কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্তে পাচারকারি সিন্ডিকেট-কাস্টম কর্মকর্তার যোগসাজসে পানির দরে দায়সারা ভাবে ৬১ টি মহিষের নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। এতে করে একদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে দূরদূরান্ত থেকে আসা প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
১২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১টায় নাটকীয় নিলাম দেখিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে ৮০লাখ টাকার মহিষ ৩০ লাখ ৮০ হাজার টাকায় আতাঁতের মাধ্যমে সিন্ডিকেট প্রধান উখিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ মনজুরকে পানির দরে নিলামে বিক্রি করে দিলেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নাটকীয় নিলামে সর্বোচ্চ মূল্যে ডাককারী হিসেবে দেখিয়ে তাকে দেওয়া হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় তড়িঘড়ি করে বালুখালী বিজিবি বিওপিতে নিলাম কার্যক্রম শুরু করেন। বালুখালী কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিয়ম অনুযায়ী ৬১টি মহিষের মূল্য ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেন।
তারও আগে ১০ অক্টোবর নিলামের আয়োজন করলেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পর্যাপ্ত নিলাম মূল্য না হওয়ায় নিলাম বাতিল হয়।
একই ভাবে ১১ অক্টোবর বালুখালী কাস্টমস কর্মকর্তা এসে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে আকস্মিক ঘোষণা দেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আজকের নিলাম হবে না।
এদিকে নিলাম ডাকে অংশ নিতে যাওয়া প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অনেকেই উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের মেম্বার ফজল কাদের ভুট্রোর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের জিম্মীদশায় পড়ে টাকা জমা করে অংশ গ্রহণ করে ও সরকারি মূল্যে ডাক দিতে পারেননি এমনটি অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এ সময় সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার দে এর ভুমিকা ছিল নিরব ও রহস্যজনক।
তাদের মধ্যে একজন নিলামে অংশ নিতে আসা নাসির উদ্দীন বলেন, সারাদিনের অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে নিলামের খবরে অংশ নিতে নির্দিষ্ট সময়ে আগে ছুটে আসি। কিন্তু স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট সদস্যদের চাপের মুখে নিলামে অংশ নিতে পারিনি। যা খুবই বিরক্তিকর ও দুর্ভাগ্যজনক।
টানা তিনদিন নানা তালবাহানা করে কাস্টমস কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার দে নিজের পছন্দ অনুযায়ী গড়া গরু মহিষ পাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মনজুর ও পাচারকারী সিন্ডিকেট প্রধান মেম্বার ফজল কাদের ভুট্টোকে কৌশলে নিলাম ডাক পাইয়ে দেয়। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলো।
সুত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নিলাম ডাকে প্রায় সময় উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মেম্বার ফজল কাদের ভুট্টোর দাপটে নিলামে অংশ গ্রহণ করতে পারেনা স্থানীয় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। জিম্মী করে নিলাম ডাক নিজের অনুকুলে এবং নিজের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগিয়ে নেয়। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ী ও পেশাদার নিলাম ডাককারীরা যেমনি নিলাম ডাকে অংশ নিতে পারেন না। যার ফলে জব্দ মালামালের ন্যায্য মুল্য পাওয়া থেকে বারবার বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। লাভবান হচ্ছে স্থানীয় কাস্টমস কর্মকর্তা আর সিন্ডিকেট সদস্যরা।
উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর বালুখালী ৩৪ বিজিবির সদস্যরা সীমান্তে টহলরত অবস্থায় বিগত ৯ অক্টোবর মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে আসার সময় ৬১টি মহিষ জব্দ করে। জব্দ তালিকা বালুখালী কাস্টমস শুল্ক গুদাম কর্মকর্তাকে নিলামের জন্য প্রেরণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসা মহিষগুলো পালংখালীর একটি সিন্ডিকেট ও জনৈক আওয়ামী লীগ নেতা এম. মনজুর তার আত্মীয়স্বজনদের দাবী করে নিলাম কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালায় এবং বাধা সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন স্থানে তদবির শুরু করে।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছেন মহিষগুলো স্থানীয়দের নয়। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে চোরাই পথে আসার সময় ৬১ মহিষ জব্দ করা হয়।
এ ব্যাপারে বালুখালী ঘাট কাস্টমস কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার দে বলেন, ১০ ও ১১ অক্টোবর নিলাম হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও সরকারি দলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের অনুরোধ অনুযায়ী ১২ অক্টোবর যথাযথ নিয়মে নিলাম সম্পন্ন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিলাম শেষে নিলাম নেগোচিয়েশনকারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড পালং খালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজল কাদের ভুট্টো মেম্বার নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ীদের ভাগের টাকা বিতরণ করছে।
ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মঞ্জুর থেকে ফজল কাদের ভূট্টো ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার জন্য নেগোজিয়েশন ৫ লক্ষ টাকা ভাগিয়ে নেন । এর মধ্যে ২ লক্ষ টাকা কাস্টম কর্মকর্তাকে দেয়। ২ লক্ষ টাকা ব্যবসায়ীদের বিতরণ করেন। এক লক্ষ টাকা ফজল কাদের ভুট্টোর পকেটেস্হ করেন। অপরদিকে পানির দামে ৬১ টি মহিষ নিলাম ডাকের বিষয়টি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে সচেতন মহলে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সহ উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি উঠেছে।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কক্সবাজার অফিসের ডেপুটি কমিশনার আল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন কাস্টমসের নিলাম আইনে মহিষগুলো পঁচনশীল দ্রব্যের তালিকায় বিধায় প্রকাশ্যে নিলামে সর্বোচ্চ ডাক প্রদানকারীকেই দেওয়ার নিয়ম। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কেউ যদি অনিয়ম করে দেখে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।