প্রকাশিত: ১২/১০/২০১৬ ৮:০৭ এএম

a-rahman_27500_1476222298নিউজ ডেস্ক::

নিউ জেএমবির অর্থনিয়ন্ত্রক আবদুর রহমানের সঙ্গে ‘উচ্চপর্যায়ের’ ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দু-একজন ‘ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা’ আছেন। আছেন চিকিৎসক ও প্রকৌশলীও। চাকরিতে বহাল আছেন, অথচ জঙ্গিদের সঙ্গেও তাদের রয়েছে নিয়মিত যোগাযোগ। আবদুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমির কাছ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। রুমির তথ্য অনুযায়ী, আবদুর রহমানের কাছে নিউ জেএমবির সমন্বয়ক তামিম আহমেদ চৌধুরীও আসত। তামিম ‘বস’ বলে ডাকত আবদুর রহমানকে। তার দেয়া চাঞ্চল্যকর তথ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দারা রীতিমতো বিস্মিত বলে জানা গেছে। তবে সন্দেহভাজন এসব কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ওপর কড়া নজর রাখছে র‌্যাব। তাদের যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

গত রোববার আশুলিয়ায় অভিযানে গ্রেফতার হয় শাহনাজ আক্তার রুমি। অভিযান চালানোর সময় পাঁচ তলার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালানোর সময় গুরুতর আহত হয়ে মারা যায় আবদুর রহমান। গ্রেফতারের পরদিন রুমিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। মামলাটি তদন্তের স্বার্থে রুমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে র‌্যাব।

জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ আক্তার রুমি র‌্যাবের গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে, উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়ন, হামলাসংক্রান্ত আলোচনা, আত্মগোপনের কলাকৌশল ও টার্গেট কিলিং নিয়ে আলোচনা করত তার স্বামী আবদুর রহমান। আর ফোনে কথা বলার সময় আবদুর রহমান ব্যবহার করত ‘কোডনেম’। এদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন ছাড়াও হামলার বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করত সে। দেশের বাইরেও উচ্চপর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। আশুলিয়ার বাসা ও সাভারে কয়েকজনের সঙ্গে আবদুর রহমানের নিয়মিত দেখা হতো।
দায়িত্বশীল এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আশুলিয়ায় যে বাড়িতে গত রোববার অভিযান চালানো হয়, সে বাড়িতে যারা আসা-যাওয়া করে এদের তালিকা পাওয়া গেছে। আবদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপে এসব ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর এবং বাসার ঠিকানা আছে। পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের এসব ব্যক্তিকে আবদুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমিও চিনত। সে নিজেও নিউ জেএমবির নারী শাখাকে চাঙ্গা করতে মাঠে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কয়েকজনের সঙ্গে ইতিমধ্যে সে যোগাযোগও করেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের মতাদর্শে বিশ্বাসী আবদুর রহমান আরও হামলার প্রস্তুতি নিতে কয়েকজন জঙ্গিকে নির্দেশ দেয়। এমনকি সে ভারতে পলাতক দুই জেএমবি কমান্ডার রিপন ও খালিদের সঙ্গে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তাদের সঙ্গে আবদুর রহমান কথাবার্তা বলে নতুন একটি অপারেশন সেলকে বড় ধরনের হামলা করতে প্রস্তুতি নিতে বলে। এ জন্য জঙ্গি কমান্ডার রিপন ভারতের কলকাতা থেকে দফায় দফায় আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল বলে জানায় রুমি।

আবদুর রহমানের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুমির তথ্য অনুযায়ী, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর কলকাতা থেকে নিউ জেএমবির কমান্ডার রিপনের একটি ফোনকল আসে। এই ফোন সে নিজেই রিসিভ করে। এ সময় আবদুর রহমান ঘুমিয়ে ছিল। রিপন ফোনে রুমির সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে বলে, ‘ভাবী আপনি দাদাকে (আবদুর রহমান) বলেন, আমি দেশে এলে ধরা খেতে পারি। তাই আসছি না। তবে তিনজনকে দাদার ফোন নম্বর দেয়া আছে। তারা ভাইবারে (অ্যাপ) ফোন দেবে।’ রুমি বলে, কলকাতার ফোনের বিষয়টি সে আবদুর রহমানকে জানায়। তার অগোচরে ফোন রিসিভ করায় আবদুর রহমান তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায় বলে রুমি উল্লেখ করে। সেই থেকে যে কারোর ফোন এলে সে আর রিসিভ করত না।

