ঈদের বাকি আর তিন দিন। এখনো পুরোদমে জমে ওঠেনি কোরবানির পশুর হাট। ১৮ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উখিয়াতে গরুর হাট শুরু হলেও নেই প্রত্যাশিত কেনাবেচা। দূরদূরান্ত থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা তাই হতাশ হলেও তারা আশাবাদী। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়ায় হাটগুলোতে ছোট-বড় নানা রং ও আকৃতির পশু উঠেছে হাটে। ক্রেতার চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির গরু আনা হয়েছে হাটে। মিয়ানমার থেকেও গরু এসেছে। হাজারের ঘর থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা দামের গরু আনা হয়েছে হাটে। কেউ এসেছেন পশুর হাটের বাজার মূল্য দেখতে। হাটে প্রচুর ক্রেতার ভীড় হলেও বেচাবিক্রি তেমন নেই। ক্রেতারা বলছেন কোরবানির পশুর উচ্চমূল্য হাঁকা হচ্ছে। তাই দেখে শুনে নেয়া হবে গরু। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় বারো লাখের চেয়েও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। এখানে প্রতি বছর কোরবানির সময়ে দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্যে কোরবানির পশু ক্রয় করে থাকেন। স্থানীয়রা বলছেন, উখিয়ার হাটে গরু কেনাবেচা শুরু হয় ঈদের দু-একদিন আগ থেকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গরু রাখার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। তাই কোরবানের দু-একদিন আগে প্রচুর পরিমাণে গরু বিক্রি হয়ে থাকে। হাটের আয়োজক ও গরু ব্যাপারীরা ধারণা করছেন আজ থেকে গরু কেনাবেচা বাড়তে পারে। তবে কাল থেকে সেটা পুরোদমে চলতে পারে। বিক্রেতারা আরো বলছেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম বাড়েনি এমন কোন পণ্য নেই। এর জন্য দেশের মানুষের কষ্টের সীমাও নেই। কেউ খাবার কমাচ্ছেন, কেউ মাছ-মাংস ছেড়ে শাকসবজি খাচ্ছেন। মানুষ না হয় একটি পণ্য ছেড়ে অন্যটি খেয়ে কিছুটা সাশ্রয় করছেন। কিন্তু অবলা প্রাণী বা গৃহপালিত পশু তো আর সাশ্রয় বুঝবে না। বা তার যা খাবার তার বাইরেও অন্য কিছু খাওয়ানো যায় না। তাকে তার খাবার দিতেই হয়। কিন্ত্র সামপ্রতিক সময়ে পশু খাদ্যেরও দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক। এ জন্য খামারি এবং সারা দেশের কৃষক পড়েছেন আরেক বিপাকে। পশুপালন করা এখন তাদের কাছে দুরুহ হয়ে পড়েছে। খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও পশুখাদ্যের সঙ্কটের কারণে কেউ কেউ পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। উখিয়া সদর গরু বাজার, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন কুতুপালং, টিভি টাওয়ারের পাশে বালুখালী পশুর হাট সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত তুমব্রু এলাকার গরু বিক্রেতা শামসুল আলম বলেন, গত দেড় মাসে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ফুলতলী, লম্বাশিয়া, ভালুক খাইয়া, চাকঢালা, ও দৌছড়ির পয়েন্টে চোরাই পথ দিয়ে প্রতিদিন অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে গরু-মহিষ। টেকনাফ থেকে গরু নিয়ে এসেছেন জানে আলম। তিনি বলেন, চোরাই পথে গরু আসায় সংকটের মুখে পড়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির পাঁচটি ইউনিয়ন ও কক্সবাজারের রামু, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া ও ঈদগড়ের খামারিরা উখিয়া-টেকনাফে প্রচুর পরিমানে চোরাই গরু আসায় দেশি গরুর দাম কমে গেছে। স্থানীয় রত্নাপালং ইউনিয়নের ভালুকিয়া পালং এলাকার মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, গরুটি আমি ঘরোয়াভাবে লালন পালন করেছি। কোনো ধরনের ওষুধ আমি নিইনি। গরুকে খাইয়েছি ভুট্রার গুঁড়ো, গমের ভূসি, খুদের ভাত আর কাঁচা ঘাস। চাহিদা মতো দাম না পেলে বিক্রি করবো না। পাঁচ মাস ধরে আমি লালনপালন করেছি। গতকালও বাজারে এসেছিলাম, কিন্তু চাহিদা মতো দাম না পাওয়ায় বিক্রি করিনি। দুই লাখ টাকার নিচে হলে আমি বিক্রি করবো না। হাট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখনো পর্যাপ্ত গরু হাটে আসেনি। কেনাবেচা শুরু হলেও সেটি প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করছি আজ থেকেই হাটে বেচাকেনা পুরোদমে শুরু হবে।