আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে স্বৈরাচারিক ক্ষমতা চালিয়ে সরকারি খাস জমি ও বনভুমির জায়গা ভাড়া নেওয়ার নামে জবরদখল করে দালান মার্কেট নির্মাণ করেছে উখিয়ার স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা শাহাজাহান। সেই মার্কেটের প্রায় ২০/৩০টি দোকানঘর রোহিঙ্গাসহ বেশ কিছু ব্যবসায়ীকে ভাড়া দিয়ে সালামির জামানত বলে লাখ লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ীর।
উখিয়ার রাজধানী খ্যাত কুতুপালং বাজারে সরকারি জমির উপর প্রায় ৩০/৪০ টি দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে টাকা নিচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতা শাহাজাহান। সুত্রে জানা যায়, দোকান ঘর নির্মাণ করা জায়গাটি খাস ও কিছু অংশ বনের। এসব জায়গা দখলসুত্রে মালিক ছিল কুতুপালংয়ের আয়ুব আলী ফকির নামে এক ব্যক্তি।
তাকে সরিয়ে রশিদ আহমেদ নামে আরেক ব্যক্তি আওয়ামীলীগ নেতাকে জমিটুকু ভাড়া দেন। ওই আওয়ামীলীগ নেতা শাহাজাহান জমিতে মাটি ভরাট করে স্বৈরাচারিক ক্ষমতা কাটিয়ে রাতারাতি দালানের মার্কেট স্থাপনা করে পেলেন। তৎসময়ে উখিয়ার সহকারী কমিশনার ভুমি সালেহ আহমেদ বেশ কয়েকবার জায়গায় পরিদর্শন করে বাধা প্রদান করেও থামাতে পারেনি স্থাপনা নির্মাণ কাজ। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে পেলেন।
পরে ওই সরকারি জমির পূর্বের ভোগ দখলীয় মালিক আয়ুব আলী ফকির নামে এক ব্যক্তি আওয়ামীলীগ নেতা শাহাজাহানের বিরুদ্ধে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও উচ্ছেদ মামলা দায়ের করেন কক্সবাজার আদালতে। এ মামলা বর্তমানে উচ্ছেদেরর জন্য রায় হয়েছে বলে বাদিপক্ষ জানিয়েছেন প্রতিবেদককে। কিন্তু এই আওয়ামীলীগ নেতা শাহাজাহান এসব উচ্ছেদ কারবার ঠেকাতে বিভিন্ন ফাঁকফোকর চালাচ্ছে বলেও জানান তারা।
এছাড়াও এই খাস জমির সাথে লাগোয়া বনের জমিও জবরদখল করে ঘেরাবেড়া দিয়ে রেখেছে এই আওয়ামীলীগ নেতা।
তিনি উখিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজাপালং ৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে নৈরাজ্যের ইস্যু তৈরি করতেন। মানুষের কাছে গিয়ে প্রয়োজন দেখিয়ে টাকা ধার নিয়ে আর ফেরত দিতেন না। পাওয়ানা টাকা চাইতে গেলে উলটো ধমক দিতেন এমন তথ্যেও দিয়েছেন স্থানীয়রা।
তিনি কুতুপালং বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে অনৈতিক সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলেও লাখ লাখ টাকা মেরে দিয়েছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
৫ই আগষ্টের পরে দুর্নীতিবাজ আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে গনহারে মামলা হলেও এই প্রতারক ও জবরদখলকারী আওয়ামী নেতা শাহাজাহানের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। আবার অনেক নিরহ আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছে,শাহাজাহান এক সময় ভালো ছিল। আওয়ামীলীগের পদ পাওয়ার পর থেকে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছিল। মানুষের জমি জবরদখল করে অনেক সম্পদ অর্জন করেছে। সরকারি জায়গায় দোকান নির্মাণ করে সালামির জামানত বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা মেরে দিয়েছেন। আবার অনেকের সাথে বিভিন্ন অজুহাতে প্রতারণা করেছেন। যা এলাকায় নিয়মিত আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
তার হুমকি ধামকি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কাছে পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ অসহায় ছিল।
সরকারি জমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে দোকানঘর ভাড়া দিয়ে সালামির নামে ৮০ টাকা মেরে দিয়েছেন ইসমাইল নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। তিনি জানিয়েছেন, শাহাজাহান তার দোকান ঘর ভাড়া দিয়েছিল সকলের ন্যায় আমিও সালামি দিয়েছিলাম। পরবর্তী দোকান নিয়ে পেলে কিন্তু সালামির টাকা গুলো ফেরত দেয়নি। আজ কাল বলে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকে। এখনো টাকা ফেরত পাইনি।
উখিয়া রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার গাজী শফিউল ইসলাম জানিয়েছেন, বনাঞ্চলের জায়গায় যে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উখিয়া রেঞ্জ কঠোরভাবে কাজ করে। কেউ আইনের উর্ধে নই। যতবড় রাজনৈতিক ব্যক্তি হউক না কেন বনের ক্ষতি যারা করেছে সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে আমরা সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। শাহাজাহানের বিরুদ্ধেও উখিয়া রেঞ্জ খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নিবে।
উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভুমি) যারীন তাসনিম তাসিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জবরদখলকারীর তথ্য দিন তদন্তপুর্বক অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।