কক্সবাজারে তৈরি হচ্ছে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার
উন্নত বিশ্বের আদলে কক্সবাজারের উখিয়া, হলদিয়া পালং এর পাগলির বিল নামক স্থানে হচ্ছে দেশের প্রথম উন্মুক্ত কারাগার। জেলা কারাগারের ওপর চাপ কমাতে সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও জনপ্রতিনিধি।
জেলা কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে নির্মিতব্য এ কারাগার ১৬০ একর জমির ওপর থাকবে একাধিক বহুতল ভবন। প্রথম ধাপে কাঁটাতারের ভেড়া দিয়ে চলছে সীমানা পরিধি চিহ্নিত করণের কাজ। আগামী তিন বছের মধ্যে উন্মুক্ত কারাগারের পরিপূর্ণ কাজ সমাপ্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কারাগারে থাকবে দৃষ্টিনন্দন ফুলে-ফলে সজ্জিত বাগান, কুঠির শিল্প, ক্ষেত খামার, খেলাধূলা, পড়ালেখাসহ জীবনঘনিষ্ঠ নানা কার্যক্রম। বন্দীরা থাকবে না শৃঙ্খলে। প্রয়োজনে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে পরিবারপরিজনের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করে আবার ফিরতে পারবেন কারাগারে।
উম্মুক্ত কারাগারে ক্ষেত খামার ও কুঠির শিল্পে কাজ করার ওপর বন্দীরা পাবেন পারিশ্রমিক। যা দিয়ে বন্দীরা পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ মেটাত সক্ষম হবেন।
এমনটাই জানালেন কক্সবাজারের জেল সুপার মোহাম্মদ শাহ আলম খাঁন।
এ দিকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে ৮৫০ জনের ধারণ ক্ষমতা। সেখানে বর্তমানে হাজতি কয়েদীর সংখ্যা হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। এতে রোহিঙ্গা রয়েছে ১ হাজার ১৬৬ জন। আর মায়ানমারের নাগরিক আছে ১৩৪ জন।
কারারক্ষী ১০১ জন, সহকারী এসিস্ট্যান্ট প্রধান কারারক্ষী ১০ জন, প্রধান কারারক্ষী ৩, সুবেদার ২, ডেপুটি জেলার একজন, নারী কারারক্ষী ১০, ডাক্তার ২, ফার্মাসিস্ট এক ও জেল সুপার আছেন একজন।
জেলার মো. মোস্তফা কামাল জানান, ধারণ ক্ষমতার পাঁচ গুণের বেশি হাজতি কয়েদিদের সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। তাই উম্মুক্ত কারাগার নির্মিত হলে চাপ কমবে বহুলাংশে। শুধু তাই নয়, বন্দীরা পাবে কাঙ্খিত সেবা।
ডেপুটি জেলার মনির হোসেন বলেন, জেলা কারগারে সেবার মান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো। তারপরও উম্মুক্ত কারাগার হবে বন্দীদের জন্য অন্যতম সংশোধানাগার।
সম্প্রতি কারগার থেকে ৫ বছর অস্ত্র মামলায় সাজা ভোগের পর বেরিয়ে আসা মহেশখালীর মিজানুর রহমান বলেন, প্রথমে দুই বছর অনেক কষ্ট পেয়েছি। খাবারমান থাকার জায়গার সাংঘাতিক সমস্যা ছিল। এরপর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিশেষ করে নতুন ভবন হওয়ার পর থাকার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। খাবার তালিকায় আগে ছিল সকালে গুড়-রুটি আর এখন, ডাল-রুটি বা রুটি-হলুয়া দেওয়া হচ্ছে।
২৫ আগস্ট টেকনাফের নূর হোসেন একটি হত্যা মামলা থেকে ৬ মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, জেলে আমি আগেও ছিলাম। এখন জেলে থেকে হাজতি কয়েদীরা যে সুবিধা ভোগ করছেন, তা আগে কখনো পায়নি। এখন সপ্তাহে একদিন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রতিমিনিট এক টাকায় সর্বোচ্চ ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তাছাড়া চিকিৎসা সেবা অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে উন্নত।
কারা কর্তৃপক্ষ অনেক মানবিক আচরণ করেন। ফলে সব মিলিয়ে জেলখানার পরিবেশ পরিস্থিতি মোটামুটি ভালো। এর বাইরে কারা পরিদর্শকরা মাঝে-মধ্যে কারাগারের ভেতরকার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন বন্দীদের।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বললেন, উম্মুক্ত কারাগার তৈরি হলে বন্দীরা পাবেন আরও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের ছোঁয়া। আত্মা শুদ্ধিকরণের সুযোগ।
কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, কক্সবাজারবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হচ্ছে এই উম্মুক্ত কারাগার। এখানে সব বয়সী মানুষ বা কারা বন্দী উম্মুক্ত কারাগারে ঠাই পাবেন।তবে বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও সাজা ভোগের শেষপ্রান্তে আসা বন্দীরা অগ্রাধিকার পাবেন।