পালটে গেছে লেনদেনের ধরন
ইয়াবার বিনিময়ে মানুষ বন্ধক
পালটে গেছে ইয়াবা লেনদেনের ধরন। মাদক কেনাবেচার জন্য নগদ অর্থ না থাকলে মানুষ ‘বন্ধক’ রেখে ইয়াবা নিয়ে আসছে মাদক কারবারিরা। বন্ধক রাখা ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া হয় সীমান্তের নির্ধারিত আস্তানায় বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। এরপর ইয়াবা বিক্রি শেষে টাকা পরিশোধ করে দিলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বন্ধক রাখা ব্যক্তিকে।
জানা যায়, ২০২০ সালের শেষের দিকে মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা লেনদেনের সিস্টেমটা চালু করেন দেশের ভেতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র করার দুঃস্বপ্ন দেখা আলোচিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন। তার ডেরায় এভাবে মানুষ বন্ধক রেখেই মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে দেশের মাদক কারবারিরা।
সম্প্রতি নবী হোসেনের ডেরায় বন্ধক থাকা বেশ কয়েকজনের ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাদের একজন টেকনাফের আলি হোসেন। ভিডিওতে দেখা যায়, মাদকের টাকা পরিশোধ না করার কারণে আলি হোসেনের হাত-পা বেঁধে আমানুষিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং তার গলায় ছুরি ধরে টাকা পরিশোধে দেরি হলে জবাই করে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিতে দেখা গেছে। তার জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে পরিবার।
এ ছাড়াও সম্প্রতি উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের দিল মোহাম্মদ নামে সপ্তম শ্রেণির এক মাদ্রাসাছাত্রকে নবী হোসেনের কাছে বন্ধক রেখে ৫০ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে আসে কারবারিরা। ইয়াবার চালানটি বিজিবির হাতে ধরা পড়ার কারণে তাকে আর ছাড়িয়ে আনতে যায়নি কারবারিরা। জিম্মিদশায় থাকা দিল মোহাম্মদের পরিবারকে ফোন করেন নবী হোসেনের লোকজন। ইয়াবার ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করে তাকে ছাড়িয়ে নিতে বলা হয় দিল মোহাম্মদের পরিবারকে। একপর্যায়ে জিম্মিদশায় থাকা দিল মোহাম্মদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেওয়া হয় তার বড়ভাই ছৈয়দ আকবরকে।
ছৈয়দ আকবর জানান, জিম্মিদশা থেকে দিল মোহাম্মদ তাকে ফোন করে জানায় যে, দামি মোবাইল ফোন ও ১০ হাজার টাকার লোভ দেখিয়ে কৌশলে তার ভাইকে অপহরণ করা হয়। পরে ইয়াবা কারবারিরা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের কাছে তাকে বন্ধক রেখে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে যায়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাইয়ের ফোনে দেওয়া তথ্যমতে বটতলী এলাকার গফুর আলমের ছেলে সোহেলকে আটক করেন এলাকাবাসী। সোহেল আমার ভাইকে মিয়ানমারের ইয়াবা কারবারিদের কাছে বন্ধক রাখার বিষয়টি স্বীকার করে। একই সঙ্গে ঘটনায় জড়িতদের নামও প্রকাশ করে; যা ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়।
উখিয়া পালংখালী চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন জানান, শুধু ইউনিয়নের একটি গ্রাম থেকে নবী হোসেনের কাছে এ পর্যন্ত স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তিকে বন্ধক রেখে ইয়াবা আনার তথ্য ফাঁস হয়েছে। লেনদেন ঠিকঠাক থাকলে এ ধরনের তথ্যগুলো ফাঁস হয় না বলে জেনেছি। নবী হোসেন ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার এবং বন্ধক থাকা ব্যক্তিদের মুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
এদিকে শুক্রবার রাতে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে নবী হোসেন গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫।
তাদের কাছ থেকে চার লাখ ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও একটি বিদেশি একে-২২ রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এসবিবিএল এবং ১৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃরা হলো-নবী হোসেনের ইয়াবা সেক্টরের প্রধান আব্দুল্লাহ রাজ্জাক ওরফে রাজ্জাক মাঝি, ইলিয়াছ, সাহেদ, মো. আয়াছ ওরফে আজিজুল ও সাইফুল ইসলাম। এর মধ্যে রাজ্জাক মাঝি ও আজিজুল হক রোহিঙ্গা। বাকি তিনজন বাংলাদেশের নাগরিক।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, গোপন সংবাদের ভিক্তিতে অভিযান চালিয়ে নবী হোসেন গ্রুপের এসব সদস্যকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা র্যাবের কাছে স্বীকার করে যে, নবী হোসেনের ডেরায় মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা কারবার হয়। তার ডেরায় অনেকেই বন্ধক রয়েছে। ইতোমধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বন্ধক থাকা অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে নবী গ্রুপের সদস্যরা।
নবী হোসেনকে ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না বলে জানান, র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার। সুত্র: যুগান্তর
পাঠকের মতামত