ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান নামাজ। নামাজে সবাইকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন মসজিদের ইমাম। মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইমাম। ইমাম শব্দের অর্থ পথপ্রদর্শক, নেতা ও পরিচালক। ইমাম শুধু মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন বরং মুসলিম সমাজেরও নেতা তিনি। ইমামতি ছাড়াও মুসলমানদের যাবতীয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
ইসলামের প্রথম ইমাম আল্লাহর রাসুল সা.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন ইসলামের প্রথম ইমাম। তাঁর পরে খোলাফায়ে রাশেদিন ইমামতির গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইমাম হলেন (সালাতের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৭)
ইমামকে সর্বোচ্চ সম্মান
ইমাম কোনও দিন মজুর কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নন, ইমাম-মুয়াজ্জিন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তারা সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা মানুষের স্তরভেদ অনুপাতে তাদের সম্মান দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৪২)
ADVERTISEMENT
পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী
ইমামদের সম্পর্কে এক হাদিসে হজরত উকবা ইবনে আমের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সঠিক সময়ে লোকদের নিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেছে, এ জন্য সে (ইমাম) নিজে ও মুকতাদিরাও পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে।
অপরপক্ষে যদি কোনো সময় ইমাম সঠিক সময়ে নামাজ আদায় না করে তবে এজন্য সে দায়ী হবে; কিন্তু মুকতাদিরা পরিপূর্ণ সওয়াবের অধিকারী হবে। -(আবু দাউদ : ৫৮০, ইবনু মাজাহ, ৯৩৬, আহমাদ৪/১৪৫, ২০১)
ইমামদের জন্য আল্লাহর রাসুলের দোয়া
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, হে আল্লাহ! তুমি ইমামদের সঠিক পথ দেখাও। এর অর্থ, ‘ইলমের ব্যাপারে সঠিক পথ দেখাও। আর তার ‘ইলমের মধ্যে শরিয়তে মাসআলা মাসায়েলের সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, হে আল্লাহ! তুমি মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা কর। -(তিরমিজি : ২০৭, মিশকাত, ৬৬৩, আবু দাউদ, ৫৩০)
সবার আগে ইমামের অবস্থান
জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম সবার আগে দাঁড়াবেন। অর্থাৎ ইমামের কাতার সবার কাতারের আগে হবে। ইমামের আগে কেউ দাঁড়াতে পারবে না। ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘মূলনীতি হলো ইমাম মুক্তাদিদের আগে থাকবেন।’ (ফাতহুল বারি : ২/৩৯১),
হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব (প্রসিদ্ধ অভিমত) অনুযায়ী, ইমামের আগে কেউ দাঁড়ালে তার নামাজ হবে না। (ইসলামওয়েব ডটনেট, ফাতাওয়া নম্বর : ৩৩৯৯৩)
ইমামের অনুমতির জন্য অপেক্ষা
নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে ইমামকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যে তাঁর অনুমতিক্রমে ইকামত দিতে হবে। আলী (রা.) বলেন, ‘মুয়াজ্জিন আজানের মালিক আর ইমাম ইকামতের মালিক।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৪১৭১; তিরমিজি, হাদিস : ২০২),
তবে ইমাম যদি কিছু না বলে ইকামতের অপেক্ষা করেন, তাহলে সে ক্ষেত্রেও ইকামত দেওয়া যাবে। কেননা চুপ থাকা ইমামের অনুমতি হিসেবে গণ্য হবে। (বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ : ৩/৮০)
সব কাজে ইমামের অনুসরণ জরুরি
জামাতে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে সব কাজে ইমামের অনুসরণ করতে হবে এবং তাঁর চেয়ে অগ্রবর্তী হওয়া যাবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরাও রুকু করবে।
তিনি যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তখন তোমরা ‘রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ/ রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তখন তোমরাও সিজদা করবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নেবে। কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। -(বুখারি, হাদিস : ৭২২)