এম রবিউল্লাহ: বাংলাদেশের এক আলেম সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় নিরপেক্ষ ব্লগারদের হত্যাকা- প্রতিরোধ করতে ফতোয়া জারির উদ্যোগ নিয়েছেন। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদ রোধ করতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। জঙ্গিরা গত তিন বছরে বাংলাদেশে টার্গেট করে হিন্দু, খ্রিষ্টান, সুফি মুসলিম, অধিকার কর্মী ও বিদেশিসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। অধিকাংশ হত্যাকা- সংগঠিত করা হয়েছে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে।
জঙ্গিবাদ রোধ করতে বাংলাদেশ উলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের সভাপতি ফরিদউদ্দিন মাসউদ উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি আলেমের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন ফতোয়াটির সমর্থনে। আগামী ১৮ জুন জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে লাখো আলেমের স্বাক্ষরিত ফতোয়াটি। ফতোয়ায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে অমুসলিম, সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় নিরপেক্ষদের হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। মানুষ হত্যা করা অবৈধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধ বলে ফরিদ উদ্দিন মাসউদ জানান।
গত সপ্তায় ধান ক্ষেতে একজন বৃদ্ধ হিন্দুকে হত্যা করে রাখা হয়। অপর এক হিন্দু আশ্রম কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া গির্জার কাছেই আরোও একজন খ্রিষ্টানকে হত্যা করে চরমপন্থিরা। আইএস ও আল কায়দার দক্ষিণ এশিয়ার শাখা বাংলাদেশের অধিকাংশ হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছে। তবে বাংলাদেশ সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আইএস বা আল কায়দার অস্তিত্ব নেই বলে বলা হচ্ছে।
ফতোয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে পুলিশের অভিযানে ৩ হাজার ১১৫ জনকে গ্রেফতারের পরে। জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রম প্রতিরোধ করতে চার দিনে পুলিশের অভিযানে মোট ১১ হাজার ৩০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে কর্র্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিক হত্যাকা- প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় তীব্র সমালোচনার সম্মুখীণ হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রতিটি হত্যা ও হত্যাকারীকে’ ধরার ঘোষণা দেন গত সপ্তায়।
এদিকে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনীতি পক্ষ বিএনপি অভিযোগ করেছে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ২ হাজার ১০০ জন বিএনপির কর্মী। রাজনৈতিক রোষানল থেকে তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশই কোনোভাবেই জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। পুলিশের আইজিপি একেএম শহিদুল হক এএফপিকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৪৫ জন জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।
পুলিশ আরো জানায়, বাংলাদেশের স্থানীয় দুইটি জঙ্গি সংস্থার দুইজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও অপরটি জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। সাম্প্রতিক অধিকাংশ হত্যাকা-ের সঙ্গে এই দুইটি স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জড়িত বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অধিকাংশ নেতা উচ্চ শিক্ষিত ও অত্যাধুনিক। গ্রেফতার অভিযান এসেছে ৫ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি। যারা গুলি করে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে হত্যা করেছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জঙ্গিদের প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছিলেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা জেএমবির বিরুদ্ধে হাই প্রোফাইলের অভিযান পরিচালনা করেছেন।
আলেম ফরিদ উদ্দিন মাসউদ জানান, পুলিশের অভিযান খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে আলেমদের ফতোয়াও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে জঙ্গি দমনে। ফতোয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে হত্যাকা- কোনো জিহাদের অংশ হতে পারে না। মানুষ হত্যা স্পষ্ট সন্ত্রাসী কর্মকা-।