সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
আ.লীগ নেতাকে ‘বাঁচাতে’ বিএনপি নেতাকে বলির পাঁঠা!
প্রকাশিত - আগস্ট ২৬, ২০১৬ ৯:৫০ এএম
বাগমারা উপজেলার চাঞ্চল্যকর মা-ছেলে হত্যা মামলা থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ‘বাঁচাতে’ বিএনপির এক নেতাকে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীর ‘চরিত্রে’ আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাসুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দ্বীপনগর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক এনামুল হককে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এনামুল হক বাগমারার আকলিমা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে জাহিদ হাসান (২৫) হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। কিন্তু এর আগে বলা হয়েছিল, এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেউলা রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন। দৃশ্যপটে এনামুল হককে আনার পর এখন আবুল হোসেনের আর কোনো ভূমিকাই পাওয়া যাচ্ছে না এই হত্যাকান্ডের।
২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদলি করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা। বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রাজশাহীর উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল মামলাটি তদন্ত করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতা এনামুল হক ছাড়াও মনিরুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল্লাহ আল কাফি, রুহুল আমিন, রুস্তম আলী, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব ও রহমত আলী নামের আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মনিরুল, কাফী, আবদুর রাজ্জাক, রহমত ও হাবিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে ভাড়াটে খুনি মনিরুল, কাফি ও রাজ্জাক তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হোসেন মাস্টার এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের জোগানদাতা। আবুল হোসেন সম্পর্কে নিহত আকলিমা বেগমের দেবর। তবে তিনি কেন তাকে হত্যা করিয়েছেন, তা তারা জানেন না। তাদের এই স্বীকারোক্তির পর থেকে আবুল হোসেন ‘পলাতক’।
তবে পিবিআইর রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) হুমায়ুন কবীর দাবি করেন, এই হত্যাকান্ডে আপাতত আবুল হোসেনের কোনো ভূমিকা দেখছেন না তারা। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা এনামুল হক নিজেকে আবুল হোসেন মাস্টার পরিচয় দিয়ে খুনিদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। হত্যাকান্ডের সময় তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন ঘটনাস্থলে। গত ১৪ আগস্ট তাকে গ্রেপ্তারের পর এ মামলায় গ্রেপ্তার আরেক আসামি হাবিব তাকে শনাক্ত করেন।
ভাড়াটে খুনি হাবিবকে উদ্ধৃত করে এএসপি বলেন, ‘এনামুল হক মাদকসেবন করেন। আর রহমত আলী মাদক বিক্রি করেন। এনামুল প্রথমে রহমতের কাছে আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান। রহমত তখন ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় এনামুল নিজেকে আবুল মাস্টার পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন।’
তবে এএসপির এমন বক্তব্য নাকচ করেন বাদীপক্ষ। তাদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হোসেনকে বাঁচাতে বিএনপি নেতা এনামুল হককে ‘বলির পাঁঠা’ করা হচ্ছে। এ জন্য মামলার প্রাথমিক তদন্তে আবুল হোসেনের নাম এলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল। তিনি বলেন, ‘মামলার মোড় যখন-তখন ঘুরে যেতে পারে। আমরা আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতেই কাজ করছি।’
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এ হত্যাকান্ডের কারা জড়িত তা বের করা হয়েছে। তবে হত্যাকান্ডের কারণ এখনো উদঘাটন করা যায়নি। এনামুল হককে রিমান্ডে নিয়েও স্বীকারোক্তি আদায় করা যায়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। অভিযোগপত্রে আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হোসেনের নাম না থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে নানাভাবে চেষ্টা করেও আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করতে গত বছরের শেষের দিকে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু তিনি তখন কৌশলে পালিয়ে যান। এরপর থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে আওয়ামী লীগের এই নেতা। নিজের ব্যক্তিগত মুঠোফোনের নম্বরটিও বন্ধ করে রাখেন।
এদিকে দেউলা রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন স্কুলে যান না, তবে বেতন নিচ্ছেন নিয়মিত। হাজিরা খাতাতেও তার উপস্থিতি শতভাগ!
(ঢাকাটাইমস/
Copyright © 2024 UkhiyaNews.Com. All rights reserved.