উখিয়ার বালুখালীতে ফুটবল টুর্নামেন্টে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের সমাগমের ঘটনায় থানার পুলিশ এ্যাকশনে নেমেছে । গতকাল দুপুরে বালুখালী ও কুতুপালং সহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় পুলিশের পক্ষে মাইকিং করে যে কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন না করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয় ।
গতকাল বুধবার দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় ‘উখিয়ার বালুখালীতে ফুটবল টুর্নামেন্টে রোহিঙ্গ ঢল!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
গতকাল দুপুরে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ বালুখালী ফুটবল খেলার অস্থায়ী মাঠে মাঠে গিয়ে হানা দেয়। উখিয়া থানার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে উখিয়া থানার ওসি বলেন , বিনা অনুমতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ফুটবল সহ যে কোন টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। হাজার রোহিঙ্গা দর্শকের সমাগম ও টাকার বিনিময় বেআইনিভাবে টিকেট বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া অন্যায়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ও যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয় । এই আদেশ অমান্য করে টুর্নামেন্ট পরিচালনা করলে যে কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও আয়োজক কমিটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সচেতন গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন , বালুখালী পান বাজারের দক্ষিণ পাশে ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে গত মঙ্গলবার ফজল কাদের চৌধুরী ( ভুট্টো) ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করা হয় । উক্ত খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার রোহিঙ্গার সমাগম ঘটে। টাকা দিয়ে টিকিটের বিনিময় রোহিঙ্গারা মাঠে প্রবেশ করে । বিশেষ করে ফুটবল খেলা দেখার নামে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ায় সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্বরত আর্মড পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে এসে লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে তা নিয়ে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে ।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে উল্লেখ করেছেন, উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত ফুটবল টুর্ণামেন্টে কোনভাবে রোহিঙ্গা খেলোয়াড় খেলায় অংশগ্রহণ ও রোহিঙ্গা দর্শক সমাগম ঘটিয়ে টুর্ণামেন্টের খেলা আয়োজন করা যাবে না । রোহিঙ্গা খেলোয়ার বা দর্শক সমাগম ঘটে এমন সকল খেলা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
এই আদেশ অমান্য করে টুর্নামেন্ট পরিচালনা বা খেলার আয়োজন করা হলে খেলা আয়োজন কারীর প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
উখিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার বলেন, বালুখালী ও কুতুপালং সহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় অস্থায়ী মাঠ বানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা এবং হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের সমাবেশ ঘটানো খুবই উদ্বেগ ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । উপজেলা প্রশাসন ও উখিয়া থানা পুলিশ টুর্নামেন্ট বন্ধে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় সচেতন মহল সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে আমি এখন পাগল হয়ে গেছি৷ রোহিঙ্গারা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে৷ তারা খেলা দেখা বা বাজারের বাহানা দিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে৷ এমন অবস্থায় উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব ও উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী টুনার্মেন্ট বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে। এটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
পাঠকের মতামত