ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৬/০২/২০২৫ ৯:৫০ এএম

উৎকণ্ঠা-আতঙ্কে দিন পার করছেন কক্সবাজারের টেকনাফে আরাকান আর্মির হাতে আটক রোহিঙ্গাসহ ১০ জেলের স্বজনরা। ৬ দিন পার হয়ে গেলেও এখনও তাদের কোন খবর না পাওয়ায় চিন্তিত তারা। এদিকে দফায় দফায় এমন ‘আটক-অপহরণে’র ঘটনায় ভয় বাড়ছে জেলেদের মনে। জেলেরা বলছেন, মাছ ধরা এখন রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীতে যাওয়ার আগে ভাবতে হয় পরিবার-সন্তানদের কাছে আবার নিরাপদে ফিরবো কী-না?

শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কথা হয় শাহপরীর দ্বীপের নৌকার মাঝি জেলে মো. হাসানের স্ত্রী নুর নাহার বেগমের সাথে। তিনি বলেন, আমার স্বামীসহ শাহপরীর দ্বীপের চার জেলে আজ কয়েকদিন ধরে আরাকান আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে। আটকের একদিন পরে ফোন করে বলছে আমরা ভালো আছি। আরাকান আর্মি আমাদের রান্না বান্না করে খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। তারা আজকাল ছেড়ে দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেহেতু বিষয়টি জেনেছে সেজন্য ছেড়ে দিতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে। এছাড়া বিজিবিকেও বিষয়টি জানানোর জন্য বলেছেন।

নুর নাহার বলেন, বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবিকে) জানানো হয়েছে। এখন আর কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছি না। আরাকান আর্মির হাতে বন্দী থাকা অবস্থায় যে নাম্বার থেকে ফোন করেছিল, সেই নাম্বারে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। দিন যতই বাড়ছে আমাদের চিন্তার মাত্রা ততই বাড়ছে।

টেকনাফের ২৬ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি বদরুল ইসলাম বলেন, গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২৬ নম্বর ক্যাম্পের বি ব্লকের ৬ রোহিঙ্গা জেলে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপের মোহনায় মাছ ধরতে যায়। এ সময় তারা ভুলে মিয়ানমার সীমান্ত মাছ ধরছিল। তখন আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের আটক করে নিয়ে যান। প্রায় ৬ দিন পার হলেও আটক জেলেদের এখনও ছেড়ে দেয়নি।

টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ নৌ-ঘাটের সভাপতি বশির আহমেদ বলেন, ছয়দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত জেলেদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমারের আরাকান আর্মি। এই নিয়ে জেলে পরিবারগুলো খুব আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এখন নাফ নদীতে মাছ শিকারের যেতে ভয় পাচ্ছেন জেলেরা। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবহিত করেছি।

স্থানীয় জেলেরা বলছেন, কয়েকদিন পরপর এভাবে অস্ত্রের মুখে জেলেদেরকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা মাছ শিকার করে পরিবার চালাই। এখন ভয়ে নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। পরিস্থিতি এমন হলে বউ বাচ্চাদেরকে কি করে খাওয়াবো। একমাত্র আল্লাহ ভালো জানে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আরাকান আর্মির হাতে আটক জেলেদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছেন। আশা করি আটক জেলেরা বাড়ি ফেরত আসতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নাফনদীর শাহপরীর দ্বীপের মোহনায় মাছ ধরতে যায় ১০ জেলে। যেখানে ৪ জন স্থানীয় জেলে এবং ৬ জন রোহিঙ্গা ছিল। মাছ ধরার এক পর্যায়ে তারা ভুলে মিয়ানমার সীমান্তে ঢুকে পড়ে। তারপর তাদের আটক করে আরাকান আর্মি।

আটকদের মধ্যে স্থানীয় জেলেরা হলেন, টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা নৌকার মাঝি মো. হাসান (৩০), আব্দুর রকিম (২০), মো. জাবের (২৬), মো. হাছান (১৬)। রোহিঙ্গা জেলেরা হলেন, টেকনাফ হ্নীলা ২৬ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন (২৭), কবির আহাম্মদ(৩৬) আমান উল্লাহ (৫৪), মোহাম্মদ হোসাইন (২৫), হামিদ হোসাইন (৪৮) ও নুর হোসেন ( ৩৯)।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ অক্টোবর শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট থেকে ছয়টি ট্রলার নিয়ে ৫৮ জন জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান। ৯ অক্টোবর তাদের অপহরণ করে মিয়ানমার নৌ বাহিনী। এ সময় তারা একটি ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি চালালে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হন। যার মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে জেলেদের দেশে ফেরত আনা হয়।

এছাড়া, গত বছরের ১৫ অক্টোবর মিয়ানমারের রাখাইনে অনুপ্রবেশ করা আরাকান আর্মির হাতে আটক বাংলাদেশি ১৬ জেলেকে বিজিবির মাধ্যমে ফেরত আনা হয়েছিল।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার জান্তা প্রধান ও সু চিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান কমান্ডার সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং, ...

কাজের অনুমতি পাচ্ছেন শরণার্থীরা

মালয়েশিয়া সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এবং সরকারিভাবে নিবন্ধিত শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সামাজিক সহায়তা ...

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য জাতিসংঘের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ...