প্রকাশিত: ১৫/০৯/২০১৬ ৮:৫৯ পিএম
Digital Camera

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া ::
টানা ৬ দিনের ছুটিতে কক্সবাজারের উখিয়ার পর্যটন নগরী ইনানীর সী-বীচে দেশী বিদেশী পর্যটকদের ভীড় বেড়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমূদ্র সৈকতের লীলা ভূমি ইনানী সী-বীচ যেন পর্যটকদের ভ্রমনে অভিন্ন আনন্দ এনে দেয়। ইনানী বিচে বিস্তৃর্ন এলাকা জুড়ে প্রকৃতি নিজ খেয়ালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে অসংখ্য কোরাল। এসব কোরালের রহস্যময়ী অবস্থান অবলোকন করতে এই বীচে কিছুটা সময় কাটাতে দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটক চলে আসে। ইনানী বিচের অদুরেই রয়েছে আরো মন মাতানো প্রশান্তির পাটুয়ারটেক সী-বীচ। পাটুয়ারটেক সী-বিচের একটু পূর্বে পাহাড়ের নিচে রহস্যময়ী কানা রাজার গুহা। কানা রাজার গুহার পাশেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ফইল্লা চাকমার মাচাং ঘর দেখতে আনন্দ লাগে। পশ্চিমে বিস্তৃর্ণ নান্দনিক সমুদ্রের ঢেউ পূর্বে উচু পাহাড় তার মাঝেই ইনানী সী-বীচ।

পৃথিবীর দীর্ঘতম বেলাভূমি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ বীচের উখিয়ার ইনানী সী-বিচ দেখতে ও সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে সাধারণ দর্শনার্থীদের চেয়ে রাজধানী সহ দূরদুরান্ত থেকে আসা ভিআইপি ট্যুরিষ্টদের পদচারনায় মূখরিত হয়ে উঠেছে। এক সময় ইনানী সী-বীচের জলরাশি ও ঢেউয়ের নৃত্য, প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করে সময় কাটাতেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর থেকেই এই বীচের গুরুত্ব এবং আকর্ষন বেড়েই চলছে। সাধারন পর্যটকরা  কক্সবাজার শহর সংলগ্ন বীচ ভ্রমন করে তাদের নিজ আবাস স্থলে ফিরে নিজেকে গর্বিত মনে করে বলে একাধিক পর্যটকরা উৎফুল্ল মনে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন>> ইনানী সৈকতে নারী পর্যটক নিখোঁজ

