প্রতিটি জিনিসেরই চূড়া বা শীর্ষ রয়েছে। আর কুরআনুল কারিমের চূড়া বা শীর্ষ হলো ‘আয়াতুল কুরসি’। আয়াতুল কুরসি মূলত কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় সূরা আল বাকারার ২৫৫নং আয়াত। যেটি কালামে পাকের একটি ফজিলতপূর্ণ আয়াত। হাদিস শরিফে এ আয়াতে কারিমার অনেক গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি আলোকপাত করা হলো-
কুরআনুল কারিমের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত : এই আয়াতটিকে রাসূলে আকরাম সা: কুরআনুল কারিমের শ্রেষ্ঠ আয়াত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একবার রাসূলে আকরাম সা: উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার দৃষ্টিতে কুরআনুল কারিমের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম- তথা আয়াতুল কুরসি। তারপর রাসূলুল্লাহ সা: নিজ হাত দিয়ে তাঁর বুকে মৃদু আঘাত করে বলেন, আবুল মুনজির! এই জ্ঞানের কারণে তোমাকে মোবারকবাদ। (মুসলিম-১৩৯৬)
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পর পাঠের ফজিলত : ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলে আকরাম সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে তার জান্নাতে যাওয়ার পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি-১০০, মাজমাউজ জাওয়াইদ-২/১৪৮) আরেকটি হাদিসে এসেছে, হজরত হাসান রা: বলেন, রাসূলে আকরাম সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে পরবর্তী সালাত পর্যন্ত আল্লাহর জিম্মায় থাকবে।’ (তাবারানি, কাবির ৩/৮৩, মাজমাউজ জাওয়াইদ-২১৪৮)
সকাল-সন্ধ্যায় পাঠের ফজিলত : সব প্রকার অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে হাদিসে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। হজরত উবাই ইবনে কাব রা: থেকে বর্ণিত- তার একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিলো। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন। তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিলো। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটি জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন। তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সূরা বাকারার এই আয়াতটি তথা আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম...। যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। রাসূলে আকরাম সা: বললেন, খবিস সত্য বলেছে। (সহিহ ইবনে হিব্বান-৭৮৪, মুসতাদরাকে হাকেম-২০৬৪)
উপরি উক্ত ঘটনায় রাসূল সা:-এর সমর্থনসূচক উক্তির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, বিতাড়িত শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই আয়াতের আমল কত ফলপ্রসূ। তাই আসুন সব প্রকার অনিষ্ট থেকে বাঁচতে ‘আয়াতুল কুরসিকে’ সকাল-সন্ধ্যার ওজিফা বানিয়ে নিই।
লেখক :
মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহীম
খতিব, বড় চাঁদপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদ, সরসপুর, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা