আত্মার দেহপিঞ্জর ত্যাগ করাকে মৃত্যু বলে। মহান আল্লাহ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আত্মাকে আমাদের দেহপিঞ্জরে প্রবেশ করান, যত দিন তা আমাদের দেহপিঞ্জরে অবস্থান করে, সে সময়কালকে হায়াত বা জীবন বলা হয়। আর যখন তা মহান আল্লাহর আদেশে দেহপিঞ্জর ত্যাগ করে, তাকে মৃত্যু বলা হয়। একসময় এই মৃত্যু থাকবে না। পরকালে মৃত্যুকে জীবন্ত করে তোলা হবে এবং চূড়ান্তভাবে মৃত্যুর অবসান ঘটানো হবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তাআলা সব মানুষকে একটি ময়দানে একত্র করবেন। তারপর মহান আল্লাহ তাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলবেন, পৃথিবীতে যে যার অনুসরণ করত, এখন কেন সে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে না? অতএব, ক্রুশপূজারিদের জন্য ক্রুশ, মূর্তিপূজারিদের জন্য মূর্তি, অগ্নি উপাসকদের জন্য আগুন উপস্থাপন করা হবে এবং সবাই নিজ নিজ পূজনীয় উপাস্যদের সঙ্গে চলবে। আর মুসলমানরা তাদের জায়গাতেই থেকে যাবে। মহান আল্লাহ তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলবেন, তোমরা কেন ওই সব মানুষকে অনুসরণ করছ না? তারা বলবে, নাউজুবিল্লাহ মিনকা, নাউজুবিল্লাহ মিনকা (আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। আল্লাহ তাআলাই আমাদের প্রভু। আর এটা আমাদের জায়গা। আমরা আমাদের প্রভুর সাক্ষাৎ পাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত এই স্থান ছেড়ে যাব না। তিনি তাদের নির্দেশ দেবেন এবং তাদের নিজ জায়গায় অটল রাখবেন। তারপর আল্লাহ তাআলা অদৃশ্য হয়ে যাবেন। তিনি পুনরায় তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে বলবেন, তোমরা কেন ওই সব মানুষের অনুসরণ করছ না? তারা বলবে, নাউজুবিল্লাহ মিনকা, নাউজুবিল্লাহ মিনকা, আল্লাহ আমাদের রব এবং এটা আমাদের অবস্থানস্থল। আমরা আমাদের রবের দেখা পাওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত এই জায়গা ছেড়ে যাব না। তিনি তাদের আদেশ দেবেন এবং নিজ স্থানে দৃঢ় রাখবেন। সাহাবিরা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কি আমাদের প্রভুর দেখা পাব? তিনি বলেন, তোমাদের কি পূর্ণিমার রাতের চাঁদ দেখতে অন্যদের কষ্ট দিতে হয়? তারা বলল, না, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, অনুরূপভাবে সে সময় তোমরা তাঁকে দেখার জন্য তোমাদের কাউকেও যন্ত্রণা দিতে হবে না। তারপর আল্লাহ তাআলা আড়ালে চলে যাবেন। তিনি পুনরায় তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে নিজের পরিচিতি উপস্থাপন করে বলবেন, আমিই তোমাদের প্রভু। তোমরা আমার অনুসরণ করো। মুসলমানরা উঠে দাঁড়াবে। চলার পথে পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। তারা তা খুব সহজেই দ্রুতগামী ঘোড়া ও উটের মতো অতিক্রম করবে এবং এর ওপর ধ্বনিত হবে—‘সাল্লিম সাল্লিম’ (হে আল্লাহ আমাদের শান্তিতে রাখুন)। জাহান্নামিরা অতিক্রম না করতে পেরে এখানেই থেকে যাবে। তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং জাহান্নামকে প্রশ্ন করা হবে, তোর পেট ভরেছে কি? সে বলবে, আরো আছে কি? আবার আরেকটি দলকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং প্রশ্ন করা হবে, তোর পেট ভরেছে কি? সে বলবে, আরো আছে কি? এভাবে সব জাহান্নামিকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন দয়ালু প্রভু আল্লাহ তাআলা তাঁর পা এর ওপর রাখবেন এবং এর এক অংশ আরেক অংশের সঙ্গে সংকুচিত হয়ে যাবে। তিনি বলবেন, যথেষ্ট হয়েছে তো? জাহান্নাম বলবে, হ্যাঁ, যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তাআলা যখন জান্নাতিদের জান্নাতে এবং জাহান্নামিদের জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন, তখন ‘মৃত্যু’কে গলায় কাপড় বেঁধে টেনে আনা হবে এবং জান্নাতি ও জাহান্নামিদের মাঝখানের প্রাচীরে রাখা হবে। তারপর ডেকে বলা হবে, হে জান্নাতবাসীরা! তারা ভয়ে ভয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর বলা হবে, হে জাহান্নামবাসীরা! তারাও সুসংবাদ মনে করে শাফাআত লাভের আশায় আত্মপ্রকাশ করবে। তারপর জান্নাতি ও জাহান্নামিদের প্রশ্ন করা হবে, তোমরা কি একে চেনো? জান্নাতি ও জাহান্নামিরা বলবে, হ্যাঁ আমরা একে চিনে ফেলেছি। এটা ‘মৃত্যু’, যা আমাদের ওপর নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। তারপর মৃত্যুকে চিৎ করে শোয়ানো হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যকার প্রাচীরের ওপর জবাই করা হবে। তারপর বলা হবে, হে জান্নাতিরা! তোমরা চিরকাল জান্নাতে থাকবে, এরপর আর মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামিরা! তোমরা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে, এরপর আর মৃত্যু নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫৫৭)
মহান আল্লাহ সবাইকে পরকালের অসীম জীবনে জান্নাতি হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।