স্থানীয় দালাল চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উখিয়ার লোকালয়ে রোহিঙ্গারা বাসা ভাড়া নিয়ে বসতি গড়ে উঠেছে। এসব চক্রের মাধ্যমে তারা কৌশলে জন্মনিবন্ধন, এনআইডি, পাসপোর্ট ও করে নিচ্ছে। স্থানীয়দের সাথে মিশে বাংলাদেশীর ভাব নিয়ে চলাপেরা করছে তারা।
দালাল চক্রের রোডম্যাপ অনুযায়ী তারা দীর্ঘদিন বসবাস করার পর বিভিন্ন কলাকৌশলে নিজেদের বাংলাদেশী পরিচয় বহন করতে রোহিঙ্গা ছেলে মেয়েদের সাথে বাংলাদেশী নাগরিকের বিবাহ করান । বিবাহের পরে স্থানীয় শাশুর বাড়ির পরিবারসহ দালাল চক্রের সাথে আঁতাত করে তারা জায়গা জমি ক্রয় করে স্থায়ী বসতি স্থাপনা করেন। তারপরে মায়ানমার কেন্দ্রীক বিভিন্ন চোরাইপন্যের ব্যবসা বানিজ্য করে বাংলাদেশীদের জড়িয়ে বিভিন্ন প্রভাবশালীর আশ্রয় নেন। এসব প্রভাবশালীর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশি এন আইড়ি ও অন্যন্য সনদপত্র হাতিয়ে নেন। এভাবেই তারা বাংলাদেশি বনে উখিয়ার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে বসবাস করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পালংখালী, রাজাপালং, জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং ইউনিয়ন সহ উখিয়ার প্রত্যেক গ্রামাঞ্চলে রয়েছে এসব রোহিঙ্গাদের বসবাস ।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রহমত আলী নামে এক রোহিঙ্গা স্থানীয় মেয়ে বিয়ে করে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে বসতি গড়ে তুলেন। তাদের সংসারে ৭জন ছেলে মেয়ে জন্ম নেয়, রিনা আক্তার, হামিদা আক্তার, মোহছেনা আক্তার, নুরুল আমিন, মুন্নী, তুফা আক্তার, মনিয়া। তাদের মাতা গোলতাজ বেগম বাংলাদেশী নাগরিক হলেও পিতা রহমত আলী রোহিঙ্গা হওয়ার সুবাধে কেউই আইডি কার্ড করতে পারেনি তারা। আবার অনেকেই দালাল চক্রের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন করার গুঞ্জন রয়েছে। এর মধ্যে রিনা আকতার লাখ টাকা খরচ করে পাসপোর্ট করে নিয়েছেন আইডি কার্ড ছাড়াই। যা এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
একই এলাকায় আরেক রোহিঙ্গা লোকমান হাকিম একি কায়দায় স্থানীয় মেয়ে বিয়ে করে ৫ সন্তান নিয়ে বসতি শুরু করেন, লিয়াকত আলী প্রকাশ চুর বুলাইঙ্গা, মুন্নি, আলমগীর ছুট্টু,ভাটকাইন্না, রোহিঙ্গা লোকমান ও স্থানীয় মনোয়ারা বেগমের ছেলে মেয়ে। তারাও স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল চক্রের মাধ্যমে কেউ কেউ জন্মনিবন্ধন করেছে আবার কেউ করতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশীর ভাব-সাব নিয়ে চলাপেরা করছে তারা। চুরি চামারি, মায়ানমার কেন্দ্রীক অবৈধ পন্যের লেনদেনসহ বিভিন্ন অপকর্মে তারা সক্রিয় ভাবে কাজ করে।
রাজাপালং ইউনিয়নে এসে দেখা যায় হাজম রাস্তার পাশে ৪ টি রোহিঙ্গা পরিবার বন বিভাগের জায়গায় বসতি স্থাপনা করেছেন। ইদ্রিস নামে এক রোহিঙ্গা প্রথমে তারা ২ জন রোহিঙ্গা আসলেও পরে তার মা, বোনসহ আরো ২ টি রোহিঙ্গা পরিবার বসতি গড়ে তুলে। স্থানীয়দের মতে, তারা কৌশলে দালাল চক্রের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশী বনে গেছে।
একই এলাকার পার্শ্ববর্তী একটি মাজারের খাদেম রয়েছে তাকে এলাকায় ইয়াবা আলী বলে সম্বোধন করেন। সে স্থানীয় হলেও তার পরিবারের সকল সদস্য রোহিঙ্গা। তার বউ, শ্যালক-শ্যালিকা সবাই একই বাড়িতে থাকেন। পরবর্তী আলাদা আলাদা করবে দালাল চক্রের মাধ্যমে। স্থানীয়রা বলছে সবাই ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত তারা। তাদের বিরুদ্ধে মাদক মামলাও রয়েছে।
এভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে উখিয়া উপজেলার আনাচে-কানাচে রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে নামে-বেনামে ছদ্মবেশে দালাল চক্রের সহায়তায় লোকালয়ে বসতি শুরু করে বাংলাদেশী বনে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছে, মাদক কারবার,চুরি ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসব বেওয়ারিশ রোহিঙ্গা বেড়ে যাওয়া। তারা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে স্থানীয় কিছু দেশদ্রোহীদের খপ্পরে পড়ে এসব কাজ শুরু করেছে। তাদের এখনই লাগাম টেনে না ধরলে ভবিষ্যতে উখিয়া টেকনাফ বড় হুমকির মুখে পড়বে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা ভিত্তিক ইউএনও চাইলে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিও মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত