কক্সবাজারের উখিয়ায় এনজিও সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কিশোরীদের দক্ষতা অর্জন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা অনিয়ম ও অসংগতির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় দায়সারা গোচরের প্রদর্শনী মেলা নিয়ে চরম অসন্তোসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থ অপচয়ের ঘটনা তোলপার সৃষ্টি হয়েছে।আর এসব লোক দেখানো কর্মসূচি ধামাচাপা দিতে উপরে মহলে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে।
এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট গত ২৮ সেপ্টেম্বর উখিয়া নিউজ ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিল।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় ,গত ২৫ সেপ্টেম্বর উখিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ পরবর্তী কিশোরী কর্তৃক তৈরিকৃত পন্যের একটি প্রদর্শনী মেলা আয়োজন করা হয় । যে মেলায় উক্ত সংস্থার চাকুরীরত কর্মী ছাডা কাউকে কোন দর্শনার্থী দেখা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে দায়সারা গোচরের এ ধরনের প্রদর্শন দেখে মনে হয় কোনরকম দিন পার করছে। এ মেলায় জনগণের কিছু শিক্ষানীয় দেখতে পাইনি এমন কি প্রচার করা হয়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র প্রকাশ, সেভ দ্য চিল্ড্রেনের সহযোগিতায় ও দ্য স্টোন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে উখিয়ায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে চরম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে , গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদ হল রুমে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের চলমান কর্মসূচি বিষয়ক অনুষ্ঠিত সভায় আয়োজক সংস্থা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হন। খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ সহ সতর্ক করা হয়। উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে কিংবা কর্মসূচি বাস্তবায়নের পূর্বে ইন্সপেকশন সভার মাধ্যমে পরামর্শ গ্রহণ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত ব্যতিরেখেই লোক দেখানো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে । যা অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছু নই। বিশেষ করে ৪ শত কিশোরীদের হাতে স্মার্ট ফোন প্রদান করার বিষয়টি রীতিমতো থ বনে গেছে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।
সভায় অংশ নেয়া উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আইয়ুব আলী জানান যুবতীদেরকে স্মার্টফোন দেয়ার বিষয়টি তিনি প্রশ্ন করেন । কারণ উঠতি কিশোরীরা স্মার্ট ফোনে অপব্যবহারে ক্ষতির কারণও হতে পারে । উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মুক্তার আহমদ বলেন জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের শিক্ষা কর্মসূচি নিয়ে তেমন কোন ধারণা নেই। সমবায় অফিসের সহকারি পরিদর্শক শ্যামল বড়ুয়া বলেন স্বল্প পরিসরে ট্রেনিং প্রদান কোন কাজে আসবে না। এদের ট্রেনিং সমূহ তদারকি করা উচিত ।
খোঁজখবর নিয়ে আরো জানা যায় , উখিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রদর্শনীতে জুয়েলারি প্রশিক্ষণ পরবর্তী কিশোরী কর্তৃক তৈরিকৃত পন্যের একটি স্টল স্থাপন করা হলেও উখিয়ায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন এ ধরনের কোন কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দেয়নি। বিষয় টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল। শুধু তাই নয় দর্জি বিউটি পার্লার ও ঝিনুক সামগ্রী দিয়ে পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ কোথায় দিয়েছে কারা নিয়েছেন এ সব বিষয়ে মনিটরিং করা উচিত।
জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর মন্টু বসাক জানান , দ্য স্টোন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে এজিআরইই কর্মসূচির আওতায় ১২ থেকে ১৬ বছরের কিশোরীদের মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি জীবন দক্ষতা ও স্বাবলম্বী করতে উখিয়ায় ২৪০ জন কিশোরীকে ৪ টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে । ট্রেড গুলো হচ্ছে লো কষ্ট ডেকোরেটিভ মেটেরিয়াল, জুয়েলারি, দর্জি ও বিউটি পার্লার।
মাত্র তিন মাস ব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বললেও তেমন দৃশ্যমান কিছু বলতে পারে নাই । উপজেলা প্রশাসনের অসন্তোষ প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর বলেন প্রকল্পের সফলতার একটু কমতি থাকলেও আগামীতে চেষ্টা করা হবে । মেলায় লোকজনের সমাগম ছিল না এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি। কিশোরীদের কে স্মার্টফোন দেওয়ার বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বলে জানান । তবে উপজেলা প্রশাসনের অসন্তোষ বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামমাত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে । কোথায় কিভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত। তবে কিশোরীদের হাতে স্মার্টফোন দেয়া বিষয়টি সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।