সুজাউদ্দিন রুবেল::
ইন্টারনেট সংযোগ পেতে ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী দুর্গম পাহাড়ের ঢালে যান হেড মাঝি আবু তালেব ও সাব মাঝি সৈয়দ হোসেন। কিন্তু এ সুযোগে তাদের দুজনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুষ্কৃতকারীরা।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) মধ্যরাতে পালংখালী ইউনিয়নের ১৫ নম্বর জামতলী ক্যাম্পের সি-ব্লকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে না পারলেও ক্যাম্পে ব্লক অভিযান অব্যাহত রেখেছে এপিবিএন।
রোহিঙ্গাদের হাতে ভারী অস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের।
প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা আছিয়া বেগম বলেন, মোবাইলে ইন্টারনেট পেতে দুর্গম পাহাড়ের ঢালে অবস্থান করছিলেন ক্যাম্প ১৫ সি-ব্লকের হেড মাঝি আবু তালেব ও সাব ব্লকের মাঝি সৈয়দ হোসেন। কিন্তু ওত পেতে থাকা দুষ্কৃতকারীরা দুজনকে গলায় ও বুকে গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে চিৎকার দিলে পার্শ্ববর্তী শেড থেকে ছুটে যান আছিয়া বেগম।
এপিবিএন জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাতে সি-ব্লকের পাহাড়ি ঢালে এক ঘরের সামনে ৮-১০ জন অস্ত্রধারী এসে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময় সেখানে থাকা তালেব ও হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সেখানে হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। তালেবকে সেখান থেকে কুতুপালংয়ের এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছার পর তাকেও মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
পরে বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
আবুল তালেবের ছোট ভাই আবুল কালাম বলেন, প্রতিটি ব্লকে নিরাপত্তার জন্য এখন রাতে পাহারা দেয় রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গার তালিকা ক্যাম্প ইনচার্জসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠাতে হয়। তাই ক্যাম্প ১৫-এর সি-ব্লকে যেকোনো স্থানে মোবাইলে ইন্টারনেট না পেয়ে হেড মাঝি আবু তালেব ও সাব মাঝি সৈয়দ হোসেন দুজন সি-৯ ব্লকের দুর্গম পাহাড়ের ঢালে যায়। ওই সময় তাদের দুজনকে গুলি করে পালিয়ে যায় বেশ কয়েকজন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সৈয়দ হোসেন আগেই মারা যায় এবং আবু তালেব জীবিত ছিল।
আবুল কালাম বলেন, ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য আগেই অনেক রোহিঙ্গা আটক হয়েছিল। তারা এখন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। আবু তালেব মারা যাওয়ার আগে তাদের যারা গুলি করেছে, এমন দুজনের নাম বলে গেছে। জাহেদ আলম ও মাহামুদুল হাসান নামে দুজনকে আবু তালেব চিনেছে বলে জানায়। তারা দুজনই আল ইয়াকিনের সদস্য বলেও জানান আবুল কালাম।
হাসপাতালে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাব মাঝি বলেন, ‘ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিয়ে রাতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গারাই ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য টহল দিচ্ছে। এটার জন্য হেড মাঝি ও সাব মাঝি দায়িত্ব পালন করছে এবং ক্যাম্পে অপরাধও কমছে। তাই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা এসব পছন্দ করছে না। তাই আমাদের টার্গেট করছে।’
উখিয়ার ৮ এপিবিএন-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকজন রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারীর সঙ্গে তালেব ও হোসেনের বিরোধ ছিল। সেই শত্রুতার জেরে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তবে ঘটনার পরপরই ক্যাম্পের ব্লকে অভিযান চলছে।
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মে শঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। আর রোহিঙ্গাদের হাতে ভারী অস্ত্র দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩২টি আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আর স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছে আরও ৫ লাখের মতো। সুত্র: সময় টিভি