প্রকাশিত: ০১/০১/২০২২ ৯:১৭ এএম

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা ::lam
জীবন একটাই। তবে জীবনকে নতুন করে সাজানো যায় এবং অতীতের ভুল শুধরে নেওয়া যায়। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নব উদ্যমে জীবনের কার্যক্রম শুরু করা যায়। ইসলামে এর সুযোগ রয়েছে।

জীবনের যে বয়সেই ইসলাম কবুল করা হোক না কেন, ইসলাম আগের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়। যত অন্ধকার থেকেই তাওবা করা হোক না কেন, তাওবা জীবনকে আলোকিত করে দেয়। কাজেই নতুন বছরে জীবনকে নতুন করে সাজিয়ে নেওয়ার চিন্তা করা জীবনসচেতনতার অন্যতম অংশ।
ঈমানকে নবায়ন করা : মহান আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায়। যথাযথভাবে ইবাদত ও জিকির দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করা যায়। আল্লাহর স্মরণে জীবন পরিচালিত হলে ঈমান নবায়ন হয়। ফলে জীবন-মৃত্যু প্রশান্তিপূর্ণ ও সৌভাগ্যময় হয়। নতুন বছরকে ঈমান নবায়নের সূচনায় পরিণত করা যেতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তোমরা তোমাদের ঈমানকে নবায়ন করো। সাহাবারা জানতে চাইলেন, কিভাবে ঈমান নবায়ন করব? হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বলেন, বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তে থাকো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৭১০)

এ ছাড়া আল্লাহর কাছে ঈমান নবায়ন করার প্রার্থনা করতে হয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, অবশ্যই তোমাদের হৃদয়ে ঈমান জীর্ণ হয়, যেমন জীর্ণ হয় পুরনো কাপড়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো, যাতে তিনি তোমাদের হৃদয়ে তোমাদের ঈমান নবায়ন করে দেন। (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ৫)

গুনাহ থেকে তাওবা : অতীত মন্দকাজের জন্য বিশেষভাবে অনুতপ্ত হওয়াকে তাওবা বলে। বিশুদ্ধ তাওবা হলো—১. কৃত গুনাহর জন্য অনুশোচনা করা; ২. আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ৩. ভবিষ্যতে এসব গুনাহ না করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—বিশুদ্ধ তাওবা; সম্ভবত তোমাদের রব তোমাদের মন্দকাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। ’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাওবাকারী ওই ব্যক্তির মতো, যার কোনো গুনাহ নেই। (বায়হাকি, হাদিস : ২০৩৫০)

আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা : নতুন বছরের আগমনে মহান আল্লাহর কাছে ইহকালীন ও পরকালীন সুখ, শান্তি, সফলতা এবং কল্যাণ কামনা করা যেতে পারে। আল্লাহই বান্দার সুখ, শান্তি, সফলতা এবং কল্যাণ প্রদান করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কি তাঁর (আল্লাহর) পরিবর্তে অন্যদের উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না। এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব। ’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ২৩-২৪)

জীবনের হিসাব : আল্লাহ তাআলা মানুষকে সুনির্দিষ্ট একটি সময়কাল দিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। এই সময়কালের কোনো হেরফের বা কমবেশি হয় না। যার জন্য যতটুকু সময় নির্ধারিত, ততটুকু ফুরিয়ে গেলেই জীবন শেষ হয়ে মৃত্যুর ডাক এসে যায়। কাজেই পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশের মুখোমুখি হওয়ার আগে পৃথিবীতেই জীবনের হিসাব-নিকাশ করে নিতে হবে। উমর (রা.) বলতেন, তোমরা তোমাদের নিজেদের হিসাব করে নাও তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

অতীত থেকে শিক্ষা লাভ : নতুন বছর আগমনকালে বিগত বছরের পর্যালোচনা করা খুবই যৌক্তিক বিষয়। অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন করে নতুন বছরে নির্ভুল এবং পাপমুক্ত জীবন কাটানোর জন্য প্রত্যয়ী হওয়া উচিত। মানব ইতিহাসে সংঘটিত সব ঘটনাই মানুষের জন্য শিক্ষণীয়। মানুষের উচিত অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। আল্লাহর অবাধ্য ব্যক্তি বা জাতিকে এ জগতেই কোনো না কোনোভাবে প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতে হয়েছে। কোরআনে বিভিন্ন নবী-রাসুল ও অতীত অনেক জাতির ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে অতীত ইতিহাসের সত্য ও শিক্ষার দিকে ধাবিত করা। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের ঘটনায় বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)

নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা : নতুন বছর আগমনকালে নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। সঠিক পরিকল্পনা সফলতার পথ দেখায় আর সঠিক নিয়ত কাজের গতি বৃদ্ধি করে। কাজের শুরুতে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই প্রতিটি কাজ নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। (বুখারি, হাদিস : ১)

নতুন বছর সামনে রেখে নিয়ত ঠিক করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ঈমানদারদের প্রথম পরিকল্পনা হওয়া চাই আমল ও আখলাক নিয়ে। বছরের প্রথম দিন থেকে নামাজ-রোজাসহ ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলো যথার্থভাবে আদায়ের পরিকল্পনা, কোরআন তিলাওয়াত ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের পরিকল্পনা, পরোপকার, দান-সদকা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক। ’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৬)

পরিশেষে বলা যায়, নতুন আরেকটি বছরের আগমন জীবনকে সংকুচিত করে দেয়। কাজেই বিগত বছরের ভুল শুধরে নিয়ে নতুন বছরে ঈমানবান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করা উচিত।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মতামত

হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আবেগের বিরুদ্ধে গেছে ভারত: সারজিস

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত পুরো বাংলাদেশের মানুষের আবেগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বলে ...

সাতকানিয়ায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেল উখিয়ার কিশোরের

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় কেরানিহাট-বান্দরবান মহাসড়ক পার হওয়ার সময় সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ধাক্কায় চলন্ত বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ...