কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ইনানীতে (রয়েল টিউলিপের সামনে) আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২ এর জন্য নির্মিত জেটি থেকে চলবে ব্যক্তি মালিকানাধীন জাহাজ।ইতোমধ্যে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামক একটি জাহাজ রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে সেন্টমার্টিনের নৌ-রুটে চালাচলের ঘোষণা এসেছে। সেটি বিভিন্ন ট্যুর প্রতিষ্ঠান প্রচার করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে, সমুদ্রসৈকত দ্বিখণ্ডিত করে তৈরি জেটির বিরুদ্ধে শুরু থেকে প্রতিবাদ করে আসছিল বাপাসহ বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন। প্রতিবাদের মাঝেও উদ্বোধন হওয়া ওই জেটি কেন অপসারণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম (বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি) ও সোহরাওয়ার্দীর দ্বৈত বেঞ্চে দায়েরকৃত ১০৪৩৭/২২ নং রিটে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালককে বিবাদী করা হয়। তাদের নিকট থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব চায় আদালত।
উচ্চআদালতের এই আদেশ সত্বেও কিভাবে জাহাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তা প্রশ্ন সবার।
এদিকে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত দ্বিখণ্ডিত করে ইনানী বিচে তৈরি করা জেটি অপসারণের পরিবর্তে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলের ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
২৯ ডিসেম্বর সংগঠনটির (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মহামান্য হাইকোর্টে রিট পেন্ডিং থাকার পরও ইনানী’র জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া বড় অপরাধমূলক পদক্ষেপ ও সর্ব্বোচ্চ আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল।
বাপা নেতারা জানান, সৈকতের তলদেশে যে ভূগর্ভের কাঠামো তা আর কোন দেশের মতো নয়। সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে এটির তলদেশের কাঠামো হিমালয়ের পাদদেশের ধারাবাহিক থরেথরে সাজানো প্লেটের মতো। তাই এটির উপর আঘাত করলে নীচের কম্পনটা বেশি অংশজুড়ে প্রকম্পিত হবে। ভাঙ্গণ ত্বরান্বিত করবে। জেটি ইজারা বাতিল না করলে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিবে বাপা।
ইনানী জেটিঘাট কাউকে ব্যবহার করতে না দিতে প্রশাসন ও নৌ-বাহিনীর ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এইচএম এরশাদ, সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম নজরুল। পাশাপাশি নৌ-মহড়ার জন্য নির্মিত জেটিটি কর্ণফুলি এক্সপ্রেসকে সেন্টমার্টিনের যাত্রী উঠানামা করতে না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
বাপা সভাপতি সাংবাদিক এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ নেভি কর্তৃক নির্মিত ইনানী জেটি ঘাটটি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বাপা’র মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন, জেলা সহসভাপতি সাংবাদিক এম আর খোকন, জাফর আলম দিদার, স ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়ন আহবায়ক মুক্তাদির জয়, গ্রীন ভয়েসের জেলা কমিটির সভাপতি শহীদুল ইসলাম সাহেদ, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আনোয়ার, এস এম রুবেল, জাহেদ হোসেন, শহর বাপার সভাপতি কফিল উদ্দিন, সংগঠনিক সম্পাদক উসেন থুয়েন, যুব ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা চৌধুরী জোসেন, যুগ্ম সম্পাদক কল্লোল দে, মাটিন টিন চৌধুরী।
তবে, জেটির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বিরোধী মন্তব্য করেছেন কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নিরুত্তাপ আন্দোলন নিশ্চয়ই ব্যক্তি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া অন্য কিছু নয়। ইনানী জেটি দিয়ে জাহাজ চলাচল করলে পরিবেশের কি ধরণের ক্ষতি হবে, সেটার গবেষণা ও লিখিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চান কর্ণফুলির ওই কর্মকর্তা।