এম,এস রানা উখিয়া ::
দক্ষিণ কক্সবাজারের রামু উখিয়ার অধিকাংশ জেলেদের আয়ের উৎস রেজু খাল। এই রেজু খালে রয়েছে নানান প্রজাতির মাছ। এই খালের মাছ সাগর কিংবা পুকুরের মাছের চেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় প্রচুর চাহিদা থাকায় অন্যান্য মাছের তুলনায় দামও একটু বেশি। তবুও মানুষ মাছ বাজারে গেলে রেজু খালের মাছ বাজারে যাবেই যাবে। কিন্তু এই রেজু খালের মাছ হুমকির মুখে পড়েছে ভয়ংকর সাকার ফিসের উপস্থিতিতে। জেলেদের জালে আটকা পড়ছে সাকার ফিস,সম্প্রতি রেজু খাল থেকে এক জেলে মাছ ধরে বাজার বিক্রি করার সময় নজরে পড়ে প্রায় ৩,শ গ্রাম ওজনের এই সাকার ফিস। বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে রেজু খাল থেকে জেলেরা ইতিপুর্বে অনেকবার এনেছিল সব মাছ মরে গেলেও এই মাছ মরে না, তবে কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় তা ফেলে দেয়া হয়েছে বহুবার।
আসল নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিস। তবে সাকার ফিশ নামেই অধিক পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর সাকার ফিস এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে জলাশয় খাল বিলে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাকার ফিস উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালি বাউস, মাগুর ও শিং মাছসহ ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। জানা যায় এই মাছটি ২০০১ বা ২০০২ সালের দিকে ইউরোপের এক কূটনীতিক মেয়াদ শেষে চলে যাওয়া আগে ঢাকার গুলশান লেকে ছেড়ে দেন। এরপর সেখান থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এটি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতির সাকার ফিশ ১৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে।’মৎস্য আইন ২০১১ অনুযায়ী বাংলাদেশে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্ষতি সাধন করে, এমন যেকোনো বিদেশি মাছ আমদানি ও চাষ দণ্ডনীয় অপরাধ।
অ্যাকুরিয়ামের শোভাবর্ধক এই সাকার ফিস উন্মুক্ত পরিবেশ পেয়ে আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। দ্রুত বংশবিস্তার ও প্রচুর খাদ্য গ্রহণের কারণে জলাশয়ের মাছসহ অন্যান্য প্রাণী হুমকির মুখে পড়ছে। এরই মধ্যে এই সাকার ফিসের কারণে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশের মৎস্য খাত। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী এই সাকার ফিস কীভাবে জলাশয়গুলোতে ছড়াচ্ছে তার সঠিক তথ্য জানে না কেউ। আর দেশের মৎস্য খাতকে ধ্বংস করতে এটি দেশের প্রত্যন্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক কোনো চক্র জড়িত কিনা, এমন প্রশ্ন এখন অনেকের। সাকার ফিস এখন মাছ চাষিদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কি ভাবে যে এতো দ্রুত দেশের আনাচকানাচের খাল বিল পুকুর জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ছে তা অনেকের কাছে বোধগম্য নয়। বিশেষ করে রেজু খালে ভয়ংকর সাকার ফিসের উপস্থিতি স্থানীয় জেলেদের মাঝে আতংকের কারন হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞ দের অভিমত এই সাকার ফিস এখন আমাদের জাতীয় শত্রু হয়ে দাড়িয়ে। দেশীয় মাছ রক্ষার সার্থে সাকার ফিস দেখা মাত্র মেরে ফেলতে হবে।
পাঠকের মতামত