নিউজ ডেস্ক::
উখিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অজ্ঞাত একাধিক ইসলামিক নামধারী সংস্থা বা ব্যক্তির অর্থায়নে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা নিমার্ণ, ঘরবাড়িতে নলকূপ ও ল্যাট্রিন স্থাপন সহ নানা মন ভূলানো কাজ চালানো হলেও সংশ্লিষ্টদের মাথা ব্যথা নেই। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী অনগ্রসর পল্লীর সাধারণ লোকজনের মনভুলিয়ে নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে অজ্ঞাত এসব ইসলামী দাতা ও ব্যক্তির নামে উখিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার জঙ্গিবীজ বপন করার অভিযোগ উঠেছে। বিপুল পরিমাণে ব্যয় বরাদ্ধের অর্থের উৎস ও উদ্দেশ্য বরাবরই অজ্ঞাত থেকে যাওয়ায় রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।
উখিয়ার প্রত্যন্ত এলাকার বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশ চোয়াংখালী পল্লী। এখানে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিমার্ণ করে দেওয়া হয়েছে আধূনিক স্থাপত্য শৈলির পাকা মসজিদ। মিয়ানমার সীমান্ত নাফনদী সংলগ্ন পালংখালী ইউনিয়নের রাহমতের বিল গ্রাম। এখানেও একই ডিজাইনের পাকা মসজিদ, ল্যাট্রিন, সাবমারচিবল পাম্প। এ স্থান থেকে মিয়ানমারের দূরত্ব প্রায় কোয়ার্টার কিলোমিটার। একই ইউনিয়নের পাহাড়ীয় জঙ্গলাকীর্ণ কোণাপাড়া। এখানেও একই ধরনের স্থাপনা। এভাবে উখিয়ার সীমান্তবর্তী ফারির বিল, নলবনিয়া, ধামনখালী, বালুখালী, কুতুপালং, ধৈল্যাঘোনা, লম্বাঘোনা, করইবনিয়া, দরগাহবিল, ডেইলপাড়া, নতুন ফরেষ্ট অফিস এলাকা, হাজিরপাড়া, দোছরী, হরিণমারা, ভালুকিয়ার আমতলী, পাতাবাড়ী, বড়বিল, পাগলির বিল, নিদানিয়া, ইনানী, ইমামের ডেইল, চেপটখালীসহ বিভিন্ন অনগ্রসর অজপাড়া গাঁয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পাকা মসজিদ নিমার্ণ করে দিয়েছে অজ্ঞাত কথিত ইসলামী নামধারী একাধিক সংস্থা। মসজিদ নিমার্ণের পাশাপাশি অনগ্রসর এলাকার দরিদ্র লোকজনের মাঝে স্যালোটিউবওয়েল, ল্যাট্রিন, মসজিদ সংলগ্ন ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানায় সাবমারচিবল পাম্প স্থাপন সহ নগদ টাকা, চাল, ঢাল, তেল, রমজানে ইফতার সামগ্রী, কোরবানীর গরুর মাংস বিতরণ ইত্যাদি কাজ করে চলছে কতিপয় ব্যক্তি বা সংস্থার অজ্ঞাত অর্থে।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, ইতিমধ্যে নির্মিত অর্ধশতাধিক পাকা ও সেমিপাকা মসজিদের অধিকাংশ ইমাম মোয়াজ্জিন ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মিয়ানমারের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিক। এসব ফোরকানিয়ায় কোমলমতি শিশুদের প্রচলিত আরবী ও বাংলাভাষার স্থলে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা উর্দুতে পড়ানো হয় এবং শুক্রবার জুমার নামাজে উর্দুতে খোতবা দেওয়া হয় বলে জানাগেছে। সম্প্রতি করইবনিয়া অজপাড়া গ্রামে অজ্ঞাত অর্থে প্রতিষ্ঠিত একটি মসজিদ ও তৎসলগ্ন মাদ্রাসার ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় শীর্ষ আলেমদের নিয়ে সরেজমিনে এলাকাবাসীর বিপক্ষে যাওয়ায় মসজিদ ও মাদ্রাসার কর্তৃত্ব সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এতেও বির্তক থামেনি। এসব মোয়াজ্জিন ইমাম ও শিক্ষকদের বেতনভাতা ও আনুসাঙ্গিক ব্যয়ভার অজ্ঞাত অর্থে বহন করে থাকে বলে জানা গেছে। উখিয়া সদরের প্রায় ২ কিলোমিটার ভিতরে লম্বাঘোনা নামক এলাকায় বনবিভাগের রিজার্ভ ভূমিতে সম্প্রতি গড়ে তোলা হয়েছে সেমিপাকা মসজিদ। এটির কয়েকশ’ গজ দূরে রয়েছে আরেকটি পাকা মসজিদ। স্থানীয় জনৈক আব্দুর রহিম ওই মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেও কারা এটি করে দিয়েছে বা টাকার উৎস্য সম্পর্কে সে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এ ধরনের অনেক মসজিদ উখিয়ার সর্বত্র জড়িয়ে পড়ে। উখিয়া কলেজ সংলগ্ন স্থানীয়দের গড়া অনেকদিনের গড়া মসজিদ কাম নূরানী মাদ্রাসার একটু দক্ষিণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংলগ্ন ওই কথিত সংস্থা নিমার্ণ করে দিয়েছে আরও একটি মসজিদ। স্থানীয় লোকজন জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উখিয়ার মডেল কেয়ারটেকার জাফর আলমের সহযোগীতায় এটি করা হয়েছে। মূলত খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই জাফর আলমের গোপন তত্ত্বাবধানে উখিয়া সদরের আশপাশ এলাকায় মসজিদ, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা স্থানীয় দরিদ্র লোকজনের মাঝে স্যালোটিউবওয়েল পাম্প, ল্যাট্রিন নিমার্ণ করে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কথিত সাহায্য সংস্থা বা দাতারা বিনামূল্যে করে দেওয়ার কথা থাকলেও ওই কেয়ারটেকার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নানা খরচের বাহানা দিয়ে প্রতিটি স্যালো থেকে ২ হাজার, সাবমারচিবল পাম্প থেকে ৮ হাজার মসজিদ ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৮/২০ হাজার টাকা করে আদায় করে দাতা ও সুবিধাভোগীদের সাথে প্রতারণা করে আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে উক্ত জাফর আলম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে গেলেও মাঝে মধ্যে ফয়েজুল্লাহ ফাউন্ডেশনের আর্থিক অনুদানে করার কথা স্বীকার করে। তবে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া আরএসও জঙ্গি ছালাহুল ইসলামের সহযোগীতার কথা অস্বীকার করে। তিনি ছাড়াও উখিয়ার মোহাম্মদ আলী ভিটা এলাকার রোহিঙ্গা জঙ্গি মৌলভী নূর মোহাম্মদ উক্ত পুকুরিয়ার খাইরুল আলম মিস্ত্রি, বালুখালীর মৌলভী কাদের, পালংখালী রহমতের বিলের মৌলভী নুরুল আমিন, টেকনাফের শামলাপুরের মৌলভী আয়াছ, রতœাপালং রুহুল্লার ডেবার মৌলভী সিরাজ, দরগাহবিলের রুস্তম আলীসহ অনেকেই ইসলামী নামধারী জঙ্গি অর্থায়নে এসব স্থাপনা নিমার্ণ করে সুবিধা ভোগ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রের বরাতে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একাধিক দেশের কতিপয় জঙ্গি মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার মধ্যে তুর্কি দিয়ানাত ফাউন্ডেশন আব্দুল্লাহ আল নূরী চ্যারিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামীক চ্যারিটেবল অর্গনাইজেশন, আব্দুল্লাহ আল মোতাওয়া চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, মোয়াল্লিম আল জামিল সারজা চ্যারিটি হাউস, আব্দুর রহমান মোহাম্মদ আত তা মিমি, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফারেসি সহ আরও কয়েকটি দাতা ও চ্যারিটি সংস্থার অর্থায়নে কক্সবাজারে অবস্থানকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত আরএসও’র শীর্ষ জঙ্গি হাফেজ ছালাহুল ইসলাম চট্টগ্রামের ফাইজুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সাধারণ অসহায় লোকজনের সস্তায় সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে এসব স্থাপনা নিমার্ণ কাজ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে গত ৩০ জুলাই শনিবার টেকনাফের সমুদ্র উপকূলবর্তী শামলাপুর থেকে দেশিবিদেশী জঙ্গিদের গোপন বৈঠক চলাকালে ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে টেকনাফ বিজিবি অভিযান চালিয়ে আরএসও শীর্ষ নেতা ও জঙ্গি অর্থায়নকারী হাফেজ ছালাহুল ইসলাম, সৌদি নাগরিক আবু ছালে আল আহমেদ গাম্মী, টেকনাফের শামলাপুর গ্রামের হাফেজ ছৈয়দ করিম, টাঙ্গাইল জেলার বাসাইলের হাবাবীল পাড়ার মৌলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে আটক করে। এেেদর আটকের খবরে স্থানীয় ভাবে জঙ্গি অর্থায়নে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা, নলকূপ, পানির পাম্প ও ল্যাট্রিন নিমার্ণকারী সহযোগী উল্লেখিতরা ছাড়াও আরও অনেকের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় লম্বাঘোনা গ্রামের মাস্টার বদিউর রহমান সহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জঙ্গিরা এখানকার অজপাড়া গায়ের সহজসরল অনগ্রসর লোকজনের মাঝে অজ্ঞাত অর্থে উল্লেখিত স্থাপনা নিমার্ণ করে দিয়ে সহানুভূতি আদায় করছে। এমন একটি সময় আসবে যখন জঙ্গিদের গডফাদাররা আস্মমিক ভাবে গোলাবারুদ এনে মজুদ করবে তখন ওইসব লোকদের আর না বলার সুযোগ থাকবে না।
উখিয়া উপজেলা জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীসহ আরো অনেকের আশংকা যেভাবে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী পাহাড়ীও অনগ্রসর এলাকায় জঙ্গি অর্থায়নের বীজ বপন করা হচ্ছে তা একদিন বিষবৃক্ষে রূপান্তরিত হবে তখন আর কিছুই করার থাকবে না। তাছাড়া যেসব এলাকায় এসব স্থাপনা নিমার্ণ করা হচ্ছে সেগুলোর পাশাপাশি অদূরে স্থানীয়দের স্থাপনা থাকলেও অপ্রয়োজনীয় নতুন স্থাপনা করে গ্রামবাসীদের মাঝে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। তাদের দাবী সময় থাকতে এসব অর্থের উৎস্য, কারা এসবের সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের খুঁেজ বের করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসাবে তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দিনরাত কাজ করছে। যাতে এখানে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার