বিশেষ প্রতিনিধি::[caption id="attachment_24627" align="alignleft" width="640"] ইয়াবাসহ পুলিশে হাতে আটক ইয়াবা জাহাংগীর(ফাইল ছবি)[/caption]
মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফ উপজেলায় ইয়াবা বানিজ্যের মাধ্যমে অনেকেই কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছে। এসব কালো টাকা খরচ করে অনেকেই আজ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তি থেকে শুরু করে স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যান। ইয়াবা নামক আলাদিনের চেরাকের ঘষায় এক লাফেই হয়ে গেছেন সমাজের উচু তলার মানুষ। অথচ বছর কয়েক আগেও এসব ব্যাক্তিদের কেউ ছিল গাড়ীর ড্রাইভার,কেউ ছিল হেলপার,কেউবা দিনমজুর,কেউ বেকার। তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক,কিনে নিয়েছেন অঢেল সম্পদ,চলাচল করেন প্রাইভেট গাড়ীতে। মাঝেমধ্যে এসব ইয়াবা গড়ফাদারদের নিয়োজিত পাচারকারীরা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও প্রকৃত গড়ফাদাররা থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কারন গড়ফাদাররা নয়,তাদের নিয়োজিত পাচারকারীরাই এখন ইয়াবা পাচারে নিয়োজিত রয়েছে। এসব গড়ফাদারদের সাথে রয়েছে স্থানীয় প্রসাশনের গুটিকয়েক কর্মকর্তার দহরম মহরম সম্পর্ক। তাই পাচারকারীরা আটক হওয়ার পর এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা গড়ফাদারদের বাঁচার সুযোগ করে দেয়। বিনিময়ে নিয়ে যায় মোটা অংকের সেলামী। তেমনই একজন টেকনাফ উপজেলার হৃীলা লেদা এলাকার মৃত লাল মিয়ার পুত্র জাহাঙ্গীর। যাকে টেকনাফের হৃীলা এলাকার লোকজন ইয়াবা জাহাঙ্গীর হিসেবেই চিনে। অল্প সময়ে সে হয়ে গেছে অঢেল সম্পদের মালিক। বয়স অল্প হলেও দুরন্ধর চালাক প্রকৃতির জাহাঙ্গীর রাজনৈতিক নেতা,সন্ত্রাসী ও স্থানীয় প্রসাশন ম্যানেজ করেই চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা বানিজ্য। ইয়াবা নিয়ে সে একাধিকবার আটকও হয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। কিন্ত বারবার সে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ,চান্দগাও থানা ও চকরিয়া থানায় মামলা রয়েছে। কিন্তু একবারের জন্যও তাকে দীর্ঘস্থায়ী জেলে হয়নি। সর্বশেষ সে গত ৭ ফেফ্রুয়ারী ভোর রাতে টেকনাফ মডেল থানার এ.এস.আই কাজী আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দলের হাতে ৩ হাজার ১ শ পিচ ইয়াবা নিয়ে আটক হয় সে। এ সময় তার সাথে আটক হয় তার অন্যতম সহযোগী হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়া আজিজুল হক মিস্ত্রির পুত্র ইমরান ওরফে পুতিয়া মিস্ত্রি ও হ্নীলা ফুলের ডেইল এলাকার মৃত আব্দুল গাফফারের পুত্র একরাম। কিন্ত অল্প সময়ে জামিনে বের হয়ে আসে জাহাঙ্গীর। আবারো ফিরে যায় পুরোনো পেশায়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের আনাচে কানাচে তৈরী করে নিজস্ব সোর্স। গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উখিয়া থানা পুলিশ টেকনাফ থেকে ছেড়ে আসা সেগুন কাঠভর্তি একটি ট্রাক আটক করে তল্লাসী চালিয়ে ৩ হাজার পিস ইয়াবা সহ ট্রাক ড্রাইভার উখিয়া উপজেলার রহমতের বিল গ্রামের আবদু রহমানের ছেলে আব্বাস ও হেলপার সোনাইছড়ি গ্রামের হামিদুল হকের ছেলে খাইরুল বশরকে আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দেওয়া হয়। অথচ ট্রাক ড্রাইভার আব্বাস সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,উদ্ধার করা ইয়াবাগুলো লেদার ইয়াবা জাহাঙ্গীরের। কিন্ত রহস্যজনক কারনে এবারো জাহাঙ্গীর পার পেয়ে গেছে। আসামী হয়েছে ড্রাইভার হেলপার। এদিকে ইয়াবা বানিজ্যের মাধ্যমে শুধু জাহাঙ্গীরই নয়,কোটিপতির তালিকায় নাম লিখিয়েছে তার ভাইয়েরাও, সম্প্রতি তার বড়ভাই জাফর আলম ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে আটক হয়ে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছে। অপর দু,ভাই মুফিজ আলম ও রবি আলমের বিরুদ্ধেও রয়েছে ইয়াবা কারবারের অভিযোগ। হৃীলার লেদা এলাকায় ৪ ভাইয়ের রয়েছে ৪ টি বিলাশবহুল বাড়ী,নামে বেনামে রয়েছে বিপুল পরিমান সম্পদ। সম্প্রতি লেদা ষ্টেশনের পাশে কিনে নিয়েছেন ১০ কানি জমি। তাছাড়া চট্রগ্রামের এক কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে জাহাঙ্গীরের ৩ তলা বাড়ী। এ সম্পদ গড়েও তার পেট ভরেনি,টাকার গরমে সে লেদা নুরানি মাদ্রাসার জমি দখলে নিতে নানামূখী তৎপরতা চালাচ্ছে। অরি অংশ হিসেবে সে কয়েকদিন পূর্বে উক্ত মাদ্রাসার এক শিক্ষককে মেরে রক্তাক্ত করেছে। যে মাদ্রাসার জমি সে দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে তাতে প্রায় ১ হাজার এতিম ছেলেমেয়ে আরবি শিখছে। মাদ্রাসার জমি দখলের ঘটনায় স্থানীয় জনগনের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় জনগন ইয়াবা জাহাংহীরকে গ্রেফতার সহ তার অঢেল সম্পদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন সহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উখিয়া টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার ছাইলাউ মারমা বলেন,বর্তমানে ইয়াবার বিরুদ্দে জোরদার অভিযান চলছে, প্রতিদিনই আটক হচ্ছে ইয়াবাসহ পাচারকারীরা। এ অভিযান চলমান রয়েছে,কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা।