সরওয়ার আলম শাহীন,উখিয়া নিউজ ডটকম::
উখিয়া উপজেলার কুতুপালং বনভূমির পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরত রোহিঙ্গা বস্তিতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আমেজ নেই। নুন আনতে পান্থা ফুরায় এসব পরিবারগুলো শাক মরিচ দিয়ে রোজা রাখলেও ইফতার করতে হয়েছে পানি দিয়ে। অভাব, অনটন, হানাহানি, মারামারি যাদের নিত্যদিনের সাথী, তাদের আবার ঈদ কিসের। এমনটাই হতাশা ব্যক্ত করলেন অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিক।
জানা গেছে, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সীমান্তের নাফ নদী ও পাহাড়ী জনপদ অতিক্রম করে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা কুতুপালং এলাকায় বনভূমির পাহাড় দখল করে ঝুপড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করলে বনকর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা বনকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে তৎকালীন জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উখিয়া থানা পুলিশ ও বনকর্মী যৌথ অভিযান চালিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক ওই সব রোহিঙ্গাদের কোন প্রকার আর্থিক ও মানবিক সাহায্য সহযোগীতা না করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সহ সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ প্রদান করেন।
সরকারি, বেসরকারি সাহায্য সহযোগীতা বঞ্চিত এসব রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ জীবন জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন অনৈতিক পেশায় জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে কুতুপালং বস্তি একটি অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিণত হলেও ক্যাম্প ইনচার্জ তাদের অনৈতিক কাজের দায়-দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণের কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে জানান, এরা অবৈধ রোহিঙ্গা তাই এদের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে দেখা যায়, অস্তিত্বকর পরিবেশ, নোংরা আবর্জনার উপর ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে। ছিন্নমুল রোহিঙ্গা মহিলারা ঝুপড়ির দুয়ারে বসে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাংবাদিকদের দিকে। জানতে চাওয়া হলে বিধবা মহিলা মরিয়ম খাতুন (৪৫) জানান, ২/৩ বছর হয় ৫টি ছেলে সন্তান রেখে স্বামী উধাও হয়ে গেছে। যেখানে রাতের খাবার চাউল নেই, তাদের আবার ঈদ কিসের। বস্তির পাহাড়ের নিচে এক ঝুপড়িতে বসে আছে ৭০ বছর বয়স্ক মহিলা দিলোয়ারা খাতুন। রোজা রাখার কথা জানতে চাওয়া হলে সে জানান, শাক মরিচ দিয়ে দুমোটো ভাত খেয়েছি, ইফতারির কিছু নেই। সে আরো জানান, ঈদের সময় হলেও সরকার তাদের কিছু সাহায্য সহযোগীতা করলে ছেলেমেয়েরা খুশি মন নিয়ে ঈদ কাটাতে পারত। এভাবে অসংখ্য রোহিঙ্গা নর-নারী তাদের আকুতি মিনতি ও হতাশার কথা ব্যক্ত করে। এ ব্যাপারে স্থানীয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির সদস্য সচিব নুর মোহাম্মদ সিকদারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ওইসব অবৈধ রোহিঙ্গাদের আর্থিক ও মানবিক সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধ রোহিঙ্গাদের সহযোগীতা করলে তাদের অনুসরণ করে অনুপ্রবেশ দিন দিন বাড়তে পারে।