বিশেষ প্রতিবেদক
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ইউপি সদস্য দ্বারা বৃদ্ধ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আনসার কমান্ডার নির্যাতনের জের ধরে ফোঁসে উঠছেন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও যুব-সমাজসহ সর্বস্তরের জনতা। যে যার অবস্থান থেকে আনসার কমান্ডার নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে ইউপি সদস্য আবু বক্করের শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে ঝড় বয়ে তুলছেন সেন্টমার্টিনের সর্বমহল। এছাড়াও আনসার কমান্ডার নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে সেন্টমার্টিন স্টুডেন্টস ফোরাম ও সেন্টমার্টিন আদর্শ সংসদ যৌথভাবে শুক্রবার সকালে সেন্টমার্টিন বি এন হাই স্কুলের শ্রেনী কক্ষে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। এতে সংঘটনের নেতৃবৃন্দগণ ইউপি সদস্য আবু বক্করকে সন্ত্রাসী উল্লেখ করে অবিলম্বে গ্রেফতার – পূর্বক শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায়, মানববন্ধন থেকে শুরু করে আরোও কঠিন কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারী দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকে আনসার কমান্ডার নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে সেন্টমার্টিন স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি তৈয়ব উল্লাহ লিখেছেন,
“বিচার করুন, না হয় পদত্যাগ করুনঃ
কিছু হিংস্র হায়েনার কারণে শান্তি প্রিয় দ্বীপবাসীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে! প্রতিনিয়ত তাদের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছে দ্বীপের গরীব, নিরহ ও অসহায় মানুষগুলো। এই নরপশুদের বিচার কেউ করে না, এমনকি ভয়ে কেউ সামান্য প্রতিবাদও করে না, যত্তসব রাবণ ভক্ত!
আমাদের অহংকার, সমুদ্রস্বর্গ এই দ্বীপের যতসব দুর্নাম তারাই খুঁড়িয়েছে, আর নষ্ট করেছে দ্বীপের তিনশত বছরের শান্তি, সুনাম, ইতিহাস ও ঐতিহ্য! এমন কোন অপকর্ম নাই তারা করেনি! দ্বীপের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধা (হাজী আব্দুসছালাম) ও তাঁর পরিবারবর্গকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ভরা বাজারে অপমান করেছে! দেশের অহংকার সশস্ত্র বাহিনী কে(নৌবাহিনী) লাঞ্ছিত করে, দ্বীপের আশীর্বাদ কোটা (নৌবাহিনী) বন্ধ করিয়েছে! ফলে দ্বীপের গরীব, অসহায় ও মেধাবী ছাত্রদের সরকারী চাকরীর আশা হয়েছে সোনার হরিণ! দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা করেছে রক্তাক্ত। নির্বাচিত ইউপি সদস্যকে বিচার করতে না দিয়ে উল্টা আসামি বানিয়ে লাঞ্ছিত করেছে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরেই! ক্রীড়া প্রেমী ও বিনোদন বিলাসী মানুষের আনন্দ, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ও বিনোদন যজ্ঞ “চেয়ারম্যান গোল্ড কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট” বানচাল করে দিয়েছে একনিমিষেই! বংশ মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার নাম দিয়ে পবিত্র দ্বীপকে মারামারি আর রক্তাক্ত করেছে হাজারবার! পরিবেশ আইনে নিষিদ্ধ থাকায়, নামে-বেনামে কাগজ-পত্র তোলে রট, বালি, সিমেন্ট ইত্যাদি এনে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তুলে দিয়েছে বেনিয়াদের হাতে! টেন্ডার বাজি করে, বহিরাগতদের জমির দেওয়াল করতে গিয়ে দ্বীপের অন্যতম গঠন উপাদান পাথর প্রাকৃতিক অবস্থা থেকে সরিয়ে ধ্বংস করেদিয়েছে দ্বীপের গঠন, নষ্ট করেছে পরিবেশের ভারসম্য, হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে প্রিয় জন্মভূমিকে! মাদক, চোরাচালান ও ভূমি দখল সবকটিতেই তাদের আদিপত্য! তাদের অপকর্মের খাতায় আজ যোগ হল, আরো একটি কুকর্ম! বন্ধু হেলাল মারফত জানলাম, দ্বীপ ও দেশের অহংকার, জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত আনসার কমান্ডার মাননীয় কবির আহাম্মদকে লাঞ্ছিত ও মারধর করেছে ঐ কাপুরুষের দল। জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত আশির উর্ধ বয়সী বৃদ্ধকে লাঞ্ছিত ও মারধরের তীব্র নিন্দা ও দীক্ষার জানায়। অনতিবিলম্বে এর বিচার চাই।।
মাননীয় পরিষদ, আপনারা বিচার করুন, না হয় পদত্যাগ করুন! আল্লাহ্র দোহায় সহজ, সরল, গরীব, অসহায় দ্বীপবাসীকে একটু পরিত্রাণ দিন, একটু শান্তি দিন, একটু মুক্তি দিন!
প্রিয় দ্বীপবাসী, সব জেনেশুনে চুপ করে থাকেন কেন? এতকিছুর পরও তারা কেমনে সমাজে ঠিকে আছে? টাকার জোরে না বাহুর বলে? এইভাবে আর কত দিন চলবে?? অনন্তকালতু আর এইভাবে চলতে পারে না!”
কমান্ডার নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে সেন্টমার্টিন ইউপি মেম্বার হাবিব খাঁন তার ফেইজবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন,
“আমি জেনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। দ্বীপের গৌরবকে কেমনে এভাবে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়”।
সেন্টমার্টিন ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ লিখেছেন, “অবিলম্বে সন্ত্রাসী বক্করের বিচার চাই”।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইদ্রিস খাঁন মুরাদ লিখেছেন, “মনে পড়ে গেল – যে সমাজে গুণী লোকের কদর নেই, সেই সমাজে গুণী সন্তানের জন্ম হয়না “। সেন্টমার্টিন আদর্শ সংসদের সভাপতি সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন সাগর লিখেছেন, ” একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ লোক কি এমন অপরাধ করল তাকে বেধড়ক মারতে হবে!
আজ যদি আমরা নিরব থাকি ৮০ বছরের বৃদ্ধ আনসার কমান্ডার কবির আহমদের উপর চালিত অত্যাচার কাল আমার বা আপনার সবচেয়ে কাছের মুরব্বী উপর বর্তাবেই”। সেন্টমার্টিন বিডি নিউজের সম্পাদক এম কেফায়েত উল্লাহ লিখেছেন, ” জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত আনসার ভিডিপি সেন্টমার্টিন কমান্ডার কবির আহমদ (বয়স ৮০) সাহেব কে ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আবু বক্কর বিনা কারণে বেড়ধক মারধর করে আহত করায় তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি”।
এই বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ আব্দুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার বলেন, ইউএনও ফোন দিয়েছিল বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কেন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ীর এ এস আই বলেন, আনসার কমান্ডারকে নির্যাতনের বিষয় আমি লোকমুখে শুনেছি। বিভিন্ন মহল থেকে ইউপি সদস্য আবু বক্করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আসার পরও কেন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেননা জানতে চাইলে এ এস আই এটি উপরের সিদ্ধান্ত বলে নিজ দায়িত্ব এড়িয়ে যান।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবু বক্করের সাথে যোগাযোগ করা তিনি বলেন মুরব্বীকে সামান্য একটি ‘থাপ্পড়’ দিয়েছি মাত্র।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি চার দিন পর আটক পণ্যবোঝাই কার্গো জাহাজ ...
পাঠকের মতামত