা।
বিনিয়োগ রক্ষা করতে চীন মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে যৌথ নিরাপত্তা কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। জান্তা এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খসড়া পর্যালোচনা করছে। যেখানে অস্ত্র ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানি সংক্রান্ত ব্যবস্থা এবং এর ফলে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব যেন ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এই উদ্যোগ মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে ঘিরে চীনের আস্থার অভাবকেই প্রতিফলিত করে। একই সঙ্গে, বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিরোধের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে এরই মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করে রাখা এএ এটি ইতিবাচকভাবে নাও নিতে পারে।
যদিও চীনা বিনিয়োগ মিয়ানমারের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে জান্তার প্রতি অতিরিক্ত সমর্থন দেশটির অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ, বিশেষ করে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে। তাই রাখাইনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার ক্ষেত্রে চীনের জন্য এই উত্তেজনাগুলো সামলানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বিদ্যমান সংঘাত আরও ঘনীভূত না হয়।
জটিল সংঘাতের গতিশীলতা
আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস ও ঐতিহাসিক ক্ষোভে জর্জরিত। জাতিগত জাতীয়তাবাদের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এএ-এর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এই বিভাজনকে আরও গভীর করেছে।
এই উত্তেজনা রাখাইনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধার সৃষ্টি করছে। তবে সমঝোতার সম্ভাবনাও বিদ্যমান। সম্প্রতি এএ এমন বার্তা দিয়েছে, যেখানে তারা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাখাইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং রাজনৈতিক সংলাপের জন্য খোলা দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্বাস তৈরির জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও সমাধান, সরকার কাঠামোতে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানো।
কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির ও নতুন সংকট
বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়োগকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যা সংঘাতের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জোরপূর্বক নিয়োগ এবং নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে সামরিক জান্তার পক্ষে টেনে নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এই পরিস্থিতি দেখিয়ে দেয় যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে শরণার্থীদের শোষণ ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যদিও এএ রোহিঙ্গাদের স্বায়ত্তশাসিত রাখাইনে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তবে কেবল কথার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়; বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রশাসনিক কাঠামোয় রোহিঙ্গাদের বৃহত্তর সংযুক্তি এবং ন্যায়সংগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করলে পারস্পরিক আস্থা ও সহাবস্থানের ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এএ, রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সংলাপ সহজতর করা হলে সহযোগিতার জন্য একটি কাঠামো গড়ে উঠতে পারে।
এই উদ্যোগগুলো সফল করতে হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ শাসন কাঠামো গড়ে তোলা গেলে রাখাইন দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতার পথে এগোতে পারবে।
ভারত ও বাংলাদেশের ভূমিকা
রাখাইনের নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাখাইনে ভারতের কৌশলগত প্রকল্পগুলোর মধ্যে কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। যার মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে, এএ-এর ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ ভারতের জন্য একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সুযোগও বয়ে আনতে পারে। সরাসরি এএ-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া ভারতের জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ, এই যোগাযোগ রাখাইনে ভারতের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে পারে।
ভারত যদি বাস্তবসম্মত সহযোগিতার পথে হাঁটে, তবে এটি শুধু দেশটির বিনিয়োগই সুরক্ষিত করবে না, বরং রাখাইনে নয়াদিল্লির প্রভাবও বাড়াবে। পাশাপাশি, রাখাইনে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের সম্পৃক্ততা কার্যকর কৌশল হিসেবে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের সম্পদ ব্যবস্থাপনা চাপে পড়েছে এবং অভ্যন্তরীণ সামাজিক-রাজনৈতিক উত্তেজনাও বেড়েছে। এএ-এর প্রতি কিছুটা নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন কৌশলগত সুযোগ খুঁজে পেতে পারে। যেমন, মানবিক করিডর স্থাপন, সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কিত ইস্যুগুলো সমাধান এবং এএ-এর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পথ প্রশস্ত করা যেতে পারে।
ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই উচিত এএ-এর কার্যত শাসনক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের রাখাইনের মূল অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা। এই কৌশল গ্রহণ করলে এটি শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না, বরং অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণেও ভূমিকা রাখবে।
সমাধানের পথ কী?
রাখাইনে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন, যেখানে সুশাসন, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং মানবিক সহায়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
১. অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা: এএ-কে সামরিক সাফল্যের বাইরে গিয়ে নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা দেখাতে হবে। এর অর্থ হলো, সব সম্প্রদায়ের—বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের—অধিকার সংরক্ষণ এবং এমন শাসন কাঠামো গড়ে তোলা, যেখানে রাখাইনের বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
২. গঠনমূলক সংলাপ প্রচার: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে এএ, রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ও অন্যান্য অংশীদারদের মধ্যে সংলাপের সুযোগ তৈরি করা অপরিহার্য। এই প্রচেষ্টাগুলো স্বচ্ছ হওয়া উচিত এবং এমন প্রক্রিয়া থাকতে হবে, যা জবাবদিহি নিশ্চিত করবে এবং অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে।
৩. কৌশলগত বিনিয়োগের সদ্ব্যবহার: চীন, ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যেন রাখাইনের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, তা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করলে সাধারণ জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে এবং সংঘাতের মূল কারণগুলো হ্রাস পাবে।
৪. মানবিক সহায়তা জোরদার: বাংলাদেশ ও ভারতসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর উচিত রাখাইনের বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা গেলে মানুষের দুর্দশা কমানো সম্ভব হবে।
রাখাইনের সংকট জটিল হলেও এটি অমীমাংসিত নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন, কৌশলগত সহযোগিতা এবং টেকসই আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে অঞ্চলটি সংঘাত থেকে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঐতিহাসিক ক্ষোভের সমাধান ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা গেলে রাখাইন একসময় সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
এশিয়া টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান