উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫/১০/২০২৪ ৬:৫১ পিএম , আপডেট: ১৫/১০/২০২৪ ৮:১১ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দুটি কলেজের ফল বিপর্যয় ঘটেছে। প্রকাশিত ফলাফল বিপর্যয়কে অনেকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা বলে মনে করছেন। কলেজে রাজনৈতিক চর্চাকেও দায়ী করেছে অনেক অভিভাবক।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উখিয়া কলেজ ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৩৬.০৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ৭৭৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও পাস করেছে মাত্র ২৮০ জন। ফেল করেছেন ৪৯৪ জন শিক্ষার্থী। কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পায়নি।

শুধু তাই নয়, উপজেলার আর এক মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের ফলাফলাও চরমভাবে বিপর্যয় হয়েছে। কলেজটি থেকে এ বছর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়ী শিক্ষা শাখা থেকে ৮১৩ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পাস করেছেন ৩৭৭ জন। ফেল করেছেন ৪৩৬ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৪৬.৩৭ শতাংশ। কলেজটি থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী। উখিয়া উপজেলার দুটি কলেজের ফলাফলে এইচএসসিতে মোট পাসের হার ৪১.৪০ শতাংশ।

উখিয়া উপজেলার দুইটি কলেজ থেকে এ বছর ১৬৮৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। তার মধ্যে পাস করেছে ৬৫৭ জন ও ফেল করেছে ৯৩০ জন শিক্ষার্থী। চরমভাবে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণে অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে বরাবরের মতোই সন্তোষজনক ফলাফল ধরে রেখেছে উপজেলার একটি ফাজিল ও দুইটি আলিম মাদ্রাসা। আলিম পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর ৮১ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। তার মধ্যে পাস করেছে ৭৮ জন আর ফেল করেছে ২ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৭.৫৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ শিক্ষার্থী।

ফারিরবিল মিনহাজুল কোরআন ওয়াচ্ছুন্না আলিম মাদ্রাসা থেকে ৩২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৩১ জন ফেল করেছে মাত্র ০১ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৯৬.৮৮ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ জন।

রূমখাপালং ইসলামীয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাস করেছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬ জন শিক্ষার্থী। উপজেলার তিনটি মাদ্রাসা থেকে মোট ১৬৩ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৬০ জন। মোট পাশের হার ৯৮.১৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১২ জন শিক্ষার্থী।

অপরদিকে উপজেলার দুইটি ভোকেশনাল কলেজ থেকে ১৫৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ১৪৮ জন। তার মধ্যে নুরুল ইসলাম চৌধুরী বিএম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৮২ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৮০ জন। ফেল করেছেন মাত্র ২ জন। কলেজটির পাসের হার ৯৭.৫৬ শতাংশ।

উখিয়া কলেজের বিএম (ভোকেশনাল) শাখা থেকে ৭৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৬৮ জন। উখিয়া কলেজের বিএম শাখার পাশের হার ৮৮.৩১ শতাংশ। উপজেলায় ভোকেশনালে মোট পাসের হার ৯৩.০৮ শতাংশ। ভোকেশনাল থেকে এ বছর কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পায়নি।

উখিয়া উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (অ্যাকাডেমিক) সুপারভাইজার বদরুল আলম জানান, শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তির সময় আসে। আর বাকি সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি করে। মূল্যায়ন পরিক্ষায় অকৃতকার্য হলে রাজনৈতিক চাপ দিয়ে পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য তদবির নিয়ে আসে। এখন ফলাফলের বিপর্যয়।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদাসীনতার কারণে ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে প্রতিবছর। শিক্ষকদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম জানান, শিক্ষার্থীরা অনেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাকরি নিয়ে বছরজুড়ে ব্যস্ত থাকে। পরীক্ষা আসলে দৌড়ে, কীভাবে ফলাফল ভালো হবে। তিনি অভিভাবক ও শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হতে হবে বলে মনে করেন।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন বলেন, উপজেলায় এইচএসসি পরিক্ষায় বার বার ফল বিপর্যয়ের দায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা এড়াতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। মাদ্রাসা ও ভোকেশনালের ফলাফল ভালো করতে পারলে কলেজের ফলাফল কেন বিপর্যয় হচ্ছে তা দেখার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫ বছরের ফলাফল পর্যালোচনায় উখিয়া কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র ৩৭ জন শিক্ষার্থী, তার মধ্যে পাস করেছে ১৮ মাত্র জন, ফেল করেছে ১৯ জন। একজন। ২০২৩ সালে উখিয়া কলেজের পাসের হার ছিল ৩০.২৯ শতাংশ।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টার সহকারি প্রেস সচিব বর্তমান সরকারের সমালোচনা করুন মন খুলে

‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে মন খুলে সমালোচনা করা যাবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুস নিজেই ...