কক্সবাজারের উখিয়ায় ফ্রিল্যান্সিং, ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণে তরুণ-তরুণীদের আগ্রহ বাড়ছে। প্রশিক্ষিত হয়ে ঘরে বসেই আয় করে ভাগ্য পরিবর্তনে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে বেকার যুবক-যুবতীরা।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীবের একক উদ্যোগ, আন্তরিকতায় এবং সঠিক পরিকল্পনা ও টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বেকার তরুণ-তরুণীদের মুক্ত করতে একটি ফ্রিল্যান্সিং, ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্থাপন করা হয়েছে। তাদেরই একজন সাকিবুল হাসান। যে কিনা একটি গরিব মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। যার জন্ম থেকেই এক পা বিকল। মধ্যবিত্ত পরিবার তার উপর শারীরিক অক্ষমতা দুই-ই মিলে সাকিবের জন্য পড়ালেখা করা ছিলো অনেকটা দুঃসাধ্য। কিন্তু সে হার না মেনে ছোটকাল থেকে পড়ালেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছে থাকায় এক পায়ে ভর করে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে যায় সে এবং পরিবারের সহযোগিতায় উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে সাকিব।
কিন্তু সাকিবের জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব এর একক প্রচেষ্টায় ও পরিকল্পিত পরিকল্পনায় গড়ে উঠা ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং ও আউট সোর্সিং কোর্সে ভর্তি হয়ে। সাকিবের দারিদ্রতা বিষয়টি জেনে তার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্যাবের ব্যবস্থা করেন ইউএনও সজীব। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহিন ইমরান প্রতিবন্ধী সাকিবকে ভালো কাজের তাগিদ দেন এবং উৎসাহিত করতে আরো একটি ল্যাপটপ দেন। ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে প্রথম তিন মাসে সাকিব আয় করে ৪০০ ডলার।
সাকিব বলেন, ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে পেরে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিবের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সাথে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককেও ধন্যবাদ জানাই।
প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা গণমাধ্যমকর্মী ইমরান আল মাহমুদ বলেন,"আমি তিনমাসব্যাপী এ কোর্স সম্পন্ন করে নতুন নতুন অনেক বিষয় জানতে পেরেছি। সেগুলো বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে উপার্জনের চেষ্টা করবো। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে উপার্জনের সহজ একটি মাধ্যম ডিজিটাল মার্কেটিং।"
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব জানান, উখিয়ার শতাধিক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং, ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণের এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব পেজের মাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তা নিজেদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্য কাজ করে যাচ্ছেন। আবার এখানে কাজ করে আয় করে সংসারও চালাচ্ছে অর্ধশতাধিক তরুণ-তরুণী।
তিনি আরও বলেন তরুণদের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি ডিজিটাল স্কিলে দক্ষ করে ফ্রিল্যান্সিং করে দেশের রেমিটেন্সে অবদানের জন্য কাজ করে যাওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখা গেলে ভবিষ্যতে বেকারত্ব মুক্ত উখিয়া উপজেলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ জানান, এই ধরনের ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সরকার ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ব্লক বাটিক ও সেলাই প্রশিক্ষণ নেয়া রাজাপালং সিকদার বিলের আকলিমা আক্তার বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে তাকে একটি সেলাই মেশিন দেওয়া হয়। সেলাই কাজ করে তার এখন ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. বদরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব দূরীকরণে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এবং ব্লক বাটিক/সেলাই প্রশিক্ষণ কোর্স প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশাল প্রাপ্তি।