উখিয়ার থাইংখালিতে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৫০টি স্পটে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ২৭ টি পাহাড়ে মহা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে বালু খেকো সিন্ডিকেট। বালু ইজারার নামে একের পর এক পাহাড় গিলে খাচ্ছে তারা। এতে করে পরিবেশ বিপর্যয় সহ পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কা করছে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ।
উখিয়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানান বালু ইজারাদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি সংরক্ষিত পাহাড়ের মাটি কর্তন করছে। অভিযান চালিয়ে বালু ও মাটি ভর্তি ডাম্পার আটক করলে সিন্ডিকেট সদস্যরা ইজারা বা লিজ নেওয়ার কাগজপত্র প্রদর্শন করে । ফলে বন বিভাগ এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে ।
অনুসন্ধান নিয়ে জানা গেছে , উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের থাইংখালীর মোছার খোলা, বর তলী, মধু ছরা, পালং খালী খালের আগা , পেচা মরা, তিপপা খালী, রিতুর খোলা, চিতা খোলা জামবুনিয়া ছরা, ফইল ফাঁড়ি সহ ৫০ টি স্পটে পাহাড় কর্তন ও বালু উত্তোলন করছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন , ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বালু ও মাটি সিন্ডিকেটের রয়েছে দুই থেকে আড়াইশত ডাম্পার গাড়ি । সরকারি বনবিভাগের অন্তত ২৭ টি বড় বড় পাহাড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, পাহাড়ের ড্রেজার মেশিন ও খালে পাম্প মেশিন বসিয়ে হাজার হাজার ঘনফুট বালু আহরণ করে । যার ফলে পাহাড়গুলো ধ্বংসস্তূপ পরিণত হয়েছে ।
তিনি আরো বলেন চিহ্নিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দুই-আড়াই শত ডাম্পার দিয়ে যত্রতত্রভাবে বালু ও মাটি পাচার করায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও ব্রীজ সমূহ বিধ্বস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ।
চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার ভূমিকা কি জানতে চাইলে , তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন সরকারি পাহাড় রক্ষা ও এলাকায় নির্মিত ব্রিজ কালর্ভাট এবং কার্পেটিং সড়ক গুলো রক্ষার জন্য বালু ও মাটি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তারা উল্টো আমাকে টার্গেট নিয়েছে । এমনকি আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা পর্যন্ত দায়ের করেছে । এরপরও পাহাড় কর্তন ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রতিবাদ করে যাবো।
এদিকে বন বিভাগ পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ২৭ টি পাহাড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দুই /আড়াই শত অবৈধ ডাম্পার দিয়ে প্রকাশ্য বালু ও মাটি পাচার করার ঘটনা নিয়ে নাগরিক সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থাকার পরও কিভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে । সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের উখিয়া সভাপতি আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ সিকদার এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , থাইংখালীতে মাত্র ৭ একর ২৩ শতক খাল / ছরা কি ভাবে কোটি টাকার উপর লিজ দিয়েছে প্রশাসন। বন বিভাগের মতে এ পরিমাণ জায়গায় দুই লাখ টাকার মত বালু পাওয়া যাবে ।
উখিয়া বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বলেন , মাত্রাতিরিক্ত বেশি দামে খাল লিজ নিয়ে ইজারাদার টাকা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি সংরক্ষিত পাহাড়ে ধ্বংসস্তূপ চালাচ্ছে । এতে অভিযান করলেই লিজের কাগজ দেখায় । বন বিভাগ এক প্রকার জিম্মি দশায় পড়েছে ইজারাদারের হাতে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব জানান, থাইংখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে পাহাড় কর্তন ও বালু উত্তলনের খবর পেয়ে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে বালু ভর্তি ডাম্পার জব্দ করা হয়েছে । পাহাড় কর্তন বন্ধে অভিযান করতে গিয়ে গহীন পাহাড়ের ২ টি অবৈধ অস্ত্রসহ গোলাবারুদ উদ্ধার করার কথাও জানান তিনি। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে , জেলা প্রশাসনের সাথে আলাপ করে অভিযান পরিচালনার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন ।
পাঠকের মতামত