যে বাজারের ইজারা মূল্য ছিল ২ কোটি টাকার মতো, সেই বাজার আইনি জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে গত দেড় বছরে ইজারাই হয়নি। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী বাজারটি সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। এতে আয়ের ক্ষুদ্র অংশ রাজস্ব হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বড় অংশই চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পেটে। প্রত্যেহ এই বিশাল অঙ্কের টাকা আগে ভাগবাটোয়ারা করতেন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা, আর এখন একই নিয়মে পকেটে নিচ্ছেন বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতা।
সূত্র জানায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমি কর্মকর্তা খাস কালেকশন করার কথা থাকলেও বাজারে ‘খাস’ কালেকশন করেন স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত একটি সিন্ডিকেট। বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাস কালেকশনের সময় ভূমি অফিসের কেউ উপস্থিত থাকেন না। ভূমি অফিসের কাউকে কোনোদিন তারা দেখেননি। আর কতো টাকা জমা করা হচ্ছে তারও কোনো হিসাব নেই। তবে নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বালুখালী বাজারে প্রতিদিন খাস কালেকশন হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। অথচ ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে জমা দেয়া হয় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। বাকি টাকা কোথায় যাচ্ছে তা কেউ জানে না। স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয়ধারী বেলালসহ ১৪ জনের সিন্ডিকেট বাজারে ঢোকা সব পরিবহন থেকে খাস কালেকশন হিসেবে (৩০০-৮০০ টাকা) করে নিচ্ছে। বিশাল হাটবাজার থেকে আয়ের কিছু অংশ ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে নামকাওয়াস্তে দিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাঝে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খাস কালেকশনের দায়িত্ব দেয়া হয় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে। তিনি লোক নিয়োগ করে কালেকশন আদায় করেন। নিয়োগকৃত ব্যক্তিরা দৈনিক টাকা তুলে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। পরবর্তীতে এই টাকা সরকারি ফান্ডে জমা দেয়া হয়। এই পুরো বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদারকি করার কথা। কিন্তু বালুখালী বাজার পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। খাস কালেকশন করার সময় এখানে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বা ভূমি অফিসের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন না। সিন্ডিকেট সদস্যরা যে যার মতো পয়েন্টে পয়েন্টে বসে কালেকশন করেন। এ ব্যাপারে বাজারের খাস কালেকশনের দায়িত্ব পাওয়া আনোয়ার সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডকে জানিয়ে বাজারের খাস কালেকশন করা হচ্ছে। গত ৫ই আগস্টের আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফজল কাদের ভুট্টুসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা খাস কালেকশন করতো। ৫ই আগস্টের পর উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে পরিমাণ টাকা ওঠে আমরা তা ভূমি অফিসে জমা দেই। আমরা যারা খাস কালেকশনে নিয়োজিত আছি তাদেরকে ভূমি অফিস কর্মকর্তা বেতন দেন। এ ব্যাপারে বালুখালী বাজার কমিটির সভাপতি পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বালুখালী বাজারের খাস কালেকশন থেকে আমার নামেও টাকা নেয়া হচ্ছে বলে শুনেছি। নিয়ম হচ্ছে দৈনিক যে টাকা উত্তোলন হবে, সে টাকা ইউনিয়ন তহশিলদার দৈনিক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা করবেন। আমার জন্য কোনো টাকা দেয়া নেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যারিন তাসনিম তাসিন বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।