উখিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরটি যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। গভীর নলকূপ স্থাপন, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন নির্মাণ, স্কুলে ব্লকওয়াশ ও বিভিন্ন স্টেশনে হ্যান্ড ওয়াশ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সাবেক সাংসদ শাহীন আক্তারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১৩০ টি নলকূপ স্থাপনের অভিযোগ নিয়ে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির ঘটনা জানাজানি হওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে উক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন ও চলমান প্রকল্প স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যার স্বারক নম্বর ৫৩(২) তারিখ ৩০/৯/২০২৪। প্রকল্প স্থগিতের অফিস আদেশে স্বাক্ষর করেছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জি এম মুকতাদির।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২৩- ২০২৪ অর্থ বছরে উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ১৩০ টি গভীর নলকূপ স্থাপনের বরাদ্দ পাওয়া যায়। বরাদ্দের মধ্যে ৬৫ টি উপজেলা পরিষদ বা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ৬৫ টি জাতীয় সংসদ সদস্য তালিকা প্রদান বা সাইট সিলেক্ট চূড়ান্ত করে থাকে। সেই তালিকা অনুযায়ী উখিয়া সহকারী প্রকৌশলী কার্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা কথা। এতে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় দেড় কোটি টাকার অধিক।
অভিযোগ উঠেছে, উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ১৩০ টি গভীর নলকূপ স্থাপনের তোড়জোড় শুরু করে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শরীফ ইমতিয়াজ গভীর নলকূপ স্থাপনের কথা বলে প্রতিটি বাড়ির মালিক থেকে ২০/২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপ সহকারি প্রকৌশলী শরিফ ইমতিয়াজ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তখনকার রাজনৈতিক বিবেচনায় নলকূপে স্থাপনে সাইট সিলেক্ট করা হয়েছিল। সরকারি ফি চেয়ে কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়নি।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর আশুগঞ্জের মেসার্স নুর এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য কার্যাাদেশ প্রদান করেন। যার স্বারক নম্বর ৪৭৫ তারিখ ৩০/৪/২০২৪ ইংরেজি। সেই সুবাদে গভীর নলকুপ স্থাপনের কাজও শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে গভীর নলকূপে স্থাপন সহ বিভিন্ন চলমান প্রকল্পে অনিয়ম দূর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জি এম মুকতাদির বলেন, আমি এই অফিসে কেবল নতুন যোগদান করেছি। তবে কিছু কিছু অভিযোগ শুনছি এবং বিষয়গুলো আমলে নিয়ে তদন্ত সহ মনিটরিং করা হচ্ছে।
উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী জি এম মুকতাদির স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, নিরাপদ পানি সরবরাহ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে বাস্তবায়নাধীন গভীর নলকূপ স্থাপন সহ সকল কাজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্টভাবে সাইট সিলেক্ট না আসা পর্যন্ত প্রকল্প স্থগিত রাখার জন্য বলা হয়। অন্যথায় এর দায় দায়িত্ব দপ্তর বহন করবে না।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শরীফ ইমতিয়াজ গভীর নলকূপ স্থাপন কার্যক্রম স্থগিত রাখার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেন।
পাঠকের মতামত