বিশ্বের দীর্ঘতম শরণার্থী ক্যাম্প কক্সবাজারের উখিয়ায়। এখানে শিল্প কারখানা ও শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র শিশুপার্ক নেই। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে রয়েছে পাথুরে গাথা ইনানী সমুদ্র সৈকত। পালংখালী, থাইংখালী, বালুখালী, কুতুপালং, উখিয়া সদর, কোটবাজার ও মরিচ্যায় নেই কোন বিনোদন কেন্দ্র। এ কারণে স্থানীয়রা রেজুখালের পাড়, সোনারপাড়া, পাথুরে গাথা ইনানী ও কক্সবাজার মমুদ্র সৈকতকেই বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকা নয়-ছয় হলেও শিল্প কারখানা ও বিনোদনের জন্য কারো চিন্তা নেই। সরকারি নির্দেশনা রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা স্থানীয়দের জন্য বরাদ্ধ। বিগত ষোলো বছরে স্থানীয়দের জন্যে বরাদ্ধকৃত টাকা কোথায় গেল তার কোনো হদিস নেই। গতকাল সরেজমিনে সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকত পয়েন্টে দেখা গেছে মানুষের ভিড়। শিশু, তরুণ, যুবক ও বয়স্করা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেখানে ভিড় করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চটপটি, ফুসকাসহ নানা ধরনের সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে ডাব বিক্রেতা জানে আলম বলেন, দেশ-বিদেশের শত শত পর্যটক এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। বিনোদনের জন্য আসা দর্শনার্থীরা তার কাছ থেকে গাড়ি থামিয়ে ডাব কিনে খান। মোহাম্মদ ইসলাম ও বেগম সানজিদা ইসলাম বলেন, সোনারপাড়ার এই জায়গায় ডাব কিনে আমরা দোলনাতে বসে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করি। ঝাউগাছের ভেতরে স্থানীয়রা দর্শনার্থীদের জন্য দোলনা সাজিয়ে রেখেছেন। উখিয়া বঙ্গমাতা কলেজের ছাত্রী নাবিলা বলেন, উখিয়াতে বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। দুদিন আগে উখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিজ্ঞান মেলা হয়েছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র তাহমিদ কবির বলেন, ষোলো বছর ধরে উখিয়াতে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা দেখিনি তাই কক্সবাজার শিল্প ও বাণিণজ্য মেলায় যেতে হয়েছে আমাদের। এবার মাস ব্যাপী উখিয়া বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বাণিজ্য মেলা হতে যাচ্ছে। এই মেলা ডিসেম্বরের দিকে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শুরু হলে ভালো হতো। দেরিতে হলেও হচ্ছে। তবে মেলা কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা ছাত্রদের দাবি থাককবে যেহেতু এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সামনে রয়েছে তাই পড়ার সময়ে উচ্চ আওয়াজে মাইক ব্যবহার করা না হয়। মানুষ একটু আনন্দ পাওয়ার আশায় সমুদ্রের তীরে ভিড় করছেন। বিকেলের দিকে অনেকে ভিড় করছেন উখিয়া প্রেসক্লাবের পাশে শহীদ মিনারে। এনজিও কর্মী হুমায়রা বলেন, সারা দিন ক্যাম্পের কাজ শেষে একটু বিনোদন বা সময় কাটানোর মতো উখিয়ায় কোন পরিবেশ নেই তাই সুন্দর নিরিবিলি পরিবেশে শহীদ মিনারে এসে বসে থাকি। এখানে চাইলে শিল্প কারখানা ও বিনোদন স্পট তৈরি করা যেতো। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা বা ৬৪ জেলা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কারণে এনজিওতে কাজ করছেন। উখিয়াতে নেই চিড়িয়াখানা, নেই বিনোদন পার্ক, নেই শিল্প কারখানা, নেই শিশু পার্কও। এসব বিষয়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পিত উখিয়া চাই এর আহবায়ক সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, উখিয়ার মানুষ বিনোদনপ্রিয়। কিন্তু তাদের বিনোদনের জন্য শিশুপার্কও না থাকাটা দুঃখের বিষয়। তারা অন্তত শিশুদের কথা চিন্তা করে বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক নির্মাণের দাবি করেন। উখিয়া সদর রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর সাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, উখিয়াকে নিয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। শিঘ্রই উখিয়ায় মানুষ পরিবর্তন দেখতে পাবে। দারোগা বাজারে পাঁচ তলা ভবনের অত্যাধুনিক মানের মার্কেট, উখিয়া উপজেলা পরিষদের দিঘিকে বিনোদন পার্ক করা হবে। খালের দুই পাশে সসংস্কার করা হবে। সেখানে বিনোদন সামগ্রী রাখা হবে। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো হবে গাছপালা। এতে বিনোদন প্রিয় উখিয়াবাসীর বিনোদনের খোরাক কিছুটা হলেও মিটবে।