বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে প্রথমবার স্বাধীন হয়েছিল ভিনদেশ ভারতের সহযোগীতায়। ২০২৪ সালে ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয় স্ব-দেশের তরুণদের নেতৃত্বে আমজনতার সহায়তায়। ১৬ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো শত চেষ্টায় যা করতে পারেনি তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ১ মাস ৫ দিনের মাথায় অসম্ভবকে সম্ভব করে পুরো বিশ্বকে দেখিয়েছেন। এখন নতুন করে দেশ গড়ার সময় এসেছে। ঠিক তেমনি মুহুর্তে উখিয়ার রাজপথে মাঠ দখলে মরিয়া দু”দল। উখিয়ার সচেতন মহল বলছেন, দুই পরিবারের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে উখিয়ার শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে তুলেছে। গত দুই দিনে রাজাপালংয়ের শাহজাহান চৌধুরীর পরিবার ও উখিয়া সদরের মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরীর পরিবারের মধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাংচুর ও মালামাল লুটে শঙ্কিত সাধারণ জনগণ। বিগত ১৫ বছর ধরে উখিয়া ষ্টেশন ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। এ সময়ে এখানে বিএনপি-জামায়াত মিছিল করারও সাহস পায়নি। হঠাৎ করে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলে বিএনপির অল্প সংখ্যক লোক বিজয় মিছিল নিয়ে উখিয়া সদর ষ্টেশনের উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ ষ্টেশনে অগ্রসর হলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজনের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপি স্টেশন ত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ এসে প্রথমে বিএনপির অফিস ভাংচুর করে। পরে বিএনপির অফিসের পাশে সিরাজ সওদাগরের দোকানের মালামাল প্রকাশ্যে লুট করে নিয়ে যেতে দেখেছে স্থানীয়রা। পরের দিন ৬ আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতা দিবসের দ্বিতীয় দিনে বিএনপির অফিসের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী, বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন জামায়াত-বিএনপি। এতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা পুলিশ বক্সসহ বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার জনতার সমাবেশ শেষে ফের বের হয় আওয়ামীলীগ। আগুন সন্ত্রাস ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। । রাজাপালং ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাললাহ উদ্দিন বলেন, আমার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, উভয় পক্ষ এক সাথে সামনা সামনি সংঘর্ষে লিপ্ত হলে গত দুই দিনে শত শত মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। এরই মধ্যে অনেকেই আহত হয়েছেন। উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজলুম জননেতা এডভোকেট শাহজালার চৌধুরী বলেন, আওয়ামীলীগ যা করেছে আমরা তা করবো না। দুর্নীতি লুটতরাজ ও সরকারি টাকা আত্নসাতের কারণে আওয়ামী লীগের চিরতরে কবর রচিত হয়েছে। আমাকে মন্দির পুড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশ ছাড়া করা হয়েছিল। বিগত দশ বছর সমাবেশ করে জনতার সামনে কথা বলতে পারি নাই। উখিয়া টেকনাফে ইয়াবার চাষ করা হয়েছে। সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আর তার শ্যালক জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী ১০ মেট্রিকটন চাউল চুরি করে দুর্নীতি মামলায় সাজা ভোগের অপেক্ষষায় আছে। আওয়ামীলীগ দুর্নীতিবাজ। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে দেশ ও দশের জন্যে কাজ করতে হবে। আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চায়। উখিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল ফজল বলেন, খুনি শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। তারা জামায়াত নেতাদের হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। এরা পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করেছে। কারো প্রতি প্রতিশোধ নয়। ছাত্র জনতার বিজয়ে দেশ গড়ার কাজে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় নেতাকর্মীদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান। উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপত সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, সরকারি অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনি হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলতে হবে। উখিয়াকে শান্তির জনপদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এনজিওদের হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি আরো বলেন, উখিয়ার ছেলেদের চাকরি না দিয়ে তোমাদের শালা (শ্যালক) শালিকে চাকরি দিবা এই এনজিওকে উখিয়ায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। সরকারি অফিসে ঘুষ ছাড়া জনতাকে সেবা দিতে হবে। কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করবেন। কেউ লুটপাট করলে বরদাশত করা হবে না। সরকারি সম্পদ নষ্ট করা যাবে না। সবাইকে তিনি শান্ত থাকার আহবান জানান। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পূর্বে উখিয়া ষ্টেশন জামে মসজিদে দাঁড়িয়ে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গির কবির চৌধুরী বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে উখিয়াকে শান্ত রাখার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের। কোন প্রকার অরাজকতা জান মালের ক্ষতি হয় এমনটি করা যাবে না। এখন উখিয়ার শান্তিপ্রিয় জনতার প্রশ্ন তাহলে উখিয়ার মাঠ ফের উত্তপ্ত কেন? দুই পরিবারের পত্যক্ষ ইশারায় ও মদদে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজ চলছে। সামনে আরো রাজনৈতিক সভা সমাবেশ ও মিছিল হবে।উখিয়ার পরিবেশ যেন আর জটিল না হয়। আপনি আমি সবাই সহিংসতার পথ পরিহার করে উখিয়াকে একটি শান্তিময় বৈষম্যহীন সুন্দর পরিবেশ তৈরি করি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মতে, উখিয়াতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্কিত পরিস্থিতি এড়াতে বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগ তথা উখিয়ার দুই চৌধুরী পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে।