উখিয়ার মাধ্যমিক ও দাখিল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রকাশিত এস.এস.সি ও দাখিল পরীক্ষায় হতাশাব্যঞ্জক ফলাফল নিয়ে অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা উদ্বিগ্ন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাব সহ বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপকরণ ও সরঞ্জামাদি থাকলেও তা ব্যবহার না থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ১৪টি মাধ্যমিক ও ১২টি দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্টানে নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত ছাত্রছাত্রী থাকলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষ কোন শিক্ষক নেই। আবার বিজ্ঞানের শিক্ষক থাকলেও অংক বিষয়ে অজ্ঞতার কারণে বিজ্ঞান ভিত্তিক পড়ালেখার মান দিন দিন অবনতি হচ্ছে। রাজাপালং বায়তুশ শরফ বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মাস্টার আবুল কালাম জানান, তাদের মাদ্রাসায় বিজ্ঞান ভিত্তিক উপকরণ থাকলেও মাদ্রাসা সুপার তা ব্যবহার করতে না দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক সুকলাল দাশ জানান, তারা ইউনিসেফ প্রদত্ত কিছু বিজ্ঞানের উপকরণ থাকলেও তা যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। তবে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক নূর হোসেন জানান, তাদের স্কুলে প্রায় ৩৫ জন বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাদের আন্তরিকতার সহিত হাতে কলমে পাঠদান করার ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে বিজ্ঞান বিষয়ে শতভাগ পাস করে আসছিল। তিনি জানান, এইচ.এস.সি ১ম বর্ষে গিয়ে এসব বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা বিষয় পরিবর্তন করার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার আবুল হোছাইন সিরাজী জানান, তার স্কুলে বিজ্ঞানের শিক্ষক অবসর নিয়ে চলে যাওয়ার কারণে বিজ্ঞানের শিক্ষক শূণ্যতা পূরণে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ের উপর পারদর্শী শিক্ষক না থাকার কারণে উপজেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখার মান দিন দিন অবনতি হচ্ছে। উখিয়া কলেজের প্রভাষক তহিদুল আলম জানান, তাদের কলেজে ৪/৫ জন বিজ্ঞানের প্রভাষক রয়েছে। অথচ ছাত্রছাত্রী নাই। তিনি বলেন, মাধ্যমিক থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের উপর পড়ালেখায় পারদর্শী ও মেধাবী ছাত্রছাত্রী উঠে না আসলে কলেজে ছাত্র সংকট দেখা দিবে। এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, তিনি এ উপজেলায় যোগদান করার পরপরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখার গুনগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতে বিজ্ঞান ভিত্তিক ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখার মান এ উপজেলায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তা থেকে উত্তরণ পেতে হলে শিক্ষকদের আরো আন্তরিক হতে হবে।