সারা বছর সীমিত পরিমাণে মাংস খেলেও কোরবানির ঈদ এলে অনেকের মাংস খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। আর কোরবানির ঈদে মাংস বলতেই থাকে গরু, ছাগল, খাসি অথবা উটের মাংস। তবে এ সময়টাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে প্রচুর। তাই আগে থেকে সাবধান থাকা ভালো।
বিবিসি বাংলাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মাংস খাওয়া কিছু টিপস জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ তাসনিম চৌধুরী-
১। আপনার শারীরিক পরিস্থিতি, বয়স এবং স্বাস্থ্য বুঝে মাংস পরিমিত হারে খেতে হবে। খাবারের পরিমাণের ওপর এই নিয়ন্ত্রণ রাখাটা সবার জন্যই জরুরি।
চেষ্টা করুন তিন বেলা মাংস না খাওয়ার। রাতে রেড মিট এড়িয়ে চলাই ভাল।
২। কোরবানির মাংস বাড়িতে আসার সাথে সাথে সেটা ভালভাবে ধুয়ে, রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে অথবা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।
তবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে সঠিকভাবে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে এবং ছয় ঘণ্টা পরপর সেটা পুনরায় জ্বাল দিতে হবে।
৩। রান্নার আগেই মাংসের চর্বি কেটে আলাদা করে ফেলুন। এছাড়া মাংসের ভেতরে যে চর্বি আছে সেটা গলাতে গরম পানিতে মাংস সেদ্ধ করে নিতে পারেন।
৪। রান্নার সময় মাংসের টুকরোগুলো ছোট করে কাটলে সেইসঙ্গে মাংসটি টক দই, লেবুর রস, সিরকা, পেঁপে বাটা দিয়ে মেখে রাখলে একদিকে যেমন কম সময়ে মাংস সেদ্ধ হয়, তেমনি চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব অনেকটাই কাটানো যায়।
৫। মাংস অল্প তেলে রান্না করতে হবে। তেলটি অলিভ অয়েল হলে সবচেয়ে ভাল।
৬। মাংস উচ্চতাপে ভালভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে। সবচেয়ে ভাল আগুনে ঝলসে খেতে পারলে।
এতে জীবাণুর সংক্রমণের ঝুঁকি থাকেনা। আধা সেদ্ধ মাংস বা স্টেক পরিহার করাই ভাল।
৭। একদিনে কয়েক পদের রেড মিট রান্না না করে মাংসের পাশাপাশি প্রতি বেলায় যথেষ্ট সবজি অথবা সালাদ রাখুন।
কেননা সবজিতে থাকা ফাইবার মাংসের চর্বি হজমে সাহায্য করে।
এছাড়া সবজি থাকার কারণে মাংস খাওয়ার পরিমাণও কিছুটা কমানো যায়।
৮। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পরিমাণে পানি, সরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুষি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চৌধুরী তাসনিম।
৯। গরুর মাংসের মগজ, কলিজা সেইসঙ্গে ঝোল বা স্টকে সবচেয়ে বেশি চর্বি থাকে, তাই খাওয়ার সময় সেগুলো পরিমিত খাওয়াই ভাল।
১০। মাংসের তৈরি ভাজা আইটেমে তেল বেশি মনে হলে খাওয়ার আগে টিস্যুতে বাড়তি তেলটা শুষে নিতে পারেন।
১১। কোরবানির ঈদে যেহেতু মাংস বেশি খাওয়া হয় তাই অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। তবে খাওয়ার পরপরই সেটা করতে যাবেন না। এতে ফলাফল উল্টো হতে পারে।
তাসনিম চৌধুরী মনে করেন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মাংস রান্না করে পরিমাণ বজায় রেখে খেলে যেকোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়িয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব।