কক্সবাজারে কর্মরত এনজিওগুলোর রোহিঙ্গা প্রীতির কারণে অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তিবাসীরা উৎসাহিত হচ্ছে। এ কারণে সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশংকা করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতাকর্মীরা। গত বুধবার ৩ মে উখিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সেবামূলক কর্মকান্ড নিয়ে এনজিওদের কড়া সমালোচনা করেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। এ সময় ইউএনও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য এনজিও কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।
১৯৯১ সালে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করলে সরকারের নির্দেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিকভাবে থাকা, খাওয়া সহ মানবিক সহায়তা প্রদান করেন। পরে সরকার মিয়ানমারের সাথে দফায় দফায় কুটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও, ২০০৪ সালে হঠাৎ করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ১১ হাজার ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা আটকা পড়ে যায়। বর্তমানে নিবন্ধিত এসব রোহিঙ্গাদের সরকার ও ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে খাদ্য ও মানবিক সেবা দিয়ে আসছে।
এদিকে ২০১০ সালে সীমান্তের নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা স্বপরিবারে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের পার্শ্বে বনভূমির জায়গা দখল করে, সেখানে ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নুল বারীর নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও বনকর্মী যৌথ অভিযান চালিয়ে অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হয়। পরে জেলা প্রশাসক এসব রোহিঙ্গাদের অবৈধ ঘোষণা করে তাদের কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা থেকে বিরত থাকার জন্য স্থানীয় এনজিওগুলোর প্রতি কড়া নির্দেশ প্রদান করেন। তথাপিও জেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওইসব রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের অভিযোগে জেলা প্রশাসন, মুসলিম এইড, এমএসএফ-হল্যান্ড ও এসিএফ সহ ৩টি এনজিও সংস্থার ক্যাম্পভিত্তিক সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেন।
সম্প্রতি কুতুপালং অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তি ঘুরে জানা যায়, বেশ কিছু এনজিও সংস্থা অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তিতে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু এনজিও সংস্থার লোকজন ওই সব রেহিঙ্গাদের ত্রাণ, সামগ্রী থেকে শুরু করে নগদ অর্থ বিতরণের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার ৩ মে সকাল ১০টায় এনজিও সংস্থা মুক্তি, এমএসএফ-হল্যান্ড, এসিএফ ও শেড কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে এনজিও কর্মীরা অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তিতে সেবামূলক কার্যক্রমের উপর গুরুত্বারূপ রেখে বক্তব্য রাখেন। এ সময় সেমিনারে উপস্থিত উখিয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম জানান, অবৈধ রোহিঙ্গাদের সেবার নামে উৎসাহিত করা হলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, এসব রোহিঙ্গাদের খুন, ডাকাতি, ইয়াবা সহ মাদক ও মানবপাচার, ধর্ষণ, রাহাজানি প্রভৃতি অনৈতিক ঘটনা নিয়ে এখানকার সর্বস্তরের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেখানে ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের নতুন করে সেবা দেওয়া মানে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহিত করার শামিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির কোন বৈধতা নাই। সেহেতু বস্তিতে কাজ করতে হলে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে।