'আদ দুনিয়া মাঝরেয়াতুন আখেরা'
এই দুনিয়া আখেরাতের শস্যক্ষেত্র'
একজন মুসলমানের সারা জীবনের ভালমন্দ নির্ভর করে তার আমলের ওপর। সে যদি ভালো আমল করে সে আখেরাতে ভালো মর্যাদা পাবে অন্যথা হলে তার উপর নেমে আসবে জাহান্নামের শাস্তি। ভালো আমলে পৃথিবী ও আখেরাতের মঙ্গল নিহিত। সাময়িক সুখ বর্জন করে এক আল্লাহর প্রতি অনুগত হবার মধ্যেই মুমিনের সার্থকতা। কোনোক্রমেই অতিরিক্ত বা অন্য কোনো কর্ম করার সুযোগ ইসলামে নেই। নিম্নে এই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. গায়রুল্লাহর কাছে দোয়া করা: পবিত্র কুরআনে আছে, ‘আর তাঁকে ছেড়ে এমন কাউকে ডেক না, যে না তোমার উপকার করতে পারে, আর না কোনো তি করতে পারে। আর যদি তা করো তবে অবশ্যই তুমি জালেমদের (মুশরিকদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’। (সূরা ইউনুস-১০৬)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার কোনো সমককে ডাকা অবস্থায় মারা যাবে তাহলে সে (জাহান্নামের) আগুনে প্রবেশ করবে। (বুখারি)
২. গায়রুল্লাহর নামে জবেহ করা: পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো ও জবাই করো। (সূরা কাওছার-২)
রাসূলুল্লাহ (দ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর নামে জবাই করে, আল্লাহ তার ওপর লানত করেন’। (মুসলিম)
৩. গায়রুল্লাহরনজর-নেয়াজ করা: নৈকট্য হাসিল ও ইবাদতের নিয়তে কোনো সৃষ্টিকে নজর-নেয়াজ দেয়ার রেওয়াজ আমাদের সমাজে দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে সন্তান কামনায় মাজারে গিয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তির কাছে প্রার্থনা করে। এটা তাওহীদের পরিপন্থী এবং স্পষ্ট শিরক।
৪. কবরের চার পাশে তওয়াফ করা: নৈকট্য হাসিল বা ইবাদতের নিয়তে কবরের চার পাশে তওয়াফ করা যাবে না। কারণ তাওয়াফ কেবল কাবা শরিফের সাথেই নির্দিষ্ট। বান্দার উপাসনা বা দাসত্ব একমাত্র আল্লাহর জন্য। সালাত, সিয়াম, জিকির, সাহায্য কামনা, সন্তান ও রোগমুক্তি কামনা, মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করা, অকল্যাণ দূর করার জন্য দোয়া একমাত্র আল্লাহর কাছে করা যাবে। কবরবাসীর কবর তওয়াফ করে তার মাধ্যমে নিজের বাসনা পূরণের কাকুতি শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
৫. গায়রুল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ওপর কোনো ব্যাপারে নির্ভরতা ও ভরসা করা যাবে না। সব কাজের সাহায্যদাতা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা ভরসাকারীদের জিম্মাদার হয়ে যান।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাঁর ইবাদত করো এবং তাঁর ওপর ভরসা করো’। (সূরা হূদ-১২৩)
৬. ইসলাম প্রতিষ্ঠিত কোনো বিষয়কে অপছন্দ করা: পবিত্র ইসলাম ধর্মের কোনো রীতি-নীতি, ইবাদত, সিদ্ধান্ত প্রভৃতিকে অপছন্দ করা যাবে না। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের ফয়সালা ও সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা যাবে না। আল্লাহ কর্তৃক পরিপূর্ণ হিসেবে ঘোষিত ইসলামে সব বিষয়ের ফয়সালা রয়েছে। এমন কিছু করা হলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের সব আমল বিনষ্ট করে দেবেন।
৭. ইসলামের হুকুম-আহকাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা: পবিত্র কুরআন ও সহি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের কোনো হুকুম-আহকাম নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা ঈমানদারের কাজ নয়। অনুরূপভাবে আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.) ও পবিত্র কুরআন সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ, বিরোধিতা করা, হাসি-ঠাট্টা করা যাবে না। এসব কিছু কুফরি কালাম। আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল সা: ও কুরআন কারিমের সাথে হাসি-তামাশা করার এখতিয়ার কাউকে দেয়া হয়নি।
৮. আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম ও সিফাতসমূহ অস্বীকার করা: তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত বা আল্লাহর নাম ও গুণাবলিতে একত্ব, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব ও সৌন্দর্য যাবতীয় গুণাবলিতে এক, একক ও নিরঙ্কুশভাবে পূর্ণতার অধিকারী।
পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘কোনো বস্তুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা’। (সূরা শুরা-১১)
অন্যত্র আছে, ‘তোমরা কি পরিবর্তন করতে চাও নিকৃষ্ট বস্তুকে উত্তম বস্তু দ্বারা’। (সূরা বাকারাহ-৬১)
৯. বিচারকাজে কুফরি মত অবলম্বন করা: আল্লাহ কেবল স্রষ্টাই নন, তিনি সৃষ্টিরাজি প্রতিপালনও করেন।
পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘তোমরা মানুষকে ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় করো; আর আমার বিধানসমূহের বিনিময়ে (পার্থিব) সামান্য বস্তু গ্রহণ করো না; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতারিত (বিধান) অনুযায়ী হুকুম (বিচার) না করে, তাহলে এমন লোক তো পূর্ণ কাফের’। (সূরা মায়িদাহ- ৪৪)
১০. হারামকৃত বিষয়কে হালাল বা হালালকৃত বিষয়কে হারাম করা: মহান আল্লাহ যেসব বিষয়কে হারাম করেছেন তা চিরদিনই হারাম, আবার যা হালাল করেছেন তা কিয়ামত পর্যন্ত হালাল। কিন্তু তাবিল করে (বিকৃত ব্যাখ্যা) হারামকে হালাল বা হালালকে হারাম করার কোনো অধিকার মানুষকে দেয়া হয়নি।