কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় ‘এক মাসের মধ্যে’ একটি পাহাড় কেটে প্রায় এক একর জায়গা সমভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এই পাহাড়ের আধা কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে বন বিভাগের বিট কার্যালয়। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সেখানে পাহাড় কাটতে গিয়ে এক শ্রমিক মারা গেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বন বিভাগ ও পরিবেশ দপ্তর এসব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু মামলা দিয়েই দায় সারছে বলে পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করেছেন।
পাহাড়টি উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বায়তুশ শরফ এলাকায়। নিহত মুসলেম উদ্দিন উপজেলার পাইন্যাশিয়া চাককাটা এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। এ বিষয়ে বন বিভাগ বলছে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ৭টি মামলার পরও পাহাড় কেটে চলেছেন হেলাল ও সরওয়ার নামে দুই যুবক।
উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন বলেন, ভোর সাড়ে ৫টায় মুসলেম উদ্দিন স্থানীয় হেলাল কোম্পানির ডাম্পার ট্রাক নিয়ে পাহাড়ে মাটি কাটতে যান। এ সময় হঠাৎ করে বড় একটি মাটির চাক ও গাছের ধারালো শেকড় এসে তার অণ্ডকোশে ঢুকে যায়। অন্য শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।
ঘটনার পর উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সালে আহমদ, বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিনসহ পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে ভয়াবহ পাহাড় কাটার দৃশ্য। এক একরের বেশি পাহাড় কেটে ইতোমধ্যে সমতল ভূমিতে পরিণত করেছে চক্রটি। পাহাড় কেটে সেই মাটি ডাম্পার ট্রাকে করে নিয়ে বিক্রি করে ফেলা হয়েছে বলে জানান বন বিভাগের ইনানি রেঞ্জ কর্মকর্তা ফিরোজ আল আমিন। তিনি বলেন, ওই এলাকার মৃত কাসেমের ছেলে হেলাল উদ্দিন ও সরওয়ার নামের অপর এক যুবকের নেতৃত্বে গত এক মাসে এই পাহাড় কাটা হয়েছে। বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এই দুজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর সাতটি মামলা করেছে, যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে পাহাড়ের মাটিসহ হেলালের ডাম্পারও জব্দ করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। ফিরোজ আল আমিন বলেন, এ ব্যাপারে আবারও মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ। তিনি বলেন, পাহাড় কাটার যে চিত্র দেখা গেছে তা ভয়াবহ। ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার এলাকায় বন বিভাগের বিট কার্যালয়। অথচ বন বিভাগ বিষয়টি জানে না বলে দাবি করছে। বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর শুধু মামলা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করার চেষ্টা করছে। ফলে বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা।