রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে
খাইরুল আলম চৌধুরী। একসময় ছিলেন উখিয়া উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও কক্সবাজার জেলা বিএনপি’র সদস্য। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নিজের রূপ পাল্টে ফেলেন। ভিড়ে যান আওয়ামী লীগে। সাবেক এমপি বদিসহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য।
আওয়ামী লীগের তিন আমলে চলতেন দাপটের সঙ্গে। ছড়ি ঘুরাতেন বিএনপি নেতাদের ওপর। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফের পাল্টে ফেলেন নিজের রং। এবার ভেড়ার চেষ্টা করছেন জেলা বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে।
সম্প্রতি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে শাজাহান চৌধুরীর সঙ্গে খায়রুল আলমের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিটি নিয়ে বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, তিনি খায়রুলের রোষানলে পড়ে ১৫ বছর ধরে আওয়ামী দুঃশাসনের শিকার হয়ে অনেক দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন। অথচ সেই খায়রুলের সঙ্গে আমাদের বড় বড় নেতারা বিয়েতে কাচ্চি বিরিয়ানি খাচ্ছেন দেখে তিনি নীরবে চোখের জল ফেলেছেন।
বিএনপি নেতারা জানান, একসময়ের বিএনপি’র নেতা খায়রুল আলম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি সাবেক বিতর্কিত এমপি আবদুর রহমান বদির সঙ্গে সখ্য গড়েন।
বিগত ১৫ বছর খায়রুল ছিলেন বদির সমস্ত অপকর্মের সহযোগী। তিনি বদির অন্যতম ক্যাশিয়ার হিসেবেও পরিচিত। বদির সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক রেখে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, বদির শ্যালক, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীরও অন্যতম সহযোগী ছিলেন এই খায়রুল। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদেরও একজন ছিলেন তিনি।
জানা গেছে, খায়রুল আলম সাবেক এমপি বদির সহযোগী হয়ে চলেছেন রাজার হালে। সেই ক্ষমতার জোর খাটিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই অংশের উপরই। কেবল যারা তার কথামতো চলতেন, তার সঙ্গে সখ্য রাখতেন তারাই এমপি বদির সান্নিধ্য পেতেন।
১৫ বছর তিনি যে সুযোগ- সুবিধা ভোগ করেছেন তার কিয়দংশও চোখে দেখেনি আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। একইভাবে বিএনপি’র যেসব নেতাকর্মী তার কথা শুনতেন না, তাদের ওপর বিভিন্ন হুমকি-ধমকি নেমে আসতো। আর যারা তার সিন্ডিকেটে থাকতেন তারা থাকতেন সুবিধাজনক অবস্থায়। এ কারণে আওয়ামী লীগ- বিএনপি দুই অংশের নেতাকর্মীরাই তার ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।
খায়রুল আলম এমপি বদির এত ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বদির প্রথম নির্বাচনে বিপুল অর্থকড়ি দিয়ে সাহায্য করেছিলেন খায়রুল। সেই নির্বাচনে বদির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী।
তখন খায়রুলও বিএনপি’র দলীয় এমপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত ছিলেন এবং নিজেও জেলা বিএনপি’র নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র দুই এমপি প্রার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও জয়ী হয়ে আসেন বদি। সেই নির্বাচনে বদি জয়ী হওয়ার পর থেকে বদির একনিষ্ঠ লোক হয়ে ওঠেন খায়রুল। পরবর্তীতে বদির হয়ে তিনটি জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করেন খায়রুল। বিভিন্ন ইউপি নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে তিনি তৎপর থাকতেন।
শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে কারা নেতা নির্বাচিত হবেন সেখানেও তার পছন্দ- অপছন্দ কাজ করতো। বদির সঙ্গে সম্পর্ককে পুঁজি করে তিনি তার স্বার্থ হাসিল করে নিতেন। ধুরন্ধর খায়রুল রত্না পালং ইউপি নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা চেয়ারম্যানকে কোণঠাসা করতে নানা ফন্দিফিকির করে আসছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে নিজের কব্জায় নিয়ে নুরুল হুদাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে নীলনকশা এঁটেছিলেন। খায়রুল নিজে আওয়ামী লীগের খাতায় নাম লেখিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে চেয়েছিলেন। সেভাবেই সব কিছু ঠিকঠাক করা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে বদি, খায়রুল ও জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বহুরূপী অবস্থানের বিষয়ে খায়রুল আলম চৌধুরী বলেন, ২০১৬ সালের ২৮ মে পর্যন্ত আমি জেলা বিএনপির নির্বাহি কমিটির মেম্বার ছিলাম। তখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে জয় পেয়েছিলাম। এসময় এমপি ছিলেন আবদু রহমান বদি। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে একজন এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে যতটুকু যোগাযোগ রাখা দরকার ততটুকুই সম্পর্ক ছিল তাদের সাথে। কিন্তু তাদের কোন দলীয় প্রোগ্রামে আমি গিয়েছি এমন নজির নেই। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ায় বিএনপি আমায় বহিষ্কার করলেও অন্য কোন দলে যাইনি। জেলা বিএনপি সভাপতির ভাইঝি ও উপজেলা বিএনপির আহবায়কের মেয়ের বিয়েতে দাওয়াত পেয়ে হাজির হয়েছিলাম। সেখানে অন্যদের মতো বধুর জেঠার জেলা বিএনপির সভাপতির সাথে আমার ছবিও হয়তো উঠেছে। এটা নিয়ে এত মাতামাতির কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। নির্বাচন কেন্দ্রিক শত্রুতার জের ধরে এসব অপপ্রচার বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুত্র,মানবজমিন