নিয়ন্ত্রণ ও নিবন্ধন ছাড়াই দেশে পরিচালিত হচ্ছে বিদেশী কারিকুলামের অনুকরণে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলো। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষিত হচ্ছে এ কারিকুলামে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দেশে এ ধরনের কতটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে, এ সব স্কুলে কী শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, শিক্ষার্থীর সংখ্যাইবা কত কিছুই জানা নেই সরকারের। বিদেশী পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হলেও এগুলো দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-কৃষ্টি-কালচারের সাথে সংঘর্ষিক কি না তার কোনো নজরদারি নেই এ সব প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়াও হরহামেশা অভিযোগ রয়েছে, লাগামহীন ফি নির্ধারণ, বছর বছর সেশন ফি বাড়িয়ে রমরমা বাণিজ্য চালাচ্ছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগীদের অব্যাহত দাবি এবং উচ্চাদালতের নির্দেশনার আলোকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের লাগাম টানতে সম্প্রতি ‘বিদেশী কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৭’ নামে একটি একটি বিধিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এখন থেকে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল পরিচালনায় নিবন্ধন নিতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে। বিধিমালায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, শিক্ষার গুণগতমান এবং অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করতে পারবে। তবে টিউশন ফি, ভর্তি ফি, সেশন চার্জ ও অন্যান্য ফি বছরে ১০ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না। ভর্তি নবায়ন বা পুনঃভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের থেকে অনুদান বা কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না। প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য ছাত্র ও শিক্ষক অনুপাত হবে ১৫:১; নি¤œ মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলে ২৫:১, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য ৩০:১। প্রত্যেক বেসরকারি স্কুলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত অথবা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাক্রম অনুসরণ করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যহীন এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরোধী পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।
শিশুবান্ধব পরিবেশ, ইনডোর ও আউটডোর খেলাধুলার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান, কক্ষ বা মাঠের ব্যবস্থাসহ শরীরচর্চা, বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড উদযাপন ও পরিচালনা, নৈতিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ বিষয়ক বিশেষ শিক্ষা, বইমেলা, বৃক্ষরোপণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক স্কুলকে প্রতিবন্ধীবান্ধব হতে হবে। প্রত্যেক স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা অনুসরণে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনীর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। গ্রন্থাগারে কমপক্ষে ১ হাজার বই থাকতে হবে।
মেট্রোপলিটন এলাকায় প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুল এবং নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য ১০ কাঠা জমি থাকতে হবে। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলে থাকতে হবে সাড়ে ১৬ কাঠা জমি। মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য ২২ কাঠা জমি থাকতে হবে। পৌর এলাকায় নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুল এবং উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য ৩০ কাঠা জমি থাকতে হবে। পল্লী এলাকায় নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলে ৩৩ কাঠা এবং উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান স্কুলে ৫০ কাঠা জমি থাকতে হবে।
শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য বিষয়ে সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের আগে বহুল প্রচারিত অন্যূন দুইটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে। স্কুলে ব্যবস্থাপনা কমিটি, তহবিল, শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক, গ্রন্থাগার, নিরাপত্তাব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেট, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে বিধিমালায় কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বেসরকারি স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রত্যেক বেসরকারি স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি থাকবে। সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে নির্বাচিত দুইজন প্রতিনিধি, যার মধ্যে অন্যূন একজন মহিলা হবেন; অভিভাবকদের মধ্যে নির্বাচিত দুইজন প্রতিনিধি, যার মধ্যে অন্যূন একজন মহিলা হবেন; উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে নির্বাচিত বা মনোনীত ছয়জন প্রতিনিধি থাকবেন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষ পদাধিকার বলে সদস্যসচিব হবেন। এই ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ হবে দুই বছর।
ম্যানেজিং কমিটি বেসরকারি স্কুলের জন্য সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ, বেতন-ভাতাদি নির্ধারণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিবে; এই বিধি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, সেশন চার্জ ও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করবে, স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং স্কুলের অবকাঠামো, শিক্ষার মান ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ সম্পাদন করবে।
স্থায়ী আমানত হিসেবে মেট্রোপলিটন এলাকায় প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য তিন লাখ টাকা, নি¤œ মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য চার লাখ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য পাঁচ লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। জেলা সদর এলাকায় প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য আড়াই লাখ টাকা, নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য তিন লাখ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য চার লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখতে হবে। জেলা সদরের বাইরে প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য দুই লাখ টাকা, নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য দুই লাখ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য তিন লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখতে হবে।
সাধারণ তহবিলে মেট্রোপলিটন এলাকায় প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য এক লাখ টাকা, নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য দেড় লাখ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য দুই লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। জেলা সদর এলাকায় প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য ৭৫ হাজার টাকা, নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য ৭৫ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য দেড় লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখতে হবে। জেলা সদরের বাইরে প্লে-গ্র“প, নার্সারি, কিন্ডারগার্টেন বা প্রাথমিক স্কুলের জন্য ৫০ হাজার টাকা, নিম্ন-মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বা সমমানের স্কুলের জন্য ৭৫ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক বা সমমান স্কুলের জন্য এক লাখ টাকা তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখতে হবে।