রুমি আরও জানায়, ‘প্রায়ই বাইরে থেকে সুটপ্যান্ট পরা লোকজন আশুলিয়ায় তাদের বাড়িতে আসত। তাদের অনেককেই সে চেনে। একজন নিজেকে খুব ‘বড় সরকারি কর্মকর্তা’ বলে পরিচয় দিত। লোকটি যখনই আসত আবদুর রহমান তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলত। প্রায়ই একজন ডাক্তারের ফোন আসত আবদুর রহমানের মোবাইলে। কয়েকবার ওই ডাক্তারের সঙ্গে দেখাও করে তার স্বামী। এ ডাক্তার জঙ্গিদের গোপনে চিকিৎসাসেবা দিত বলে সে জানায়। প্রাথমিকভাবে এ ডাক্তারের বিষয়ে প্রায় সব তথই পেয়েছে র‌্যাব। এ ডাক্তারের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত ডাক্তার রোকনের যোগাযোগ রয়েছে। রোকন আইএসের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছে।

জিজ্ঞাসাবাদে রুমি গোয়েন্দাদের একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছে। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার পর টিভিতে তামিম আহমেদ চৌধুরী নামে যে ব্যক্তির ছবি দেখা যায় সেও আবদুর রহমানের কাছে আসত। পরে রুমিকে তামিমের কিছু ছবি দেখিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন র‌্যাবের গোয়েন্দারা। এ সময় রুমি বলে, হ্যাঁ এই ব্যক্তিই সেই ব্যক্তি, দামি গাড়ি নিয়ে সে তাদের বাসায় আসত। গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম সম্পর্কে সে তথ্য দিয়ে জানায়, যখনই সে (তামিম) আসত আবদুর রহমানকে ‘বস’ বলে সম্বোধন করত। গোয়েন্দারা এ থেকে ধারণা করছেন, নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অপারেশনে নিহত তামিমের যে একজন ‘বস’ আছে, সেই ছিল আবদুর রহমান। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, আবদুর রহমানই ছিল নিউ জেএমবির প্রধান অর্থনিয়ন্ত্রক। হামলার আগে তার হাত থেকেই জঙ্গি কমান্ডাররা প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে মাঠপর্যায়ে বিলি করত। এসব বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে আবদুর রহমানের স্ত্রী রুমি। তিনি বলেন, আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠদের ধরতে র‌্যাবের গোয়েন্দারা অভিযান চালাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কীভাবে কার কাছে টাকা আসত- এসব লিংক নিয়ে কাজ করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর আরও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদন্ত ও অভিযানের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলার সময় আসেনি।

অপর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের অর্থনিয়ন্ত্রক আবদুর রহমানের কাছে সাকিব মাস্টার, মিজান, রাজীব, সাদ্দাম, বিপ্লব, আনসারী, সিফাত, সাজ্জাদ, গোলাম রাব্বানী ও মাসুদসহ কয়েকজন জঙ্গির প্রায়ই আসা-যাওয়া ছিল। এদের মধ্যে দু-একজন আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারিতেও আছে। আর সোহেল ও মিলন নামে দুই সহযোগীকে খোঁজা হচ্ছে। এ দু’জন ছিল নিউ জেএমবির অর্থনিয়ন্ত্রক আবদুর রহমানের গোপন বার্তাবাহক।

পাঠকের মতামত

যে কারনে মামলার মুখে পড়তে পারে ইউনিয়ন ব্যাংক

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ‘নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্ট’ এ মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ...

রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থাতে প্রবেশ করতে দেব না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা রোহিঙ্গাদের কোনো অবস্থাতে প্রবেশ করতে দেব না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) ...