কক্সবাজারের উখিয়ায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বনের কর্তা ব্যক্তিরা গড়িমসি করার কারণে এ উপজেলার ২১ হাজার একর বনভূমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। প্লট আকারে বন ভূমির দখল, ক্রয়-বিক্রির পর পরই গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার অবৈধ স্থাপনা। বনকর্মীরা নামে মাত্র মাঝে মধ্যে হানা দিয়ে হাতেগোনা কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করলেও বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্রের হাতে গড়া আলিশান বাসা-বাড়ি। পরিবেশবাদী সচেতন মহল মনে করেন, বৃহত্তর বনভূমি সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় এনে সুফল ভোগীদের মাধ্যমে বনায়ন সৃজনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সরকারি বনভূমি হাতছাড়া হওয়ার সুযোগ ছিল না।
সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সরকার সারা দেশে একযোগে লট নিলাম প্রথা বন্ধ করে দেয়ার ফলশ্রুতিতে অবৈধ উপায়ে বন সম্পদ লুটপাট, পাচার শুরু হয়। এ সময় বন বিভাগের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এলাকার সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী চক্রের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা সরকারি বন সম্পদ লুটপাট চালিয়ে সড়ক ও নৌ-পথে সমান তালে পাচার কাজ অব্যাহত রাখে। যে কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকার বন সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়। বন বিভাগের দুর্নীতি পরায়ণ কর্তাব্যক্তিরা লোকবল সংকটের অজুহাতে টু’পাইস ইনকামের সুযোগ সৃষ্টি করে। সরকার বনভূমি রক্ষা করে বন সম্পদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নিয়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বন বাগান সৃজনের নীতিমালা তৈরি করে যথাসময়ে তা বাস্তবায়ন করে। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেশের বনভূমি উপকারভোগীদের হস্তান্তর করে বনায়ন সৃজনের জন্য নিজ নিজ বন রেঞ্জে পরিপত্র জারি করে। এরই ধারাবাহিকতায় উখিয়া বন রেঞ্জের আটটি বন বিটের আওতায় ২১ হাজার একর বনভূমির হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে। উখিয়া সদর বিটের অধীনে ২২০ একর, দোছড়ি বিটের ২২৫ একর, উখিয়ার ঘাট বিটের ২৭৫ একর, ভালুকিয়া বিটের ৩৬০ একর, হলদিয়া বিটের ১৭৫ একর, মোছারখোলা বিটের ২০০ একর বনভূমি সামাজিক বনায়নের আওতায় আনা হয়। অর্থাৎ উপজেলার ২১৪০২ একর মোট বনভূমির ১৯৪৫ একর বনভূমিতে বনায়ন সৃজন করা হলেও অবশিষ্ট ২০৪৫৫ একর বনভূমি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে উখিয়া রেঞ্জের অধীনে উখিয়া সদর বন বিট, থাইংখালী বন বিট ও ভালুকিয়া বিটের ১০০ একর বনভূমিতে সামাজিক বনায়ন করার জন্য প্রায় ২ শতাধিক উপকারভোগীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হলে দীর্ঘ তিন বছর পর ২০১৩ সালে উক্ত উপকারভোগীদের মাঝে দলিল হস্তান্তর করা হয়। যার ফলে উল্লেখিত বনভূমিতে প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যুরা দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেছে। যে কারণে বন বিভাগ সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের দলিল হস্তান্তর করলেও অবৈধভাবে বসবাসকারী জবর দখলকারীদের উচ্ছেদ করতে না পারায় সামাজিক বনায়নের প্রকল্প নামে মাত্র কাগজে-কলমে রয়েছে।
এ বিষয়ে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপকারভোগীদের মাঝে দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। উচ্ছেদের ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের নির্দেশক্রমে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।