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশী-বিদেশী পর্যটকরা কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনের চেয়ে ইনানী বিচে অবকাশ যাপন ও দর্শনে অধিকতর সময় ব্যয় করতে চাইলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা ও আবাসিক হোটেল-মোটেল না থাকায় তাদেরকে কক্সবাজারে ফিরে যেতে হয় বলে জানালেন সিলেট থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সাদেকুর রহমান ও নিলুফা রহমান। তারা বলেন, ইনানী বীচে কক্সবাজার বীচের চেয়ে স্বচ্ছ নীলাব পানি, অসংখ্য কোরালের ছড়াছড়ি, সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য ও সমুদ্র ঘেষা পাহাড়। যার কারণে  পর্যটকরা বেশি আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ভ্রমনে আসা পর্যটক সঞ্জয় দাশ, ফেনী থেকে আসা পর্যটক মোর্শেদুল হক, রাজশাহী থেকে আসা দম্পতি শাহ মোয়াজ্জেম ও শাকিলা ইয়াছমিন, চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার প্রফেসর নুর মোহাম্মদ সহ আরও একাধিক পর্যটক ইনানী সী-বীচ ঘুরে খুশি মনে  উখিয়া নিউজ ডটকমকে জানান, পবিত্র ঈদ আযহার আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি। ইনানী সী-বীচ তথা কক্সবাজারের মনোরম পরিবেশ দেখে খুব ভালই লেগেছে। আমরা আগে শুনেছিলাম ইনানী সী-বীচে সূর্যাস্তের কথা কিন্তু বাস্তবে দেখে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। তারা বলেন, সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল, প্রবাল পাথরে বসে ছবি করছি। ইনানী বিচের পূর্নাঙ্গ রূপ দেখতে পর্যটকদের কিছু সময় হাতে নিয়ে আসতে হলেও ভাটার সময় এই বিচের পানি যেমন নীলাব দেখায়, তেমনি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোরাল পাথুরের উপর ছোটাছুটি স্মৃতির মানসপটে ফটোসেশন করা, সূর্যাস্ত দর্শন আরও কত কিচ্ছু মনকে আন্দোলিত করে তোলে। আবার জোয়ারের সময় থেকে কিছুক্ষন অবস্থান কালে জোয়ারের স্বচ্ছ পানিতে ঢেউয়ের আছড়ে ক্রমেই ছড়িছিটিয়ে থাকা অসংখ্য কোরালের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, ইনানীর বড় ও ছোট খালে জোয়ারের পানিতে টুইটুম্বর হওয়া, খালে মাছ ধরার নৌকা ও ফিশিং বোটের নড়াচড়া, ইনানীর পাশেই সবুজ-শ্যামল গ্রামের চিরাচরিত চিত্র, পাহাড়ের সবুজ গাছ-গাছালি, বীচের লাল কাঁকড়াদের হুড়োহুড়ি, সাগরে জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য দেখতে ভাল লাগে। ইনানীতে তারকা মানের আবাসিক হোটেল, বনবিভাগের রেষ্ট হাউস, ব্যক্তিমালিকানাধীন কয়েকটি কটেজ আছে তবে তা পূর্ব থেকে বুকিং করে না আসলে হয়ত ইনানীতে রাত যাপনের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়।

ইনানী সী-বিচে দেশের যেকোন এলাকা থেকে যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা আছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের যেকোন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারের সরাসরি বিলাস বহুল গ্রীন লাইন, সৌদিয়া-এস আলম লাক্সারী, সোহাগ, শ্যামলী, সেন্টমাটিন সার্ভিস সহ বেশ কিছু পরিবহন সার্ভিসে কক্সবাজার আসা যায়। মেরিন ড্রাইভ রোড ছাড়াও কক্সবাজার শহরে প্রবেশের পূর্বে লিংরোড হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার কোট বাজার রাস্তা হয়ে ইনানী যাতায়াত করা যায়। উভয় রোড দিয়ে ইনানী পৌঁছতে প্রায় ঘন্টা খানেক সময় লাগে। প্রাইভেট গাড়ী হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এ স্থান দিয়ে ইনানী যাতায়াত সহজ ও সুবিধা হয়। আবার মেরিন ড্র্রাইভ রোড় দিয়ে ইনানী যাতায়াতকারীদের বেশি ভাল লাগতে পারে, কেননা একদিকে বিশাল সাগরের জলরাশি, বেলাভূমি অপরদিকে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে ছোট ছোট শ্যামল গ্রামের বিচিত্র দৃশ্য। সারাদিন ভ্রমন করে রাত যাপন করতে না চাইলেও তেমন বিড়ম্বনা নেই, রাত যতই হউক না কেন কক্সবাজার শহরে ফেরা অতি সহজ। কক্সবাজার শহরে যেকোন মানের ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেল, রেষ্টহাউসে থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। ইনানী বিচে স্থানীয় লোকদের পাশাপাশি টুরিষ্ট পুলিশের সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা ও সহযোগীতার কারণে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা নির্ভয়ে ভ্রমন করতে পেরে তাদের ভ্রমন স্মৃতিময় হয়ে উঠে। ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ও টুরিষ্ট পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন বলেন, দেশীয় ও বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের পাশাপাশি টুরিষ্ট পুলিশ, বীচকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...